রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে ট্যাংরা-কাণ্ড! কিশোরীকে শ্বাসরোধ করে খুন? ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষায় তদন্তকারীরা

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। আর তার আঁচেই নাকি ট্যাংরায় রহস্যমৃত্যু! শুনতে অবার লাগলেও, এই তথ্যই তদন্ত নেমে পাচ্ছেন পুলিশ (Police) আধিকারিকরা। চামড়ার গ্লাভসের ব্যবসা দে-ভাইদের। রফতানি হত রাশিয়ায়। কিন্তু পুলিশ সূত্র খবর, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে ব্যবসায় মন্দা শুরু হয়। এর পাশাপাশি প্রোমোটিংয়ে লগ্নি করা শুরু করেন প্রণয় দে ও প্রসূন দে (Pranay De-Prasun De)। কিন্তু সব দিকেই লোকসান। এদিন বাজারে বিপুল দেনা। পাওনাদারদের আনাগোনা। ঋণদানকারী সংস্থার চাপ। এই সবের কারণেই এই সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে। তবে, বাড়িতে মৃত তিন মহিলা সদস্যের মধ্যে নাবালিকা আত্মহত্যা করেনি বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, তার নাক থেকে ফ্লুয়িড বেরিয়ে গিয়েছিল। যেটা সাধারণত কেউ শ্বাসরোধ করলে ঘটে। এক্ষেত্রে কিশোরী প্রিয়ংবদাকে কেউ শ্বাসরোধ করে খুন করে আত্মঘাতী হতে পারেন বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান। সুদেষ্ণা দে-র বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে।

ট্যাংরা “প্রোটেকটিভ লেদার গ্লাভস’-এর কারখানা তৈরি করেছিলেন প্রণয়-প্রসূনের বাবা প্রদীপকুমার দে। লোকসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রয়াত সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বন্ধু ছিলেন তিনি। ট্যাংরা অঞ্চলের CPIM নেতাদের সঙ্গে যথেষ্ট ঘনিষ্ঠতা ছিল প্রদীপ দের। চামড়ার গ্লাভস ও অন্যান্য সামগ্রী তৈরি করে বিদেশে রফতানি ও দেশের বিভিন্ন শহরে সরবরাহ করতেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর পরে দুই পুত্র প্রণয় ও প্রসূন (Pranay De-Prasun De) মিলেই ব্যবসা চালাতেন। কারখানায় দুই শিফটে কমপক্ষে ৫০ জন করেন। সম্প্রতি এলাকার এক প্রোমোটারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্রোমোটিংয়ের ব্যবসা শুরু করেন দে ব্রাদার্স। বিলাসবহুল জীবনযাত্রা ছিল তাঁদের। সপরিবারের একাধিকবার বিদেশ ভ্রমণ করেন। বাড়িতে প্রায়ই চলত পার্টি।

২০২০-র লকডাউনের সময় থেকেই ব্যবসায় মন্দা দেখা দেয়। রফতানির কমে। এর মধ্যেই রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধ হয়। ফলে রফতানি বন্ধ হয়। বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণও নেন দুইভাই। ক্রমশ আর্থিক চাপ বাড়তে থাকে। প্রতি মাসে মোটা টাকা ঋণ মেটাতে হত। পাওনাদারদের লাখ লাখ টাকার চেক বাউন্স হচ্ছিল। পুলিশ সূত্রে খবর, ঋণদাতা সংস্থারও বিপুল চাপ ছিল দে পরিবারের উপর। সেই কারণেই কি পরিবারের তিনজনকে খুন করে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত, না কি সমবেত হয়ে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েও ‘সফল’ হতে পারেনি দে পরিবার? উঠছে প্রশ্ন।
আরও খবর: হাওড়ায় নিজের গাড়িতে গুলিবিদ্ধ হুগলির পুলিশ আধিকারিক! চাঞ্চল্য এলাকায় 

বুধবার ভোররাতে প্রথমে বাইপাসের অভিষিক্তা মোড়ের কাছে পিলারে ধাক্কা দেয় গাড়ি। সেই দুমড়ে যাওয়া গাড়ি থেকে প্রণয় দে, প্রসূন দে ও তাঁদের এক পুত্রসন্তান প্রতীপকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। বাইপাসের বেসরকারি হাসপাতালে তাঁদের ভর্তি করার সময় তাঁরা জানান, বাড়িতে তিনটি মৃতদেহ রয়েছে। সেই মতো ট্যাংরার ১এ, অতুল শূর রোডে গিয়ে হাড় হিম করা দৃশ্য দেখে চমকে যায় পুলিশ। দেখা যায়, দে ভাইদের দুই স্ত্রী সুদেষ্ণা দে এবং রোমি দে-র রক্তাক্ত দেহ দুই ঘরে পড়ে আছে। সেখানে একটিই মাত্র ছুরি মিলেছে। আর এক ঘরে প্রণয় ও রোমির কিশোরী কন্যার দেহ। ১৪ বছরের প্রিয়ম্বদা দের নাক থেকে ফ্লুয়িড  বেরিয়ে ছিল। সাধারণত শ্বাসরোধ করে খুন করলে, এই চিহ্ন মেলে। কিন্তু আত্মহত্যায় নাক থেকে ফ্লুয়িড হয়নি। পুলিশ কমিশনার জানান, কিশোরীর ঠোঁট এবং নাকের নীচে আঘাতের চিহ্নও মিলেছে। কিশোরীর মা এবং কাকিমা হাতের শিরা কাটা ছিল। তাঁদের গলাতেও ক্ষতচিহ্ন দেখা গিয়েছে।

সুদেষ্ণা দে-র বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবারই, কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মার (Manoj Verma) জানান, “আরও কিছু জেনেছি। তথ্য আমাদের হাতে এসেছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই আমরা সব তথ্য প্রকাশ করতে পারছি না। হাসপাতাল থেকে আহতেরা যা বয়ান দিয়েছেন, তা যাচাই করা হচ্ছে।“ এখন ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষা করেছেন তদন্তকারীরা।