সেদিনের বীর আজ বান্ধবীর আঁচলে !! কুণাল ঘোষের কলম

( বিধিসম্মত সতর্কীকরণ: যে যার মত পড়বেন। ভেবে নেবেন। ধরা যাক সব চরিত্র কাল্পনিক ! বাকিটা কাকতালীয় 😆)

সেই বরাহনন্দন বলেছিল আমাকে গুলি করে মারবে। এখন শুধু দেখছি।

এক রাজনৈতিক নেতা। বহুদিন চিনি। তবে ব্যক্তিগত সম্পর্ক যা বোঝায়, তা ছিল না। কাউন্সিলর হিসেবে অভিজ্ঞ। দিনে জলের কাজ, রাতেও জলে অভ্যস্ত। অসীম ক্ষমতা। তবে মেজাজটা তার আসল রাজা নয়; মিচকে ম্যানুপুলেটর টাইপ। একবার আমাকে কৃতিত্বের সঙ্গে শুনিয়েছিল, ঘুষ কীভাবে খায় সে। একেবারে শিল্প! বলেছিল,” বুঝলে, আমি যাদের কাছ থেকে টাকা নিতে পারি না, দামি রোলেক্স ঘড়ি নিয়ে নি। কুড়ি ত্রিশ লাখ টাকা দাম বা তার বেশি। পরে সেটা একজনকে দিয়ে টাকা নিয়ে নিই। আমার লোক আছে।” এই অপূর্ব পদ্ধতিটি আমি আমার ঘনিষ্ঠদের বলায় তাদের চোখ আমার মতই বিস্ফারিত ছিল। এসব যত শুনেছি, তার সঙ্গে ব্যক্তিগত স্তরের বাড়াবাড়ি বন্ধুত্বের কথা আর ভাবি নি। দেখা, কথা হত।

একটা পর্যায়ে আমি তার নামে কিছু অভিযোগ ও তদন্তের দাবি জানিয়েছিলাম।

সেই সময় সেই হারামজাদা আমার এক অভিভাবকসম বর্ষীয়ান ব্যক্তিকে ডেকে পাঠিয়ে বলেছিল,” কুণালকে আমি গুলি করে মারব। আমার রিভলবার দিয়ে।” শুনে তিনি যথেষ্ট উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।

অমন বীরপুরুষকে এখন দেখছি এক সুন্দরীর আঁচল ধরে লাট খাচ্ছে। বন্ধু? বান্ধবী? হতেই পারে। কিন্তু তোমার নিজের রাজনীতির জগতে তাকে ট্যাঁকে করে ঘোরা কেন বাপু? আর সেই বান্ধবীকেও বলিহারি যাই! তুমি যদি সত্যিই বন্ধুর ভালো চাও, তাহলে তাকে সসম্মানে এগিয়ে দেবে; নিজে তার ল্যাজ ধরে এগনোর তাল কেন?

বান্ধবী নাকি সেই নেতাকে রোল মডেল ভাবে! মডেল! সে রাজনীতির মডেল!!! এসব আদিখ্যেতার আর জায়গা পায় নি? কত দিনের বন্ধুত্ব? কীসের বন্ধুত্ব? সর্বত্র আঁচল ধরে ঘোরা। মায়াবন বিহারিনীর প্রচার চলছে। উল্টোদিকে বন্ধুকে নিয়ে লোকে হাসছে। তার নিজস্ব রাজনৈতিক অস্তিত্ব যেটুকু ছিল, বান্ধবীর আঁচলে অস্তমিত। দল ছেড়ে নতুন দল। আবার নাকি গোঁসা। আবার বদলের ইঙ্গিত। খোরাক, খিল্লির কেন্দ্রে।

বান্ধবী শিক্ষিতা, সুন্দরী, গুণী। কিন্তু রাজনীতির কে? বন্ধুত্বের নাম করে সমমর্যাদা চাওয়াটায় কেমন নির্লজ্জ ভাব প্রকাশ পায়। কে তুমি? পরিচয় তো সখী ! আগে রাজনীতির নিজস্ব পরিচয় হোক, তারপর তো সম্মানের কথা। বন্ধু তোমাকে এগিয়ে দিত। তুমি ফোন ধরতে। তাই তুমি সেতু। সেই সুযোগে মঞ্চ আলোর সুযোগ নেওয়াটাকে ধান্দাবাজি বলে। অশুভ আঁতাতের সুযোগসন্ধানীপনা। এই বন্ধুত্বে মনুষ্যত্ব থাকে কি? নাকি থাকে ক্ষমতা, প্রভাব, প্রচার আর টাকা, টাকা, টাকা? বান্ধবী তার বন্ধুকে ঠিকঠাক চেনে তো? নাকি দেশের অর্থনৈতিক মন্দায় এটা স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগ? বন্ধুর রাজনৈতিক পরিচয় যেমন লাটে উঠেছে; এই সর্বসময়ের লেজুড়বৃত্তিতে একজন নারী হিসেবে বান্ধবীর সম্মানের কি ক্ষতি হচ্ছে না? হচ্ছে তো।

বন্ধু, বান্ধবী হতেই পারে। নিজের নিজের জায়গায় সসম্মানে। নিজের পরিচয়ে, গন্ডিতে। একে অপরকে উৎসাহিত করবে। সমৃদ্ধ করবে। তার বদলে ট্যাঁকে করে দিন রাত সহাবস্থান থাকলে তাকে সুস্থ বন্ধুত্ব বলে না, বলে লেনদেনের খেলা। রাজনীতিতে কে ঐ বান্ধবী? সে কেন সবসময় বন্ধুর লেজুড়? কীসের এই ফেভিকুইকের নয়া ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডরের রহস্য? এ তো স্বাভাবিক নয় !! এক রাজনীতির গন্ডির মানুষের হঠাৎ মুখপাত্র হয়ে উঠেছে তার কাল্ কা যোগী অরাজনৈতিক বান্ধবী, যিনি দামী সাজপোষাকে বেশি অভ্যস্ত, কাঁদতে গেলেও মেক আপ লাগে, এসব কি দৃষ্টিকটূ নয়? একে আসলে বলা উচিত অশোভন !

যত দেখছি, মুগ্ধ হচ্ছি।
অমন বীরপুরুষ কেমন মেনি বেড়াল হয়ে গেল!
কানে বাজছে সেই হুঙ্কার:” কুণালকে গুলি করে মারব।”

আয় ভাই আয়।
বসে আছি পথ চেয়ে।
আরও কত কী দেখব বলে।
আমি বিপন্মুক্ত নই। সাপের মত পেঁচিয়ে রেখেছে বেড়াজাল। সেসব যা চলছে, চলুক, বুঝে নেব।
কিন্তু তার মধ্যেও ঈশ্বর যখন এই দুচারটে বরাহনন্দনের বাঘ থেকে বিড়াল হওয়ার ছবি দেখান, বেশ আমোদ লাগে!!

আয় ম্যাও, ফিরে আয়। দিল্লির অট্টালিকায় নেমতন্নবাড়িতে ফ্যামিলি অ্যাপিয়ারেন্স আর বাতেলাবাজি ভুলে ফিরে আয় বাবা। ওটুকু দেখাও সময়ের অপেক্ষা।

আর হ্যাঁ, ভাই তোর রিভলবারটা এখন কোথায়?

( কিছু শব্দপ্রয়োগে আমি দুঃখিত। এটা আমাকে মানায় না। অনুচিত। কিন্তু বদলালাম না। যে আমাকে গুলি করে মারার হুমকি দেয়, তাকে বারবার বরাহন্দন বলব।)

Previous article13 সেপ্টেম্বর পে-কমিশন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার ইঙ্গিত শুভেন্দুর
Next articleএখনই ঘুরে না দাঁড়ালে ইহুদিদের মত ভ্রাম্যমাণ জাতিতে পরিণত হবে বাঙালি