Thursday, December 18, 2025

‘৭ – ৩৮ – ৫৫’, উৎপল সিনহার কলম 

Date:

Share post:

উৎপল সিনহা

মনের নাম মধুমতী
আর চোখের নাম আয়না
আমি দুহাতে চোখ
ঢেকে রাখি
মন যেন জানা যায় না …

চোখ দেখলেই নাকি মনের ভাব অনেকটা বোঝা যায় । কিন্তু সত্যিই কি তাই ? মন পড়ে ফেলা কি এতোই সহজ ? বিশ্বজুড়ে হাজার বছর ধরে অজস্র গবেষণার মূল বিষয় মানুষের মন । মন বড়োই জটিল । কখনো কখনোও কিছুটা বোঝা গেলেও মানুষের অন্তরের জটিল সমীকরণ বোঝার চেয়ে কঠিন কাজ এ পৃথিবীতে আর কিছু নেই । তবে হ্যাঁ , দেহ-ভাষা বা শরীরী ভাষা ব’লে একটা ব্যাপার আছে , যাকে body language বলা হয় ইংরেজি ভাষায় । মানুষের আচার আচরণ , ভাবভঙ্গি ইত্যাদি দেখে , কণ্ঠস্বর শুনে সবটা না হোক , মনের কিছুটা হদিশ অবশ্যই পাওয়া যেতে পারে ।

মানুষের মন প্রকৃত অর্থেই দুর্জ্ঞেয় । তবে হ্যাঁ , মানুষের তাৎক্ষণিক মনোভাব জানা বা অনুমান করার কিছু উপায় রয়েছে , যেগুলি নিয়ে দীর্ঘকাল ধরে পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়ে আসছে । কিছু কিছু ফলও পাওয়া গেছে । কোনো কাজ করার অব্যবহিত পূর্বে মানুষের শরীর কিছু সঙ্কেত দেয় ।

এখানেই একটি নিয়ম বা সূত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। তা হলো : ৭ – ৩৮ – ৫৫ নামক সূত্র । এই নিয়মটি দাবি করে যে, কথোপকথনের বেশিরভাগ অর্থ কণ্ঠস্বর এবং শারীরিক ভাষায় পাওয়া যায় । অধ্যাপক অ্যালবার্ট মেহরাবিয়ান ১৯৬০-এর দশক থেকে যোগাযোগের বোঝাপড়ার পথিকৃৎ , পথপ্রদর্শক । তিনি ক্লার্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৬৪ সালে লস এঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ও গবেষণার কাজ শুরু করেন । তাঁর প্রসিদ্ধ যোগাযোগ তত্ত্ব :

( সূত্র ) ৭ – ৩৮ – ৫৫ , মৌখিক , অ-মৌখিক , শারীরিক ভাষা । তাঁর এই তত্ত্বকে অতি-সরলীকৃত পরিসংখ্যান হিসেবে সমালোচিতও হতে হয় । সূত্রটি বিশ্লেষণ করা হয় এইভাবে :

৭ শতাংশ অর্থ উচ্চারিত শব্দের মধ্যে । ৩৮ শতাংশ অর্থ প্যারালিঙ্গুইস্টিক ( শব্দগুলো যেভাবে বলা হয় ) এবং বাকি ৫৫ শতাংশ অর্থ মুখের অভিব্যক্তিতে । তাঁর প্রথম গবেষণায় অধ্যাপক মেহরাবিয়ান নির্ধারণ করতে চেয়েছিলেন যে , শ্রোতারা শব্দ বা স্বরের মাধ্যমে আবেগের সুর বেশি শনাক্ত করেছেন কিনা । স্বরের উচ্চারণেও বিভিন্নতা লক্ষ্য করা যায় । ইতিবাচক , নিরপেক্ষ অথবা নেতিবাচক একটি শব্দ ৩০ জন মহিলা অংশগ্রহণকারীদের শুনিয়ে তিনি তাঁদের মতামত জেনেছিলেন । যেমন ‘ ধন্যবাদ ‘ শব্দটি নানাভাবে উচ্চারণ করা যেতে পারে । এ থেকে বক্তার মনোভাব কিছুটা হলেও বোঝা যায় বইকি । আবার অনেকের স্বরক্ষেপণ ও অভিব্যক্তি এতটাই পাথরের মতো নিরেট যে , তার থেকে ইতিবাচক বা নেতিবাচক কোনো মনোভাবই বোঝা সম্ভব নয় ‌। এই ধরনের অভিব্যক্তিকে নিরপেক্ষ বলতে হবে । তাঁর দ্বিতীয় গবেষণায় ৩৭ জন নারী অংশগ্রহণ করেন । এখানেও পছন্দ , অপছন্দ বা নিরপেক্ষ ইত্যাদি বিভিন্ন অভিব্যক্তি-সহ একজন ব্যক্তির মুখের ছবি দেওয়া হয় । অংশগ্রহণকারীরা ছবির দিকে তাকালে জোরে উচ্চারিত একটি শব্দ শুনতে পেতো এবং তা থেকেই বক্তার মনোভাব , আবেগ ইত্যাদি অনুমান করতে হতো । এতে দেখা গেছে , কখনও স্বর ও মুখের অভিব্যক্তি মিলে যেতো , আবার কখনও মিলতো না ।

এই সমস্ত ফলাফল একত্রিত করে মৌখিক ও অ-মৌখিক আবেগগত ইঙ্গিতের ওপর , শব্দ উচ্চারণের অভিব্যক্তির ওপর ভিত্তি করে গোটা বিষয়টার সংক্ষিপ্তসার হিসেবে ৭ – ৩৮ – ৫৫ অনুপাত তৈরি করেন এই বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী ।

তাহলে সবমিলিয়ে এটা বলা যায় যে , যোগাযোগের ৭ শতাংশ মৌখিক বিষয়বস্তু , ৩৮ শতাংশ কণ্ঠস্বর এবং ৫৫ শতাংশ শারীরিক ভাষা দ্বারা গঠিত । যোগাযোগ তত্ত্ব ও অধ্যয়ণে এই অনুপাত অবশ্যই একটি প্রাথমিক ধারণা প্রতিষ্ঠা করে । তবে এই সূত্র বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয় । আবার এটাও বলতে হয় যে , এই সূত্রটিকে সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করে আধুনিক যোগাযোগ- বিজ্ঞানের আলোচনা সহজ নয় ।

আরও পড়ুন – পাকবিরোধী প্রচারে ভারত: জাপানসহ একাধিক দেশে তৃণমূল সাংসদ ইউসুফ পাঠান

_

 

_

 

_

spot_img

Related articles

বাংলা সব ধর্মকে সম্মান করে: ক্রিসমাস ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধন মঞ্চে বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর, দিলেন ভালো থাকার টিপস্

বাংলা সব ধর্মকে সম্মান করে। তবু কেউ কেউ রাজ্যকে বদনাম করার চেষ্টা করেন। বৃহস্পতিবার কলকাতা ক্রিসমাস ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধন...

২০১৬-র SSC-র গ্রুপ সি-ডির যোগ্য তালিকা প্রকাশে হাই কোর্টের রায় কেপ্ট ইন অ্যাবায়েন্সের নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের

স্কুল সার্ভিস কমিশন(এসএসসি)-র ২০১৬ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি-র যোগ্য প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করার জন্য যে...

দলে একঝাঁক তারকা, আসন্ন আইপিএলে নাইটদের নেতা বদল!

মিনি নিলামে(IPL Mini Auction) খাতায় কলমে শক্তিশালী দল গঠন করেছে কেকেআর(KKR)। অজিঙ্ক রাহানে, রিঙ্কু সিংরা ছিলেন সঙ্গে ক্যামেরন...

মনরেগার পরিবর্তে ‘জিরামজি’ বিল পাশ লোকসভায়! উত্তাল লোকসভা

বিরোধীদের প্রবল আপত্তি ও বিক্ষোভ সত্ত্বেও লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে MGNREGA-র নাম বদল বিল লোকসভায় পাশ করাল মোদি সরকার।...