আগামী জুন মাস পুরো বিশ্ব জুড়ে প্রাইড মাস উদযাপন করা হবে। রূপান্তরকামী ও কুইয়ার মানুষদের অধিকার, সম্মান ও লড়াইয়ের কথা এই পুরো মাস জুড়ে পৃথিবীর নানান প্রান্তে শোনা যাবে। সিভিলিয়ান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন বিগত বেশ কয়েক বছর প্রাইড মাসে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আনান্য মৌলিক অধিকার গুলি নিয়ে সচেতনতা শিবির করছে। এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিগত ১২ বছর ধরে মূলত শিশু শিক্ষা, লিঙ্গ সাম্যের অধিকার, প্রতিবন্ধী মানুষদের অধিকার এবং গ্রামীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করে চলেছে।
দীর্ঘ ১২ বছর এই সংস্থাটি রূপান্তরকামী মানুষদের সাধারণ স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছেন। তাদের প্রচেষ্টায় ২০১৮ সালে একটি তথ্যচিত্র করা হয় ট্রান্সজেন্ডার মানুষদের স্বাস্থ্য পরিষেবা কতটা বাকি জনগোষ্টীর মতো সেটা বোঝার জন্য। কলকাতা শহরে নানান সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সেই গবেষনায় দেখা গেছে ২২ ধরনের বৈষম্যের শিকার তারা। তার কারণ হিসেবে দেখা গিয়েছে, ডাক্তারদের ট্রেনিং, উপযুক্ত পরিকাঠামো ও স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় ট্রান্সজেন্ডার মানুষদের কর্মক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা। এই সমস্যাগুলিকে সামনে রেখে এই বছর ৪০ জন ট্রান্সজেন্ডার ও নন-বাইনারি মানুষদের নিয়ে একটি বিনামূল্যে প্যারামেডিক্যাল ট্রেনিং শুরু করা হচ্ছে। ৯ মাসের এই কোর্স শেষে বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলিতে তাদের চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।
এই কোর্সের গুরুত্ব বিষয়ে তিন্নি কর্মকার (রূপান্তরকামী মহিলা) জানিয়েছেন, “কোভিডের সময় আমাদের কমিউনিটির মানুষ নানাপ্রকার অসুবিধেয় পড়েছেন। কিন্তু স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি আমাদের সহয়তা তো দূর, সেই নিয়ে নানানপ্রকার বৈষম্যের মুখোমুখি হয়েছি আমরা। তাই এই কোর্স করে যদি আমরা স্বাস্থ্য সমন্ধীয় কিছু শিখতে পারি তা চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রেই শুধু সুবিধা করবে তা নয় বরং আমাদের কমিউনিটিকেও আপাদকালীন পরিস্থিতিতে সাহায্য করবে”।

ট্রান্সজেন্ডাদের কর্মক্ষেত্রের সুযোগ এই রাজ্যে নেই বললেই চলে। এই কোর্স কর্মক্ষেত্রের এই গ্রাফের কিছুটা উন্নতি ঘটাবে বলে আমরা আশাবাদী।গবেষণায় দেখা যাচ্ছে এই রাজ্যের প্রায় ৪২ শতাংশ ট্রান্সজেন্ডাররা প্রাথমিক শিক্ষা পায়নি। বৈষম্যের নানান কারণে তাদেরকে স্কুল ছুট হতে বাধ্য করেছে। তাই প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়ার জন্য চাকরি ক্ষেত্রেও তাদের অসুবিধের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। লিঙ্গ সাম্য আন্দোলন কর্মী অভিরূপা করের কথায় “আমরা মনে করছি এই কোর্স একাধারে যেমন রূপান্তরকামী মানুষদের স্বাস্থ্য সম্বন্ধে সচেতন করবে অন্যদিকে চাকরি ক্ষেত্রেও তাদের পরিচিতি ও সম্মান দুই আসবে।”
এই প্রচেষ্টায় পাশে এসে দাঁড়িয়েছে Servier Pharmaceuticals, Globsyn Business School ও নদীয়া সম্প্রতি, বর্ধমান স্বপনীল, বীরভূম সম্পর্কের মতো সংস্থা।Servier Pharmaceuticals এর CSR HEAD, Priyam Dhamankar বলেছেন, ” স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ট্রেনিং প্রান্তেরা সবসময় অগ্রাধিকার পান চাকরি ক্ষেত্রে আমাদের কোম্পানিতে। এবার বিষয় যখন ট্রান্সজেন্ডার মানুষদের চাকরি দেওয়ার কথা সে কথা আজ থেকে ১০ বছর আগে অসম্ভব হলেও এই উদৌগের পর তা সহজ হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।”
কুইয়ার ফেমিনিস্ট সায়কের কথায়, সামাজিক পরিকাঠামোর মধ্যে সমন্বয় আনার জন্য ও এই কোর্সটি পরিচালনা করার চেষ্টা হয়েছে। এই কোর্সটির ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ১৮ মে থেকে। এই প্রকার Gender affirmative paramedical training টি ভারতের প্রথম উদ্যোগ। ১৮ মে ৩০ জন রূপান্তরকামী এই কোর্সটিতে নিজেদের নিযুক্ত করেছেন। আগামী দিনে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। একবছর পর এই রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলিতে তাদের দ্বারা আমরা পরিষেবা পাব বলে আশাবাদী।
