বর্তমান সরকারের ত্রুটি বিচ্যুতি দেখলেই রাজনীতির ময়দানে নেমে পড়েন বামনেতারা। অথচ যে কলকাতা শহরে বর্ষার জমা জলে প্রতিবছর ভোগান্তির শিকার হন সাধারণ মানুষ, সেই শহরের পরিকল্পনার অভাব ও অনুন্নয়ন যে বাম আমলের দান, তা স্পষ্ট করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। জমা জলে এবছর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে বহু সহনাগরিকের। কলকাতা পুরসভা (Kolkata Corporation) তথা রাজ্যের সরকার ক্রমান্বয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে শহরের জমা জলের সমস্যা (water logging) সমাধানের। তবে বাম (Left Front) আমলের জলযন্ত্রণা আজও বয়ে চলতে হচ্ছে বর্তমান সরকারকে।

কারও নাম না করে শুক্রবার কালীপুজো (Kalipuja 2025) উদ্বোধনে (inauguration) গিয়ে অপরিকল্পিত নগরায়ণের কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঠিক পরিকল্পনা না করে বহুতল উঠেছে। ড্রেনের বালাই নেই। জল জমলে কীভাবে বেরোবে কেউ ভাবেনি। পুজোর আগে ৩০০ মিলিমিটার অস্বাভাবিক বৃষ্টিতে এবার অনেক বহুতলেও জল জমেছে। কলকাতা পুরসভা ৬ ঘণ্টার মধ্যে শহরের জল বের করেছে। কিন্তু কিছু বহুতলে জল ছিল। কারণ বাম আমলে তৈরি হওয়া সেসব জায়গায় জল বের করার কোনও পন্থাই রাখেনি তৈরির সময়। ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। এ-বিষয়েই মুখ্যমন্ত্রী (Chief Minister) তাঁর দলের কাউন্সিলরদের (councilor) সতর্ক করেছেন। কিন্তু এর প্রেক্ষাপট ঠিক কী?

কংগ্রেসের হাতে পড়ে তখন কলকাতা সহ বাংলার হতশ্রী চেহারা। তাতে কী! ক্ষমতায় এসে বামফ্রন্ট তথা বড় শরিক সমাজের সবক’টি স্তরে শুধুই দখলদারির রাজনীতিতে ব্যস্ত। নগরায়ণ বলে কিছু হয়নি। অপরিকল্পিত বসতি গড়তে দেওয়া হয়েছে। কারণ একদিকে প্রোমোটারদের কাছ থেকে সিপিএম এর জোনাল-লোকাল-ব্রাঞ্চ কমিটির বড়, মেজ, সেজ এমনকী কুচো নেতাও দেদার টাকা তুলতে শুরু করে। বিনিময়ে কলকাতা শহর ও আশপাশে গড়ে উঠতে থাকে একটার পর একটা ইমারত। কোথাও পুকুর-নালা-খাল বুজিয়ে বাড়ি। কোথাও সিন্ডিকেট (syndicate) তৈরি করে বহুতল। কোথাও জমি দখল করে চড়া দামে বিক্রি করা। পুলিশকে হাতে রেখে আর পার্টির নেতা-মন্ত্রীদের আশীর্বাদ নিয়ে সিপিএম (CPIM) নেতারা তখন নতুন কলকাতা তৈরি করছে। যাতে না ছিল পরিকল্পনা না ছিল ভাবনা। তার ফল ভোগ করেছে কলকাতাবাসী। একটু বৃষ্টি হলেই জলমগ্ন কলকাতা।

৮০-৯০ এর দশকে যাঁরা কলকাতায় বেড়ে উঠেছেন তাঁরা জানেন সেই জল যন্ত্রণা কতটা ছিল। এলাকার কাউন্সিলর কে মুখ ফুটে অভিযোগ করার হিম্মত ছিল না কারও। সিপিএমের দাদাদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সে সাহস কে দেখাবে! তার মধ্যেও যদিও বা কেউ প্রতিবাদ করতেন তাঁর কপালে জুটত অশেষ দুর্ভোগ। বামেদের দখলে থাকা কলকাতা পুরসভার কী কাজ ছিল কেউ জানত না। শহরে কোথায় ক’টা গালিপিট পুরসভার মেয়র ও তার পারিষদরাও জানত না। জানার চেষ্টাও করত না। ৬ ঘণ্টায় শহরের জমা জল বের করা সেসব কল্পনাতেও কেউ আনত না। তবে হ্যাঁ কোনও না কোনও ছলছুতোয় কৌটো হাতে পয়সা তুলতে রাস্তায় নামত সিপিএম নেতারা। শহরের রাস্তা খানাখন্দে ভরা। তাতে কী যায় আসে। লাল ঝান্ডা করে পুকার বলে নেমে পড়লেই হল! সাতখুন মাফ। তার খেসারত দিচ্ছে আজকের বৃহত্তর কলকাতা।

আরও পড়ুন: দেশের মধ্যে কলকাতা ‘নিরাপদতম’ শহর: বিরোধীদের কুৎসার জবাবে ফের মনে করালেন মুখ্যমন্ত্রী

সিপিএম ক্ষমতা ভোগ করতে যা খুশি তাই করেছে। কিন্তু মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় কাজটুকু করেনি। উত্তরবঙ্গের দাপুটে সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য দীর্ঘ বছর ধরে নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ছিলেন। অথচ রাজ্যের পুরসভাগুলির বেহাল দশা ঘোচেনি। মানুষ ন্যূনতম পরিষেবাটুকুও পাননি। আর আজ ভয়াবহ দুর্যোগে কলকাতায় ৬ ঘণ্টা জল থাকলে টিভিতে বসে সিপিএমের নেতারা জ্ঞান দেন কীভাবে জল নামানো যেত! সার্কাস আর কাকে বলে! আসলে নিজেদের অতীত ভুলে গিয়েছেন কমরেডরা। আর অধুনা সিপিএমের নয়া প্রজন্মের নেতা-নেত্রীরা নিজেদের ক্যাপ্টেন-আগুনপাখি হিসেবে ব্র্যান্ডিং করতে যতটা সময় দেন নজর রাখেন, ততটা সময় দিয়ে যদি তাঁদের দলের দাদা-দিদি-মন্ত্রী-লোকাল-জোনাল-ব্রাঞ্চ কমিটির নেতাদের কীর্তিকলাপ ও বাঁধিয়ে রাখার মতো ইতিহাস খুঁজে দেখতেন তবে লজ্জায় আর টিভি ক্যামেরার সামনে মুখ খুলতেন না। আর সোশ্যাল মিডিয়াতেও বিপ্লব করতেন না!

–

–

–

–