এবার কি তৃণমূলে হুমায়ুন বিদায়!

Date:

Share post:


অভিজিৎ ঘোষ

ভোটের মাস ছয়েক বাকি। তার আগে বেপরোয়া গতিতে ব্যাট করছেন তৃণমূলের ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। দলীয় নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছেন। পাঙ্গা নেওয়ার ভঙ্গিতে যে ভাষায় হুমায়ুন এসব কথা বলছেন, তাতে স্পষ্ট, দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন তিনি। প্রশ্ন হল, শীর্ষ নেতৃত্ব কি এসব দেখছেন না? এসব দেখার পরেও কেন হুমায়ুনকে সহ্য করা হচ্ছে? শুধুই কি সংখ্যালঘু (minority) ভোটের অঙ্ক!

এই ক’দিনে কী কী মনিমুক্ত ছড়িয়েছেন ভরতপুরের (Bharatpur) বিধায়ক? বলেছেন, পারলে আমাকে দল থেকে বের করে দেখাক। আমি দশটা আসনে জিতে দেখিয়ে দেব। প্রয়োজনে যে অধীর চৌধুরীকে হারিয়েছি, তার সঙ্গে হাত মেলাব। জেলা সভাপতি অপূর্ব সরকারকে (Apurba Sarkar) লক্ষ্য করে বলেছেন, ওকে চ্যালেঞ্জ করছি শেষ করে ছাড়ব। জীবনকৃষ্ণর (Jibankrishna Saha) পিছনে ইডি (ED) লাগিয়েছে অপূর্বই! জেলা নেতাদের যখন তখন আক্রমণ করছেন। বাদ যাচ্ছেন না সাংসদ ইউসুফ পাঠানও (Yusuf Pathan)।

মাঝে মধ্যেই হুমায়ুন কুকথা এবং দলবিরোধী মন্তব্য করেন। এটা রুটিনে পরিণত করেছে। দল ডেকে একটু কড়কে দেয়। কিছুদিন বাদে আবার পুরনো ফর্মে ফেরেন। কিন্তু কেন এই দলবিরোধী কার্যকলাপ? দলের মধ্যে কেন বলেন না? হুমায়ুনের বক্তব্য, দলে বলে কোনও লাভ হয় না। এক বছর আগে দুই ব্লক সভাপতির নাম দিয়েছিলাম। নেতৃত্ব সাড়াই দেয়নি। তাহলে কী করব? হুমায়ুনের মূল লড়াই জেলা সভপতি অপূর্ব সরকারের বিরুদ্ধে। পরিস্কার দুটি লবি। একজনের কাজ অন্যজনের পছন্দ হয় না। জেলার নেতা যারা অপূর্ব লবি বলে পরিচিত, তাদেরকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, তোমাদের অতীত রাজনৈতিক ইতিহাস আর পদপ্রাপ্তির কথা দেওয়ালে টাঙিয়ে দেব। এই যে রোয়াপের রাজনীতি করছেন হুমায়ুন, কার প্রশ্রয়ে? অফিস ঘরের দেওয়ালে টাঙানো রয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) ছবি। অনেকে বলছেন, অভিষেকের মদত নেই এটা মানতে অসুবিধে হচ্ছে।

২০২১-এর ভোটে জেতার পর থেকেই হুমায়ুন তার বেয়াদপির খাতা খুলেছে। ২০২২-এ প্রকাশ্য সভা থেকে দলের নেতাদের বিরুদ্ধে যা নয় তাই বললেন। রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি (Subrata Bakshi) ডেকে সমঝে দিলেন। ঠিক এক বছর পর ২০২৩-এ নিজের লোককে জেলা ও ব্লকে ঢোকাতে না পেরে বিষোদগার শুরু। শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে শৃঙ্খলা কমিটি (disciplinary committee) শোকজ করল। লিখিত চিঠিতে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে একটু চুপচাপ। ২০২৪-এ আবার সভা থেকে জেলার নেতৃত্বকে আক্রমণ। আবার সতর্ক করা হলো। হুমায়ুনের (Humayun Kabir) এই বিবেক ফি বছর জেগে ওঠে। তাই ২০২৫ বাদ যাবে কেন? বিধানসভা চলাকালীন শুভেন্দু অধিকারীকে জঘন্য ভাষায় আক্রমণ। এবার পরিষদীয় দলনেতার ভাষা সংযমের চিঠি। কিন্তু হুমায়ুন বিধানসভার বাইরে বেরিয়ে যে কে সেই। এতদিন টার্গেট ছিল জেলার নেতারা। এবার শীর্ষ নেতৃত্ব। চ্যালেঞ্জ, পারলে বের করে দিক। অধীরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে জিতে আসব! এ তো দল ভাঙার উসকানি। দু জায়গায় দাঁড়াব। দু’জায়গায় জিতে দেখিয়ে দেব।

হুমায়ুন কিসের জোরে এসব কথা বলছেন? দলীয় নেতৃত্বের কেউ কি তাকে মদত দিচ্ছেন? নাকি সবটাই ফাঁপা আওয়াজ? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, হুমায়ুন জানে, জেলার সংখ্যালঘু ভোটার ৬৬ শতাংশের বেশি। তাই প্রায় সব দলকেই সংখ্যালঘু প্রার্থী দিতে হয়। হুমায়ুন এটাকেই ক্যাপচার করেছেন। এর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজের সুফল তাঁর সঙ্গে রয়েছে। এই সুবিধা নেওয়ার পাশাপাশি যে কাজগুলো করতে পারেননি তার জন্য বিদ্রোহী ইমেজ তৈরি করে নিজেকে বিপ্লবী সাজানোর চেষ্টা। ভোট এগিয়ে আসছে, তাই এই পারদ চড়ছে। কারণ, এলাকা থেকে তো ভাইব্রেশন বুঝতে পারছেন সম্যক।

এখন কোটি টাকার প্রশ্ন, শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি (disciplinary committee) ডেকে কোন সিদ্ধান্তের কথা জানাবে তৃণমূল! হুমায়ুন (Humayun Kabir) যেভাবে দলের নির্দেশ কিংবা শৃঙ্খলা লঙ্ঘন করে চলেছেন, তাতে অন্য কেউ হলে পার্টি অফিসের বাইরের দরজা দেখিয়ে দেওয়া হতো। তাহলে হুমায়ুনকে এতো রেয়াত কেন? আসলে মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের সংখ্যালঘু নেতার অভাব। সেই কারণেই হুমায়ায়ুনকে সামনে রেখেছিল। এখন তার ফায়দা তুলছেন হুমায়ুন। দলকে ব্ল্যাক মেইলও করছেন।

আরও পড়ুন: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে অগ্রগতি! এক দশকে বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন

তাহলে হুমায়ুনের ভবিষ্যৎ কী? তৃণমূলের একাংশ বলছে, ডেকে কড়া ভাষায় কড়কে দেওয়া হবে। পাশাপাশি সর্বোচ্চ শস্তির হুমকিও দেওয়া হবে। একই দৃশ্য দেখা যাবে, যা বাইশ থেকে দেখা গিয়েছে। হুমায়ুনের দম থাকলে দল থেকে বেরিয়ে গিয়ে ভোটে লড়ে দেখাক। এতসব নাটক করার তো দরকার নেই! দলে পোষাচ্ছে না। দল থেকে বেরিয়ে যাক। তারপর চ্যালেঞ্জ নিক। কত ধানে কত চাল তখনই বোঝা যাবে।

অন্য অংশ বলছে, কিচ্ছু হবে না, হুমায়ুনকে ধরে বকাঝকা-বিবৃতি হবে। মাথায় হাত দিয়ে বোঝাবে। ঠেকা দিয়ে চালানো হবে। ভোটের আগে কোনও ঝুঁকি নেবে না তৃণমূল কংগ্রেস। আর এটা জানে বলেই হুমায়ুনের এতো বাড়-বাড়ন্ত।

spot_img

Related articles

বৃষ্টির দুর্যোগে খোলা হচ্ছে চন্দননগরের বড় বড় পুজোর তোরণ!

ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়েছে অন্ধ্র উপকূলে, দুর্যোগের প্রভাব পড়েছে বাংলায়। সকাল থেকে রাজ্যজুড়ে দফায় দফায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির ছবিটা ধরা...

মন্থার প্রভাবে সকাল থেকে দফায় দফায় বৃষ্টি, কৃষকদের আতঙ্কিত না হওয়ার বার্তা কৃষি বিভাগের

ঘূর্ণিঝড় মন্থার (Mantha) প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় শুরু হয়েছে বৃষ্টি। বুধবার কলকাতায় সকাল চলছে দফায় দফায় বৃষ্টি। অসময়ের...

SSC: অযোগ্যদের আর্জি খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই ফল প্রকাশের সম্ভাবনা

SSC নিয়োগ মামলায় অযোগ্যদের আর্জি খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ...

বিহার SIR-এর ধাপ্পা প্রমাণিত: দুই তালিকায় নামে পাল্টা তোপ পিকের

২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথমবার নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা কারচুবির ছবি তুলে ধরেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata...