তদন্ত গুটিয়ে আনতেই রাজীব কুমারকে হেফাজতে নিতে চায় CBI

কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্যের ADG-CID রাজীব কুমারের রক্ষাকবচ প্রত্যাহার করার পরমুহূর্ত থেকেই CBI খুঁজে বেড়াচ্ছে এই পুলিশকর্তাকে। সর্বস্তরেই জল্পনা শুরু হয়েছে, এবার আর ছাড় পাবেন না, CBI হেফাজতে তাঁকে যেতেই হবে।

জল্পনা যতই গড়াক, রাজ্যের এক প্রভাবশালী পুলিশকর্তাকে গ্রেফতার করার বিষয়টি শুধুই যে আইনি ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে, এমন ভাবা ভুল। রাজীব কুমার প্রভাবশালী। রাজনৈতিক মহলে তাঁর যোগাযোগ আছে। ইতিমধ্যেই শোনা যাচ্ছে, গ্রেফতারি এড়াতে রাজীব-গোষ্ঠী না’কি বিজেপির দ্বারস্থ হয়েছে। খবরটি এখনও পর্যন্ত অসমর্থিত হলেও এই সম্ভাবনা পুরোমাত্রায় আছে। রাজীব কুমার উত্তর প্রদেশের লোক। বিজেপিশাসিত ওই রাজ্যে ‘পলিটিক্যাল-ক্যাচ’ ধরা তুলনায় সহজ। দীর্ঘদিন ধরেই রাজীব কুমারকে নিয়ে CBI সক্রিয়। এরই ফাঁকে রাজীব যে কেন্দ্রীয় শাসক দলে ‘নিজের-লোক’ তৈরি করেননি, এমন ভাবা কখনই বাস্তবসম্মত নয়। এ রাজ্যে সরকার বা শাসকদলের সঙ্গে রাজীব কুমারের যতই ঘনিষ্ঠতা থাক, নিজের স্বার্থে বিজেপির সঙ্গে ‘বন্ধুত্ব’ করতেই পারেন তিনি। সুতরাং গ্রেফতার এড়াতে রাজীবের বিজেপির দ্বারস্থ হওয়ার খবর, জল্পনা নাও হতে পারে। অসমর্থিত সূত্রের খবর, উত্তরপ্রদেশ ও দিল্লির একটি লবি ধরে না’কি কথা হয়েছে। এমনকি রাজ্যের দুই শীর্ষনেতাকেও নামানোর চেষ্টা হয়েছে। এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনও তথ্য না থাকলেও, বিষয়টি একদমই অবাস্তব নয়।

আরও পড়ুন – রাজীব বাড়িতেই আইনি বৈঠকে ডুবে ?

এদিকে রাজীব কুমারকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে এখনও পর্যন্ত অনড় মনোভাবই CBI দেখাচ্ছে। পরিবেশ-পরিস্থিতি বদলে গেলে এই মনোভাব কতখানি বজায় থাকবে বলা মুশকিল। CBI-এর বক্তব্য একটাই, গত দু’বছর ধরে এই রাজীব কুমার সমানে খেলে চলেছেন CBI-এর সঙ্গে। নিজে একজন উচ্চ পুলিশ-পদাধিকারী হওয়া সত্ত্বেও একটি অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের তদন্তে সহযোগিতা করছেন না। প্রতিবারই দেখা গিয়েছে, তাঁকে তলব করা হলেই তিনি আদালতে চলে যাচ্ছেন তা ঠেকাতে। রাজীবের বাড়িতে CBI অফিসারদের শারীরিক নিগ্রহের বিষয়টিও CBI মাথায় রেখেছে।

এদিকে, একজন ADG-CIDকে কেন হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। এর উত্তরে CBI-এর বক্তব্য, এমন পরিস্থিতি রাজীবই তৈরি করেছেন তদন্তে টানা ‘অসহযোগিতা’ করে। তাই এখন প্রয়োজনবোধে তাঁকে গ্রেফতার করা ছাড়া বিকল্প কিছু নেই। CBI-এর বক্তব্য, এই রাজীব কুমার তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করে চলেছেন তাঁর বয়ানে। SIT-এর কাজ তিনি দেখতেন না বলে রাজীব দাবি করেছেন। কিন্তু CBI-এর কাছে তৎকালীন SIT-প্রধান রাজীবের অধস্তন অফিসাররা বারেবারেই বলেছেন, রাজীব কুমারের নির্দেশেই তাঁরা তদন্ত এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। সারদা- তদন্তে একটি ‘লাল-ডায়েরি’-র অস্তিত্বই অস্বীকার করেছেন রাজীব। অথচ সারদা-কর্ত্রী দেবযানী মুখোপাধ্যায় CBI-এর কাছে এই ডায়েরির কথা স্বীকার করেছেন। রাজীব কখনই এই প্রশ্নে CBI-কে সহযোগিতা করেননি বলে CBI আদালতেও জানিয়েছে। CBI-এর দাবি, বহু প্রশ্নের জবাব দেননি বলেই রাজীবকে হেফাজতে নেওয়া একান্তই দরকার। নাহলে সারদা-তদন্ত গুটিয়ে আনা মুশকিল।

আরও পড়ুন – এবার সম্ভবত ‘চেয়ার’ খোয়াতে চলেছেন রাজীব কুমার, জল্পনা তুঙ্গে

Previous articleরাজীবের সামনে এখন কোন কোন রাস্তা খোলা?
Next articleবিজেপিকে ধাক্কা দিয়ে অর্জুন-আত্মীয়কে ঘরে ফেরালো তৃণমূল