রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের (Buddhadeb Bhattacharya) স্মরণসভা নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে (Netaji Indore Stadium)। বৃহস্পতিবার প্রয়াত নেতার প্রতিকৃতি এবং দলীয় পতাকায় সেজে উঠেছে নেতাজি ইন্ডোর। সিপিআইএম-র রাজ্য কমিটি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মরণসভার আয়োজন করেছে। তবে এদিনের অনুষ্ঠানে সর্বসাধারণের প্রবেশ অবাধ হলেও বিতর্ক পিছু ছাড়ল না। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজনৈতিক সংকীর্ণতার গণ্ডি ছেডে় বেরোতেই পারল না লাল শিবির। এদিনের স্মরণসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি তৃণমূলের কাউকেই আমন্ত্রণ জানাল না আলিমুদ্দিন। তবে বিজেপি (BJP) ও কংগ্রেসের (Congress) একাধিক শীর্ষ নেতাকে এদিনের স্মরণসভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আর তা নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক।

এই প্রসঙ্গে সিপিএম নেতা রবীন দেবের বক্তব্য, তৃণমূল ও বিজেপিকে দলগতভাবে আমন্ত্রণ করা হয়নি। রাজ্য পার্টি অফিসেই শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলের যাঁরা শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন, ব্যক্তিগতভাবে তাঁদের আমন্ত্রণ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল অন্য ছবি। এদিন বাম দলের নেতা কর্মীদের পাশাপাশি বিজেপি ও কংগ্রেসের একাধিক শীর্ষ নেতা নেতাজি ইন্ডোরের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন। এদিন বেলা আড়াইটে থেকে প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর স্মরণসভা শুরু হয়েছে। অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি নাগরিক সমাজের বিশিষ্টদেরও আমন্ত্রণ করা হয়েছে। স্মরণসভায় উপস্থিত সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও সিএবির সভাপতি স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে রয়েছেন রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য। আলিমুদ্দিনে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন শমীক। তাই তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় জানান, “আমার সঙ্গে খুবই ভাল সম্পর্ক ছিল। পুরোপুরি খেলাপাগল মানুষ ছিলেন। আমি তখন ভারতের অধিনায়ক। আমার সঙ্গে ক্রিকেট নিয়ে বিস্তর আলোচনা হত। আমি ছ’বছর ক্যাপ্টেন ছিলাম। যত বারই কথা হয়েছে, ক্রিকেট নিয়েই হয়েছে। শুধু সৌরভের ক্রিকেট বা সমকালীন ভারতীয় ক্রিকেট নয়, পঙ্কজ রায়ের ব্যাটিং নিয়েও আলোচনা হয়েছে। কলকাতায় ফিরলেই আমার সঙ্গে দেখা হত। আমি আজকের স্মরণসভায় আসতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত। সম্পর্ক সবকিছুর উর্দ্ধে। উনি যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন”।


গত ৮ আগস্ট কলকাতার পাম অ্যাভিনিউতে নিজের বাড়িতে প্রয়াত হন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর প্রয়াণের খবর পেয়েই পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে ছুটে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর পর প্রয়াত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্মান জানানোর কথাও বলেছিলেন মমতা। শুধু তাই নয়, অসুস্থ থাকাকালীন বুদ্ধবাবুকে দেখতে বা খোঁজ নিতে একাধিবার গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি বিধানসভা থেকে বামেরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ায় আশঙ্কা প্রকাশ করে লাল পতাকাধারীদের পাশে থেকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু শুধুমাত্র সংকীর্ণ রাজনীতির কারণেই গান স্যালুটের পর এবার প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর স্মরণসভার ক্ষেত্রেও সিপিএমের সংকীর্ণ রাজনীতি প্রকাশ্যে এল। তবে সিপিএমের একাংশের মতে, রাজনীতির ঊর্ধ্বে গিয়ে সৌজন্যের খাতিরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্মরণসভায় আমন্ত্রণ জানানো উচিত। কিন্তু সে পথে পা বাড়াল না লাল পতাকাধারীরা।

বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জীবন ও কাজ নিয়ে একটি প্রদর্শনীও হচ্ছে। অনুষ্ঠানে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বক্তৃতা, আবৃত্তি, সাক্ষাৎকার ইত্যাদি নিয়ে একটি তথ্যচিত্রও প্রদর্শন হচ্ছে। পাশাপাশি তাঁর লেখা একাধিক বই বিক্রির বন্দোবস্তও রাখা হয়েছে। তবে এদিনের সভায় চোখের ছানি অপারেশনের কারণে সীতারাম ইয়েচুরি আসতে না পারলেও প্রকাশ কারাত, বৃন্দা কারাত—সহ সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত রয়েছেন।

