ফের মানবিক পুলিশ (Police)! হ্যাঁ, সমাজকে রক্ষা করার দায়িত্ব যাদের হাতে তাঁরাই হয়ে উঠলেন রক্ষাকর্তা। বাড়ির দরজা ভেঙে অসুস্থ এক বৃদ্ধার (Old Women) প্রাণ বাঁচালেন তাঁরা। তবে অবশ্যই এই খবর সমাজের পক্ষে অত্যন্ত মঙ্গলকর। কিন্তু আসল খবর বাড়ি সবদিক থেকে তালাবন্ধ থাকার পরও কীভাবে বৃদ্ধাকে উদ্ধার করলেন পুলিশ! আর সে খবর শুনলে আপনিও অবাক হতে বাধ্য। শুক্রবার সকালে এমনি এক ঘটনার সাক্ষী থাকল শহর কলকাতা (Kolkata)। সল্টলেকের (Salt Lake) বিএল ব্লকের ৬৮ নম্বর বাড়ির ঘটনা। স্থানীয় সূত্রে খবর, সল্টলেকের ওই বাড়িতে স্বামী মারা যাওয়ার পর একাই থাকতেন বৃদ্ধা মনিকা দাশগুপ্ত (Manika Dasgupta)। বাড়িতে আসা যাওয়ার লোকের মধ্যে শুধুমাত্র একজন পরিচারিকা ছিলেন। আর সেই পরিচারিকার পদক্ষেপেই এদিন প্রাণে বাঁচেন বৃদ্ধা। তবে এদিন পুলিশের এমন ভুমিকাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন রাজ্যবাসী।

কী ঘটেছিল?

অনান্য দিনের মতো বৃহস্পতিবার রাতেও নিজের বাড়ির দোতলার ঘরে ঘুমোতে যান বৃদ্ধা। শুক্রবার ভোরের দিকে খাটের পাশে টেবিলের উপর রাখা জলের বোতল নিতে গেলে আচমকা খাট থেকে উল্টে মেঝেতে পড়ে যান তিনি। ঘটনার জেরে তাঁর কোমরে মারাত্মক চোট লাগে বলে খবর। আঘাত এতটাই গুরুতর যে বৃদ্ধা নিজে উঠে দাঁড়াতেও পারছিলেন না বলে খবর। শুক্রবার সকালে পরিচারিকা শিখা নন্দী বৃদ্ধার বাড়িতে কাজ করতে এসে দেখেন ঘর ভিতর থেকে বন্ধ। বারবার ডাকাডাকি করলেও তাঁর সাড়া পাননি বলে অভিযোগ। এরপরই পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে স্থানীয় ও পুলিশকে খবর দেন শিখা। এরপর বিধাননগর পূর্ব থানার পুলিশ এসে ঘটনাস্থলে পৌঁছন। তবে স্বামী মারা যাওয়ার পর ওই বাড়িতে একাই থাকতেন তিনি। শুক্রবার সকালে বাড়িতে কাজ করতে গিয়ে একাধিকবার দরজার বেল বাজালেও বৃদ্ধার সাড়া পাননি তিনি। বারবার ডাকাডাকি করার পরে সাড়া না মিললে সন্দেহ হয় পরিচারিকার। এরপরই এক মুহূর্ত দেরি না করে স্থানীয়দের পাশাপাশি বিধাননগর পূর্ব থানার পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রথমে বাড়ির গেট খুলে বৃদ্ধাকে ডাকাডাকি করলেও কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে জানা যায় বৃদ্ধা দোতলায় রয়েছেন।
কিন্তু ঘর ভিতর থেকে বন্ধ থাকায় ভিতরে ঢুকতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হয় পুলিশ কর্মীদের। এরপরই উপায়ন্তর না পেয়ে বাড়ির লাগোয়া পাঁচিল টপকে কার্নিশ বেয়ে একেবারে দোতলায় উঠে যায় পুলিশ। তবে বাইরে থেকে দরজা, জানলা বন্ধ থাকার কারণে বারবার ডাকাডাকি করেও সাড়া মেলেনি বৃদ্ধার। কিন্তু অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পর শেষমেশ ঘরের মধ্যে থেকে আওয়াজ পাওয়া যায় বৃদ্ধার। কিন্তু তাঁর শারিরিক অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে উঠে এসে দরজা বা জানালা খোলার ক্ষমতা ছিল না তাঁর। তিনি পড়ে গিয়ে কোমরে চোট পান। তবে প্রথমে এদিন পুলিশ বৃদ্ধা যে ঘরে রয়েছেন সেই ঘরের দরজা ভাঙতে ব্যর্থ হয় পুলিশ। পরে ব্যালকনিতে উঠে পুলিশ পিছনের রান্নাঘরের দরজা ভেঙ্গে অসুস্থ অবস্থায় বৃদ্ধাকে উদ্ধার করেন। এদিন পুলিশ ঘরে ধুকে দেখতে পান বৃদ্ধা চেষ্টা করলেও তিনি একেবারেই উঠে দাঁড়াতে পারছেন না। অন্যদিকে, তিনি হাসপাতালেও যেতে রাজি নন। শেষমেশ পুলিশ চিকিৎসক ডেকে বাড়িতেই বৃদ্ধার চিকিৎসা করান। তবে পুলিশ জানিয়েছে যদি পরবর্তীকালে বৃদ্ধার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়, সেক্ষেত্রে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হবে। নাহলে বাড়িতে রেখেই তাঁর চিকিৎসা চলবে।

পরিচারিকা শিখা নন্দী জানান, এদিন বাড়িতে এসে বারবার ফোন করলে বা দরজার বেল বাজালেও কোনও সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। এরপরই তিনি বাধ্য হয়ে পুলিশ ও স্থানীয়দের ফোন করে পুরো বিষয়টি জানান। অন্যদিকে, বৃদ্ধা মনিকা দাশগুপ্ত জানান, বৃহস্পতিবার রাতে তিনি খাটে শুয়েছিলেন। আচমকা এদিন ভোরে জল খেতে গিয়েই খাট থেকে পড়ে গিয়ে কোমরে চোট পান তিনি। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে পড়ে যে বৃদ্ধা নিজে নিজে দাঁড়াতেও পারছিলেন না। যদিও শুক্রবার সকালে পুলিশের ডাকাডাকির শব্দ শুনতে পেলেও তাঁর শারীরিক অবস্থার কারণে তিনি দরজা খুলতে পারেননি। কিন্তু পুলিশের এই মহান উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাতে ভোলেননি বৃদ্ধা। পাশাপাশি বাড়ির পরিচারিকারিকা যথেষ্ট সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।