২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে ফের একবার মোদির তুরুপের তাস সেই হিন্দুত্ব। ৫ বছরের ব্যর্থতা ঢাকা দিতে দেশবাসীর চোখের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে রামের ব্যানার। অযোধ্যাকে সামনে রেখে ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা চলছে মুদ্রস্ফীতি, বেকারত্ব, নিরক্ষরতা, নিম্নগামী জিডিপি। ভোট বৈতরণী পার হতে অযোধ্যাকে হাতিয়ার করে নরেন্দ্র মোদি ওড়াতে চলেছেন ‘ধর্মের ফানুস’। আগামী ২২ জানুয়ারী অযোধ্যার রামমন্দিরে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করবেন প্রধানমন্ত্রী। তবে তার আগে শুরু হয়েছে চোখ ধাঁধানো আয়োজন। আগামিকাল শনিবার অযোধ্যায় পা রেখে ১৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের উদ্বোধন করতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদি। এই সবটাই হচ্ছে ‘রাম’কে সামনে রেখে(বলা ভালো, লোকসভা ভোটকে সামনে রেখে)।

জানা যাচ্ছে, রামমন্দির উপলক্ষ্যে অযোধ্যায় গড়ে তোলা হয়েছে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর। রামায়ণের স্রষ্টা মহর্ষি বাল্মীকির নামেই অযোধ্যা বিমানবন্দরের নাম রাখা হবে ‘মহর্ষি বাল্মীকি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট অযোধ্যাধাম’। শনিবার এই বিমানবন্দর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। উদ্বোধনের দিন থেকেই এই বিমানবন্দরে বিমান চলাচল শুরু হয়ে যাবে। এছাড়াও ঢেলে সাজানো হচ্ছে গোটা অযোধ্যা নগরী। পুরনো মন্দিরগুলো সংস্কারের পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে নতুন সড়কপথ। এতো গেল আয়োজন, এর পাশাপাশি ১৫৭০০ কোটি টাকার প্রকল্প ঘোষণা করা হবে শুধু অযোধ্যায়। তার মধ্যে রয়েছে রেলস্টেশন ও বিমানবন্দরের উন্নয়ন। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অযোধ্যায় বিশ্বমানের পরিকাঠামো গড়ে তোলার স্বপ্ন রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। তাই এই শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, সমস্ত সুযোগ সুবিধার উন্নয়ন করা দরকার। শহরের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতেও এই পদক্ষেপ প্রয়োজন।

মানুষের উন্নয়ন, জনমুখি কাজ যা সরকারের কর্তব্য তাকে পিছনের সারিরে ফেলে ধর্মের এমন দাপাদাপি দেখে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন তুলছে দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির পাশাপাশি শিক্ষিত সমাজ। যে দেশে সাম্প্রদায়িক বিভেদ ও নিম্নবর্ণ ও উচ্চ বর্ণের ভেদাভেদ চরম পর্যায়ে পৌছেছে। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সের মতো ক্ষেত্রে ক্রমশ তলানিতে গিয়ে ঠেকছে। সেখানে দেশের উন্নয়নকে পিছনের সারিতে ফেলে একটি সরকার কীভাবে ধর্মীয় বিশ্বাসের রাজনীতিকরণ করছে? সে প্রশ্ন উঠছে। মানুষের মূল সমস্যাকে পিছনের সারিতে ফেলে সরকারের তরফে এভাবে ধর্মের জিগির তোলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ বিরোধীরাও। তাঁদের বক্তব্য, এই ধরণের ধর্মে বিশ্বাস যার যার ব্যক্তিগত বিষয়। আমরা তা সম্মান করি। প্রত্যেক ধর্মের মানুষের নিজেদের ইচ্ছেমতো ধর্মীয় আচরণ পালন করার অধিকার রয়েছে দেশে। তবে সংবিধান অনুযায়ী এ দেশ কোনও নির্দিষ্ট ধর্মকে চিহ্নিত করে না। রিলিজিয়াস স্টেটের মর্যাদা পায় না ভারত। কিন্তু, এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে রাম মন্দিরের উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হচ্ছে। জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে সোজাসাপটা রাজনীতি করা হচ্ছে। যা ভারতের সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
