ডার্বি সমর্থকদের মাঝে মিশে থাকা কমরেডদের মুখোশ খুললেন কুণাল

আর জি কর কাণ্ডে (RG Kar Hospital) যখন আন্দোলিত, অস্থির গোটা রাজ্য, ঠিক তখনই ছিল খেলার মাঠে বাঙালির আবেগের সবচেয়ে বড় মশলা কলকাতা ডার্বি।মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের এই চিরন্তন লড়াই ঘিরে বাঙালির উন্মাদনার শেষ নেই। গত রবিবার, যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে সেনাবাহিনী পরিচালিত ডুরান্ড কাপের গ্রুপ লিগের একটি ম্যাচ ছিল চির প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের মধ্যে। অনলাইনে সিংহভাগ টিকিটও বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আর জি কর কাণ্ডের আবহে আইন শৃঙ্খলার কথা ভেবে পুলিশ প্রশাসন সেই ম্যাচ বাতিল করে। গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, ৬০ থেকে ৭০ হাজার দর্শক ওইদিন মাঠে আসতেন। ফলে অপ্রীতিকর কোনও ঘটনা ঘটতেই পারে। সেটা এড়াতেই ম্যাচে বাতিলের সিদ্ধান্ত।

তাতেই আগুনে ঘি পড়ে। দুই ক্লাবের কিছু সমর্থক বিদ্রোহ ঘোষণা করে। তাঁরা ম্যাচ না হলেও ওইদিন যুবভারতীর সামনে একত্রে ভিড় জমায়। সংখ্যাটা মেরেকেটে দুই থেকে তিন হাজার হবে। তাঁরা আর জি কর কাণ্ডের বিচার চেয়ে প্রথমে যুবভারতী ভিআইপি গেটের সামনে প্রতিবাদ শুরু করে। পরে সেই প্রতিবাদ আছড়ে পড়ে ইএম বাইপাসের ব্যস্ত রাস্তায়। পুলিশ কিছুটা বাধ্য হয়েই ভিড় হটাতে শুরু করে। যা নিয়ে নতুন করে শুরু হয় বিতর্ক।

কিন্তু এই প্রতিবাদে কি সামিল হয়েছিলেন শুধুমাত্র ফুটবল প্রেমীরা? যাঁরা ছোট, বড় সব ম্যাচে প্রিয় দলের হয়ে গলা ফাটাতে নিয়মিত মাঠে আসেন তাঁরা? নাকি একদিনের হুজুগে কিছু পাবলিক? কিছু সমর্থক নিশ্চয় নিয়মিত খেলার মাঠের লোক। কিন্তু সেদিন জমায়েত বেশির ভাগের কাছেই ছিল না ম্যাচের টিকিট। অর্থাৎ, ডার্বি হলেও এঁরা মাঠে আসতেন না। বা ডার্বি বাতিল নিয়ে তাঁদের প্রকৃত অর্থে কোনও ক্ষোভ বা আক্ষেপ নেই। এঁদের অনেকের উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক। এবং সেটা বিভিন্ন ছবিতে বা ফুটেজে ধরাও পড়েছে।

সেদিন প্রতিবাদ করা ডার্বি সমর্থকদের একটি অংশকে নেতৃত্ব দিতে পরিকল্পিত ভাবে সেখানে হাজির ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হয়ে সওয়াল করা পরিচিত কিছু মুখ। আবার অনেকেই বাম-রাম যুগলবন্দির হয়ে ভোটেও দাঁড়ান। ফলে সেদিন ডার্বি সমর্থকদের প্রতিবাদ আংশিক হলেও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ছিল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ মঙ্গলবার এক্স হ্যান্ডেলে দুটি ছবি পোস্ট করেন। যেখানে একটি ফ্রেমে দেখা যাচ্ছে, বিনোদন জগতের দুই বামপন্থী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব উষশী চক্রবর্তী ও সৌরভ পালৌধিকে। তাঁরা বিচার চাইতে এসে গুটিকয়েক লোকজন নিয়ে আবার হাসিমুখে সেলফিও তুলছে। চোখে মুখে কোথাও সমবেদনার ছাপ পর্যন্ত নেই। অন্য একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে লোকসভা ভোটে জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়া সিপিএম প্রার্থী দীপ্সিতা ধরকে। তিনি আবার হাসি মুখে ছবির পোজ দিতেই ব্যস্ত।

আর জি কর (RG Kar Hospital) কাণ্ডের প্রতিবাদের নামে বামেদের এই দ্বিচারিতাকে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। এক্স হ্যান্ডেলে ছবি পোস্ট করে তিনি লেখেন, “আর জি কর কাণ্ডের বিচার চাইতে যুবভারতীতে। চোখে মুখে উদ্বেগ। চিন্তা। অশ্রু। তৃণমূল খুব খারাপ। শুধু আমাদের কমরেডদের অধিকার গভীর শোকপ্রকাশ করে ভেঙে পড়ার। আমরাই বিপ্লবী। আর প্রতিবাদটা রাজনৈতিক।”

এ দিকে আজ, মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে দিয়ে বিকেল ছয়টা নাগাদ তিন প্রধানের কর্মকর্তারা সাংবাদিক বৈঠক করবেন বলে জানানো হয়েছে। মোহনবাগানের সাধারণ সম্পাদক দেবাশিস দত্ত, ইস্টবেঙ্গলের সাধারণ সম্পাদক রূপক সাহা ও মহামেডান স্পোর্টিংয়ের সাধারণ সম্পাদক ইস্তিয়াক আমেদ রাজু সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। ময়দানে স্পোর্টস জার্নালিস্ট ক্লাবে এই বৈঠক আয়োজিত হবে বলে জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন:ধর্ষণ-খুন সারাদেশের সমস্যা: মেনে নিল সুপ্রিম কোর্ট, রায়কে স্বাগত তৃণমূলের

 

Previous articleস্বাস্থ্যভবনে এবিভিপির বি.ক্ষোভ কর্মসূচি ঘিরে সল্টলেকে ধুন্ধুমার
Next articleহলিউডের বাতাসেও ‘বিচারের দাবি’, আরজি কর কাণ্ডে পথে প্রতিবাদ প্রবাসী ভারতীয়দের