কিশোর কাহিনীর গোয়েন্দা গল্পে স্রষ্টারা খুব সন্তর্পণে রোমান্টিক মুহূর্ত বা যৌন আবেদনকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন চিরকালই। সত্যজিৎ বরাবর সাবধানী থেকেছেন, আর শরদিন্দু প্রেমের থেকে বেশি দাম্পত্যের খুঁটিনাটিতে আটকে রেখেছেন সত্যান্বেষীকে (রহস্য সমাধান অবশ্য যথাযথাই চলেছে)। কিন্তু এখন সময়টা অনেকটা বদলে গেছে। বড় হয়েছেন ‘তোপসে’, এখন তিনি একাই গোয়েন্দা। তাই ফ্রেন্ডস কমিউনিকেশন প্রযোজিত ‘যত কাণ্ড কলকাতাতেই’ (Joto Kando Kolkatatei) ছবি দেখতে দেখতে শুধু নামের মিলটুকু ছাড়া ফেলুদার সঙ্গে আর কোনও সম্পর্ক পাওয়া যাবে না তোপসে বাবুর। পদ্মাপাড়ের দেশ থেকে আসা প্রেমিকার পূর্বপুরুষের অস্তিত্ব খুঁজে পেতে রহস্য সমাধানে শশব্যস্ত হয়ে ওঠার গল্প বলল আজকের তোপসে। ‘রঘু ডাকাত’ বনাম ‘রক্তবীজ টু’-র (Raghu Dakat vs Raktabeej 2) লড়াইয়ের মাঝে প্রচারের আড়ালে থেকেই মুক্তি পেল ‘যত কাণ্ড কলকাতাতেই’ (Joto Kando Kolkatatei), পরিচালনায় অনীক দত্ত। এই ছবির মূল কান্ডারী আবির চট্টোপাধ্যায় (Abir Chatterjee)। কিন্তু পরিচালক- অভিনেতা দ্বন্দ্বে রক্তবীজের ‘পঙ্কজ’কে একবারও এই ছবির প্রমোশনে দেখা যায়নি। তবে সিনেস্ক্রিনে মন ভরিয়ে দিয়েছেন অভিনেতা।

এবার পুজোয় বাংলাদেশের সঙ্গে গভীর হয়েছে আবিরের সম্পর্ক। ‘যত কাণ্ড কলকাতাতেই’ ছবিতে তাঁর চরিত্র প্রতিবেশী রাষ্ট্র থেকে আসা নারী চরিত্রের লড়াইয়ের পাশে থাকার পাশাপাশি প্রেম-কাম-আবেগে ভরপুর রক্তমাংসের পুরুষ। ওপার বাংলার তরুণী ‘শাবা’ কলকাতার বনেদি বাড়িতে হঠাৎ হাজির হয় তাঁর পূর্বপুরুষের অস্তিত্ব খুঁজতে। কী সম্পর্কটা তাঁর এই হিন্দু বাড়ির সঙ্গে? উত্তর জানতে চোখের সামনে উঠে আসতে থাকে একের পর এক ধাঁধা। ফেলুদা প্রিয় তরুণ ‘তোপসে’র সঙ্গে গড়ে ওঠে শাবার বন্ধুত্ব। এরপর ক্লু ধরে এগিয়ে যায় গল্প। বাংলাদেশী তরুণীর চরিত্রে যথাযথ কাজী নওশবা আহমেদ। এই ছবিতে অ্যাংলো ইন্ডিয়ানের ভূমিকায় অভিনয় করা পারমিতা ‘শাবা’ চরিত্রটি ডাবিং করেছে বলে জানা গেছে। ভয়েস মডিউলেশনের অসামান্য দক্ষতায় দুটো চরিত্রকেই সুন্দরভাবে আলাদা করতে পেরেছেন তিনি। এই সিনেমার অন্যতম আকর্ষণ অবশ্যই আবির। তাঁর মধ্যে গোয়েন্দা ভাব অত্যন্ত সাবলীল। পরিচালক আবার তাতে পাঞ্চ করেছেন রোমান্সের মশলা। কিন্তু পাহাড়ের হোটেলে একান্তে পেয়েও প্রিয়তমাকে আরও গভীর স্পর্শে কেন ছুঁয়ে দিলেন না প্রেমিক তোপসে, সে প্রশ্ন থেকে যায়।

কলকাতার নাইটলাইফ থেকে পাহাড়ের নৈসর্গিক দৃশ্য এই ছবির দারুণ পাওনা। ‘যত কান্ড কলকাতাতেই’ ছবির টাইটেল ট্র্যাক বাংলা ব্যান্ড ‘চন্দ্রবিন্দু’র অনিন্দ্য-উপল জুটির দুরন্ত গায়কীকে ফিরিয়ে আনে বাঙালি মনে। অভিনেত্রী দেবযানী চট্টোপাধ্যায়ের ছেলে ঋক এই ছবির বড় আবিষ্কার। বিশেষভাবে সক্ষম কিশোরের মায়ের চরিত্রে অপরাজিতা ঘোষ দাস অনবদ্য। ধাঁধার রহস্য সমাধানের মাঝে মাঝেই প্রেমিক তোপসে বাবুর চাহনি এবং উপলব্ধি এই শরতেও বসন্তের বাতাস বয়ে নিয়ে আসে। তবে ছবির চিত্রনাট্য আর একটু টানটান হতে পারত। বিশেষ করে ক্লাইম্যাক্সটা একেবারে জমেনি। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক নিয়ে আরও পরিশ্রমের প্রয়োজন ছিল। গোয়েন্দা গল্প হিসেবে শেষ দৃশ্যটাও যথাযথ নয়। বড় বড় ছবির ভিড়ে হলে গিয়ে একবার দেখে আসতে পারেন অনীক দত্ত পরিচালিত ‘যত কাণ্ড কলকাতাতেই’। দক্ষিণী ছবির নকলে বাড়াবাড়ি ভিএফএক্স নেই, তবে যাঁরা গোয়েন্দা গল্প ভালোবাসেন তাঁদের মুখ থেকে “শাবাশ তোপসে” প্রশংসা অবশ্যই সিনেমা এবং অভিনেতা আবিরের প্রাপ্য।

–

–

–

–

–

–

–
–