দফায় দফায় বৈঠকের পর ভারত-চিন সীমান্ত পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও দুই দেশের মধ্যে চাপা উত্তেজনা আজও রয়েছে। এই অবস্থায় পূর্ব লাদাখের বিভিন্ন এলাকা থেকে সেনা সরানো নিয়ে সোমবার বৈঠকে বসেছিলেন ভারত ও চিনের সেনা কর্তারা। গালোয়ানে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মুখোমুখি সংঘর্ষের পর দুই বাহিনীর মধ্যে এটি ১৯তম বৈঠক।

সরকারি সূত্র অনুযায়ী, বৈঠকে মূলত ডেপসাং ও ডেমচক এলাকা নিয়ে আলোচনা হয়। ২০২০ সালের সংঘর্ষের পর গত তিন বছরে প্যাংগং, চুমহার, গোগরা হট স্প্রিংয়ের মতো কয়েকটি এলাকা নিয়ে দুই পক্ষে একধরনের সমঝোতা হলেও ডেপসাং ও ডেমচক নিয়ে কোনো ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি। এ দুই জায়গা নিয়ে ভারত ও চিন গত ছয়টি বৈঠকে নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থেকেছে। গালওয়ান সংঘর্ষের পর দেখা গিয়েছিল, চিনা ফৌজ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার (এলএসি) স্থিতাবস্থা অগ্রাহ্য করে ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে পড়েছে। ভারতের পক্ষে সরকারিভাবে জমি হারানোর কথা স্বীকার করা না হলেও বিরোধীদের শঙ্কা, ওই সংঘর্ষ চিনা ফৌজের পক্ষে সহায়ক হয়েছিল। সেই থেকে ভারত বারবার সংঘর্ষ পূর্ববর্তী স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে দিতে চিনকে বলে আসছে। অর্থাৎ, ২০২০ সালের জুনের সংঘর্ষের আগে পূর্ব লাদাখে এলএসি যেমন ছিল, সেই অবস্থা মেনে চলতে চিনের প্রতি দাবি জানিয়ে আসছে। পাশাপাশি কূটনৈতিক স্তরে জানিয়ে দিচ্ছে, এলএসিতে স্থিতাবস্থা রক্ষিত না হলে সম্পর্ক কখনো স্বাভাবিক হবে না। গত তিন বছরে দুই দেশের সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৮টি বৈঠক হলেও বিবাদ ও বিতর্ক অমীমাংসিত রয়ে গেছে।

দুই দেশের সেনা কর্তাদের ১৯তম বৈঠক শুরুর আগের দিন রবিবার সরকারি ও সেনা সূত্রে জানানো হয়, গালওয়ান সংঘর্ষের পর পূর্ব লাদাখের চিন সীমান্তে অতিরিক্ত ৬৮ হাজার জওয়ানকে (প্রায় ৭ ডিভিশন) যুদ্ধবিমানে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভারতীয় বিমানবাহিনীতে বোঝাই করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ৯০টি ট্যাংক। প্রতিপক্ষকে মোকাবিলায় এলএসির বিভিন্ন অংশে সেনা ও এসব সমরাস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছে। সীমান্তের অন্য ধারে নতুন নির্মাণকাজ চালানো হচ্ছে কি না, সেই নজরদারির জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে সুখোই-৩০ ও জাগুয়ার যুদ্ধবিমান। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধের ব্যবস্থাও। আগামী ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হবে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন। সেখানে চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিন পিংয়ের আসার কথা। বহুরাষ্ট্রীয় বৈঠক ছাড়াও সম্মেলনের এক ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চিনা প্রেসিডেন্টের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার কথা। তার আগে সীমান্ত সমস্যার সুরাহার জন্য ১৯তম বৈঠকে অগ্রগতি হয় কি না, নজর আপাতত সেই দিকে।
