কেন 5 সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস জানেন? চলুন দেখে নিই

আজ 5 সেপ্টেম্বর, জাতীয় শিক্ষক দিবস এবং আদর্শ শিক্ষক ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের 131তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে সকল শিক্ষককে জানাই এখন বিশ্ব বাংলা সংবাদ-এর পক্ষ থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা।

আমরা জাানি, একজন সফল মানুষের সফতার পেছনে শিক্ষকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন আদর্শ শিক্ষক কেবলমাত্র পড়াশোনার ক্ষেত্রে নয়, তিনি ছাত্রকে জীবনে চলার পথে পরামর্শ দেবেন, ব্যর্থতায় পাশে দাঁড়িয়ে উৎসাহ দেবেন, সাফল্যের দিনে নতুন লক্ষ্য স্থির করে দেবেন। তিনি তাকে শুধুমাত্র জীবনে সফল হওয়া নয়, কিভাবে একজন ভাল মানুষ হতে হয় তা শেখাবেন।

তাইতো শিক্ষক সম্পর্কে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রয়াত এ পি জে আবদুল কালাম বলেছিলেন, ‘যদি একটি দেশকে দুর্নীতিমুক্ত এবং সুন্দর মনের মানুষের জাতি হতে হয়, তাহলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এক্ষেত্রে তিনজন সামাজিক সদস্য পার্থক্য এনে দিতে পারে। তাঁরা হলেন বাবা, মা এবং শিক্ষক।’

অ্যারিস্টটল বলেন- ‘যাঁরা শিশুদের শিক্ষাদানে ব্রতী, তাঁরা অবিভাবকদের থেকেও অধিক সম্মাননীয়। পিতা-মাতা আমাদের পৃথিবীর আলো দেখান ঠিকই। কিন্তু শিক্ষকরা সেই জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেন।’

শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং তাঁদের অবদানকে স্মরণ করার জন্য 1995 সাল থেকে প্রতি বছর 5 অক্টোবর তারিখ বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে থাকে বিশ্ব শিক্ষক দিবস। তবে আমাদের দেশ ঠিক তার এক মাস আগে 5 সেপ্টেম্বর জাতীয় শিক্ষক দিবস পালিত হয়।

20 শতকের গোড়ার দিকে দিবসটি পালন করার রীতি শুরু হয়। ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি এবং দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের জন্মদিন (5 সেপ্টেম্বর, 1888) উপলক্ষে ভারতে সকল ছাত্র-ছাত্রীরা সাড়ম্বরে 5 সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস পালন করে থাকে।

একজন আদর্শ শিক্ষক ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ তামিলনাডুর তিরুট্টানিতে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি স্বাধীন ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি (1952-1962) এবং দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি(1962-67) ছিলেন।

তিনি একাধারে রাজনীতিবিদ, দার্শনিক ও অধ্যাপক। এই শান্ত মানুষটি ছাত্রজীবনে অতি মেধাবী ছিলেন। জীবনে কোনও পরীক্ষায় দ্বিতীয় হননি। বিভিন্ন বৃত্তির মাধ্যমে তাঁর ছাত্র জীবন এগিয়ে চলে। 1905 সালে তিনি মাদ্রাজ খ্রিস্টান কলেজ থেকে দর্শনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর বিষয়টি ছিল ‘বেদান্ত দর্শনের বিমূর্ত পূর্বকল্পনা’(The Ethics of the Vedanta and its Metaphysical Presuppositions)।

বিশ্বের দরবারে তিনি অতি জনপ্রিয় দার্শনিক অধ্যাপক হিসাবেও পরিচিত ছিলেন। 1931 সালে তাঁকে British knighthood-এ সম্মানিত করা হয়। 1954-তে “ভারতরত্ন” উপাধি পান।

প্রথম জীবনে তিনি মাইসোর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা করেন (1918)। এসময় তিনি বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য পত্রিকায় লিখতেন। সে সময়েই তিনি লেখেন তাঁর প্রথম গ্রন্থ ‘The Philosophy of Rabindranath Tagore’। দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘The Reign of Religion in Contemporary Philosophy’ প্রকাশিত হয় 1920 সালে। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েও অধ্যাপনা করেন। দেশ–বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি একাধিকবার অধ্যাপনার জন্য আমন্ত্রিত হয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর তাঁর গুণমুগ্ধ ছাত্র ও বন্ধুরা তাঁর জন্মদিন পালন করতে চাইলে তিনি বলেন ‘আমার জন্মদিনের পরিবর্তে 5 সেপ্টেম্বর যদি শিক্ষক দিবস উদ্‌যাপিত হয়, তবে আমি বিশেষরূপে অনুগ্রহ লাভ করবো।’
সেই থেকেই এই বিশেষ দিনটি শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

Previous articleবংশীবাদকের ভূমিকায় ‘গব্বর’, ভাইরাল ভিডিও
Next articleমেয়ের মৃতদেহ কোলে অসহায় বাবা হাঁটলেন পথে, স্তম্ভিত গোটা দেশ