Thursday, August 21, 2025

বিজেপির মধ্যপ্রদেশে মন্দিরে ব্রাত্য দলিতরা

Date:

Share post:

সবকা সাথ, সবকা বিকাশ। হ্যাঁ, নরেন্দ্র মোদীর বিজেপির (BJP) গোটা দেশ জুড়ে শুধু একটাই বার্তা। কিন্তু আদতে কি সত্যিই তেমনটা হচ্ছে। মধ্যপ্রদেশের (Madhyapradesh) চিত্র তো সেই কথা একেবারেই বলছে না। বরং সেখানে ফুটে উঠছে এক বর্ণপ্রথার (Cast) ভয়ঙ্কর ছবি। যে হিন্দুত্বের ধ্বজা উড়িয়ে গোটা দেশে নানান কথা বলতে শোনা যায় বিজেপির নেতা, নেত্রীদের। সেই বিজেপি (BJP) শাসিত রাজ্যে বেহাল দশায় হিন্দুরাই। এই শতকেও মন্দিরে প্রবেশ নিষেধ দলিতদের। ভগবান শ্রী রামের পুজোর অধিকার টুকু কেড়ে নেওয়া হয়েছে তাদের থেকে। হ্যাঁ ডাবল ইঞ্জিন সরকার মধ্যপ্রদেশের চিত্র তো এই কথাই বলছে।

দলিত (ST and SC) সমাজের হেমলতা বাই, সুশীলা বাই-রা চেয়েও তাদের ভগবানের মন্দিরে উঠতে পারে না। গ্রামে নতুন রাম মন্দির হয়েছে। কিন্তু কড়া নির্দেশ, তারা যেন মন্দিরে উঠতে না পারে। উঠলেই নেমে আসতে পারে কঠিন শাস্তি। তাদের দোষ একটাই তারা কেউ হরিজন তো কেউ মালবি সমাজের। মধ্যযুগীয় সেই বর্ণপ্রথা বিজেপি এখনও বেশ গর্বের সঙ্গেই বয়ে নিয়ে চলেছে মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন গ্রাম গুলোতে। সাতপিপালিয়া গ্রামের দিলীপ সিংয়ের (Dilip Singh) গলা থেকে তো ঝড়ে পড়ল একরাশ হতাশার সুর। আবারও দলিতদের (ST and SC) এই কথা বলার পরে তাণর ওপর যে নেমে আসতে পারে বড়সড় বিপত্তি, তাও বলতে দ্বিধা করেননি তিনি।

সাতপিপালিয়া, ভাওখেরি গ্রাম থেকে জামুনিয়া প্রতিটা গ্রামের গল্পটা একই। যে বিজেপি (BJP) গোটা দেশ জুড়ে রাম মন্দিরের প্রসাদ বিতরণের কথা বলে বেড়াচ্ছে। তাদের তালিকা থেকেই বাদ পড়েছেন এই দলিত (ST and SC) সমাজের মানুষরা। তাদের ঘরে প্রসাদ টুকু পর্যন্ত পৌঁছে দেয় না বিজেপি শাসিত এই সরকার। প্রশ্ন করলে দলিত সমাজের মানুষদের সাফ জবাব। তারা তে পিছিয়ে থাকা শ্রেনীর মানুষ, তাই নাকি তাদের পুজোর কোনও কিছুতেই অধিকার নেই। তাদেরই গ্রামে পঞ্চায়েতের উদ্যোগে তৈরি হয়েছে পঞ্চান্ন লক্ষ টাকার বিরাট রাম মন্দির। অন্যান্যদের থেকে চাঁদা নিলেও, দলিতদের (ST and SC) থেকে চাঁদা টুকুও নেয়নি তারা। কারণ একটাই তারা যদি মন্দিরে পুজো দিতে চায়। দলিতদের অবস্থাা যে সেখানেই ক্রমশই খারাপ হচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

সাতপিপালিয়ার দিলীপ সিং বলছিলেন, “আমরা কেউ রাম মন্দিরে যাই না। কী করে যাব আমরা যে সেখানে পুজো দিতেই পারব না। কারণ আমরা তো দলিত সমাজের মানুষ। সেই উৎসবে থাকার কোনও অধিকার নেই আমাদের”।

গোটা দেশে রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার প্রসাদ বিতরণ হয়েছিল। মধ্যপ্রদেশের দলিতদের কাছে তা পৌঁছয়নি। কারণ তারা দলিত। দীলিপ সিং হতাশার সুরে বলছিলেন, “রাম মন্দিরের প্রসাদ যে গোটা দেশে দেওয়া হয়েছে, তা কিন্তু একেবারেই আমাদের কাছে আসেনি। কারণটা সেই একই। আমরা যে উচ্চ বর্ণের নই। নিম্ন বর্ণের মানুষ বলেই তো আমাদের সঙ্গে এমন ব্যবহার। আমাদের সঙ্গে এমনটাই বারবার হয়ে আসে। কী করব ভগবানের মন্দিরে যাওয়ার উপায় নেই। ঘরে ভগবান রয়েছেন। তাঁকেই পুজো করি”।

একই কথা বলছিলেন সুনীতা, হেমলতারাও। সুনীতা বাই কষ্টের সঙ্গে বলছিলেন, “আমরা নিজেরাই এখন আর যাই না। আসলে আমরা নিম্নবর্ণের মানুষ। সেই কারণেই এই মন্দিরে আমরা পুজো দিতে পারি না”।

আমরা গিয়েছিলাম সাতপিপালিয়া গ্রামে। সেখানেই দলিতদের গলা থেকে বেড়িয়ে এল একরাশ ক্ষোভ, হতাশা। তাদের বিধায়ক আবার মধ্যপ্রদেশের (Madhyapradesh) রাজস্ব মন্ত্রী। আর তারই জমানায় ক্রমশই অন্দকারে তলিয়ে যাচ্ছে দলিত সমাজের মানুষরা। কথা বলার সময় বারবার তাদের চোখে জল চলে আসছিল। আবার আতঙ্কও ধরা পড়ছিল তাদের চোখে মুখে। বারবারই তারা বলছিল, এমনটা যে বলছি ওরা যদি জানতে পারে আমাদের ওপরই আবার চোটপাট করতে আসবে।

যে সরকার মুখে সবসময় হিন্দুত্বের বুলি আওরায়। বারবার বিকাশের কথা শোনা যায় যাদের মুখে। সবসময়ই যারা বলে ডবল ইঞ্জিন সরকারের কথা। সেই ডবল ইঞ্জিন সরকারের রাজ্যে নীপিরিত হিন্দুরাই। বর্ণপ্রথায় পুজোর অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে দলিত সমাজের মানুষদের থেকে। মধ্যপ্রদেশের সমস্ত গ্রামের চিত্রটাই এখন এমন।

spot_img

Related articles

যোগীরাজ্যের পাঠ্যপুস্তকে বাদ কেন রবীন্দ্রনাথকে? সাংসদ ঋতব্রতর প্রশ্নে অস্বস্তিতে কেন্দ্র

উত্তরপ্রদেশের দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কি বাদ দেওয়া হয়েছে? তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্নে স্পষ্টতই...

প্রয়াত সিপিএম নেতা-প্রাক্তন মন্ত্রী দীনেশচন্দ্র ডাকুয়া

প্রয়াত সিপিএমের বর্ষীয়ান নেতা দীনেশচন্দ্র ডাকুয়া। বুধবার এনআরএস হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর।...

উপাচার্য নিয়োগের ইন্টারভিউয়ে ডাক মেলেনি! শীর্ষ আদালতে শান্তা দত্ত 

স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের ইন্টারভিউ পর্বে ডাক পাননি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য শান্তা দত্ত। যোগ্য হয়েও তাঁকে সুযোগ দেওয়া...

১৫ দিনেই রেকর্ড সাফল্য! রাজ্যে সাড়া ফেলল ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ কর্মসূচি

মাত্র পনেরো দিনেই নজির গড়ল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন কর্মসূচি, ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’। রাজ্যের মানুষের হাতে উন্নয়নের...