পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বৃহস্পতিবার বিরল পরিস্থিতি। বিক্রয় কর সংশোধনী বিল নিয়ে আলোচনার মাঝপথে বেরিয়ে যাওয়ায় বিজেপির দুই বিধায়ক অশোক লাহিড়ী ও অম্বিকা রায়ের বক্তব্য কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়ার নির্দেশ দিলেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় (Biman Banerjee)। বিধানসভার (Assembly) সাম্প্রতিক ইতিহাসে এমন সিদ্ধান্ত কার্যত প্রথম বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

এদিন বিধানসভায় দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল সেলস ট্যাক্স অ্যামেন্ডমেন্ট বিল ২০২৫ নিয়ে আলোচনায় ঘটনার সূত্রপাত। করদাতাদের স্বস্তি ও বকেয়া মামলার নিষ্পত্তির লক্ষ্যেই বিলটি পেশ করে রাজ্য সরকার। দ্বিতীয় দিনের আলোচনায় অংশ নেন বিজেপির একাধিক বিধায়ক। বক্তব্য পেশ করেন অশোক লাহিড়ী ও অম্বিকা রায়। কিন্তু সেই আলোচনা চলাকালীনই বিধানসভা থেকে বেরিয়ে যান বিজেপি বিধায়করা, নেতৃত্বে ছিলেন দলের মুখ্য সচেতক শংকর ঘোষ। তাঁরা বেরিয়ে গেলেও কিছুক্ষণ বসেছিলেন অশোক লাহিড়ী। পরে তাঁকেও ডেকে নিয়ে যান শংকর ঘোষ। এর পরেই শুরু হয় চরম উত্তেজনা। ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাসেরা। তাঁরা স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানান, বিরোধীরা নিয়মিত আলোচনা অসম্পূর্ণ রেখেই অধিবেশন ছেড়ে যাচ্ছেন।

স্পিকারের (Biman Banerjee) মন্তব্য, “এই আচরণ শুধু অসৌজন্যমূলক নয়, অধ্যক্ষপদকেও অসম্মান করা হচ্ছে। আমি এই ঘটনার নিন্দা করছি এবং স্পষ্ট করে দিচ্ছি, যাঁরা আলোচনার মাঝপথে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বেরিয়ে যান, তাঁদের বক্তব্য কার্যবিবরণীতে থাকবে না।”

স্পিকার স্পষ্ট জানান, “প্রয়োজনে আরও কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পিছুপা হব না। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিরোধীদের বাদ দিতে চাই না, কিন্তু শৃঙ্খলা রক্ষায় এমন পদক্ষেপ বাধ্য হয়েই নিতে হচ্ছে।”

অন্যদিকে, বিলের জবাবী ভাষণে চন্দ্রিমা জানান, আগের সংশোধনী বিলের মাধ্যমে ২০২৩ সালে রাজ্য সরকার ২০,৭৯৮টি মামলা নিষ্পত্তি করে আয় করেছে ৯০৭ কোটি টাকার বেশি। এবারও একই পথে হাঁটছে সরকার। ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বকেয়া বিক্রয় করের ৭৫ শতাংশ আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে মিটিয়ে দিলে করদাতাকে ছাড় দেওয়া হবে সুদ ও জরিমানায়।

বিল পাশ হলেও ছায়া ফেলে গেল রাজনৈতিক চাপানউতোর। অধ্যক্ষের সিদ্ধান্ত নিয়ে ইতিমধ্যেই জোর আলোচনা শুরু রাজনৈতিক মহলে। শাসকদলের মতে, এটি শৃঙ্খলার বার্তা। বিরোধীরা বলছে মত প্রকাশের অধিকারে হস্তক্ষেপ। তবে বিধানসভার কার্যবিবরণী থেকে বিরোধীদলের বক্তব্য বাদ যাওয়ার নজির এ রাজ্যে বিরল।
আরও খবর: হাইব্রিড মাছ চাষে নিষেধাজ্ঞা, বিধানসভায় ঘোষণা মৎসমন্ত্রীর

–

–

–

–

–
–
–