নাবালিকার অস্বাভাবিক মৃ.ত্যুতে রণ.ক্ষেত্র কালিয়াগঞ্জ! বিজেপির ‘পরিকল্পিত’ চক্রা.ন্ত, তোপ কুণালের

কালিয়াগঞ্জকাণ্ডে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ জানান, যে কোনও মৃ.ত্যুই অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু কী করে তাঁর মৃ.ত্যু হল সেই সংক্রান্ত সমস্ত তদন্ত ও পরীক্ষানিরীক্ষা আগে সম্পূর্ণ হওয়া উচিত। কিন্তু তার আগে বিজেপি নেতারা 'পরিকল্পিতভাবে' প্রথম থেকেই অ.শান্তি সৃষ্টি করতে চাইছে।

নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ। ঘটনাকে কেন্দ্র করে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি কালিয়াগঞ্জে (Kaliaganj)। শনিবার পবিত্র ইদের দিন সকাল থেকেই দফায় দফায় চলছে বিক্ষোভ-অশান্তি। ইতিমধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে বিশাল পুলিশ বাহিনী, র‍্যাফ ও কমব্যাট ফোর্স। ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার। কালিয়াগঞ্জের সাহেবঘাটায় (Sahebghata) এক নাবালিকার অস্বাভাবিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়। প্রতিবাদে রাস্তা অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা।  সময় যত গড়াতে থাকে তত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে গেলে তাদের উপর চড়াও হয় বিক্ষোভকারীরা। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এলেও শনিবার সকাল থেকে ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কালিয়াগঞ্জ। তবে শনিবার এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, একজন বাচ্চার মৃত্যু হয়েছে। যে কোনও মৃত্যুই অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু কী করে তাঁর মৃত্যু হল সেই সংক্রান্ত সমস্ত তদন্ত ও পরীক্ষানিরীক্ষা আগে সম্পূর্ণ হওয়া উচিত। কিন্তু তার আগে বিজেপি নেতারা ‘পরিকল্পিতভাবে’ প্রথম থেকেই অশান্তি সৃষ্টি করতে চাইছে। তবে এদিন কুণাল বারবার বলেন, মৃত্যু দুঃখের। কোনও অবস্থাতেই তা কাঙ্খিত নয়। এরপরই নিজেপর উদ্দেশে তোপ দেগে কুণাল মনে করিয়ে দেন, এই প্রথম নয় এর আগেও অতীতে একাধিক মৃত্যুর ঘটনায় অশান্তির চেষ্টা করেছে বিজেপি। পরে তদন্তে উঠে এসেছে সেখানে রাজনৈতিক নয়, ব্যক্তিস্বার্থই আসল কারণ। তবে এদিন এখানেই থেমে না থেকে কুণাল বিজেপিকে মনে করিয়ে দেন, উত্তর প্রদেশের হাথরাস, উন্নাও, প্রয়াগরাজ থেকে শুরু করে সারা দেশে মহিলাদের উপর লাগাতার অত্যাচারের কথা। এরপর তিনি বলেন, কেন্দ্রের রিপোর্ট অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গ ভারতের মধ্যে মহিলাদের নিরাপত্তার বিষয়ে নিরাপদতম।

এদিকে দোষীদের শাস্তির দাবিতে সাহেবঘাটা এলাকার রাজবংশী সমাজের গাবুর সংঘের সমর্থকরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, শুক্রবার এই এলাকার রাজবংশী সমাজের এক নাবালিকা মেয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। পরেরদিন সকালে এলাকার একটি পুকুরপাড় থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, শুক্রবার সকালে বাড়ির অদূরে একটি পুকুরের ধারে কিশোরীর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বাড়ি থেকে কাজের জন্য বেরিয়েছিল। তারপর আর ফেরেনি। স্থানীয় বাসিন্দারাই পুকুরের ধারে ওই ছাত্রীকে পড়ে থাকতে দেখেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ছাত্রীর শরীর বিবস্ত্র ছিল। ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারের। ঘটনাকে ঘিরেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা।

শনিবার মৃত নাবালিকার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumder), রায়গঞ্জের সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী (Debashree Chiudhury) সহ বিজেপি নেতৃত্ব। পরে রায়গঞ্জে এসপি অফিসের সামনে ধর্নায় বসেন তাঁরা। অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে রাস্তায় আগুন জ্বেলে চলে বিক্ষোভ। পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। খবর পেয়ে কালিয়াগঞ্জ থানার পুলিশ সাহেবঘাটায় এসে অশান্ত জনতাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেও লাভের লাভ হয়নি। উল্টে পুলিশকে লক্ষ্য করেই ইট ছোঁড়ার অভিযোগ ওঠে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে প্রথমে উত্তেজিত জনতাকে লাঠ চার্জ ও পরে কাঁদনে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। ইতিমধ্যে ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার (Arrest) করা হয়েছে।

তবে ইতিমধ্যেই কালিয়াগঞ্জকাণ্ডে রাজ্য পুলিশের ডিজির হস্তক্ষেপ চেয়েছে জাতীয় মহিলা কমিশন (National Commission For Women)। সংশ্লিষ্ট ধারায় দ্রুত এফআইআর দায়ের করতে বলে রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্যকে চিঠি দেওয়া হয়েছে জাতীয় মহিলা কমিশনের তরফে। পাশাপাশি আগামী ৩ দিনের মধ্যে কালিয়াগঞ্জকাণ্ডে কী ব্যবস্থা, তা বিস্তারিত জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর এদিন এই প্রসঙ্গে কুণাল ঘোষ বলেন, উত্তর প্রদেশের মতো জায়গায় জখন লাগাতার এমন ঘটনা ঘটে তখন এই কমিশন কোথায় থাকে? এদের কাজ কী শুধুই বিজেপিকে প্রোটেকশন দেওয়া? আর পশ্চিমবঙ্গ যেখানে মহিলা ও শিশুদের জন্য প্রোটেক্টেড, সেখানে যদি কোনও বিক্ষপ্ত অশান্তি ঘটে তার জন্য রাজ্য সরকার এবং প্রশাসন সদা সচেষ্ট। তার আগেই বিজেপি এসব করে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করছে। এরপরই কুণালের তোপ এর চেয়ে ভালো বিজেপি একটা শ্মশান ভিত্তিক মণ্ডল খুলুক। যেখানে বসে এসমস্ত কার্যকলাপ জারি রাখতে সুবিধা হবে।