Sunday, December 28, 2025

মহালয়ার ভোরে গান

Date:

Share post:

মহিষাসুরমর্দিনী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে আকাশবাণী বা অল ইন্ডিয়া রেডিও তে সম্প্রচারিত একটি বাঙালি প্রভাতী বেতার অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠান দেবী চণ্ডীর স্তোত্র বা চণ্ডীপাঠ, বাংলা ভক্তিগীতি, ধ্রুপদী সংগীত এবং পৌরাণিক কাহিনীর নাট্যরূপ। প্রতি বছর মহালয়ার ভোরে এই অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হয়। এই মহালয়ার পুণ্য লগ্নে শিশির-ভেজা মৃদু শীতল ভোরে প্রায় প্রত্যেক বাঙালি জেগে ওঠেন এবং ” মহিষাসুরমর্দিনী ” সম্প্রচার শুনবার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকেন।

পৌরাণিক পটভূমিতে আধারিত এবং বৈদিক মন্ত্র সমন্বিত হওয়া সত্বেও এই অনুষ্ঠানটি একটি অতুল্য অদ্বিতীয় সৃষ্টি। এর রচনা করেছেন বাণীকুমার ভট্টাচার্য বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র করেছেন পাঠ এবং দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় (জাগো দুর্গা দশপ্রহরণধারিণী), মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় (তব অচিন্ত্য), সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, আরতী মুখোপাধ্যায়, উৎপলা সেন (শান্তি দিলে ভরি), শ্যামল মিত্র (শুভ্র শঙ্খ রবে), এবং সুপৃতি ঘোষ (বাজলো তোমার আলোর বেণু), তাঁদের মধুর স্বরে গান গেয়েছেন। সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন পঙ্ককজ কুমার মল্লিক। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শঙ্খধ্বনিতে আকাশ বাতাস মুখর হয়ে ওঠে।

১৩৩৯ বঙ্গাব্দের আশ্বিনে প্রথম প্রচারিত হয় অনুষ্ঠানটি, কিন্তু তখন এর নাম ছিল ” শারদ বন্দনা “।
উদাত্ত কন্ঠে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মন্ত্রপাঠ শারদ আকাশে মহালয়ার প্রভাতকে করে তোলে আবেগময় ও হৃদয়গ্রাহী। পূজার আনন্দে মেতে ওঠে সারা বিশ্ববাসী। শঙ্খ ঘন্টা আর ঢাকের তালে তালে বিশ্ববাসী শক্তির আরাধনায় রত হয়।

এই প্রসঙ্গে আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে দুটো কথা আমি বলতে পারি যে মহালয়ার ভোরে ওঠে মহালয়ার গান শোনা বা স্তোত্র পাঠ শুনে তাতে অবগাহন করা আজও সারা শরীরকে হরষিত করে তোলে। আজও বাড়ির পুরনো রেডিওটা সারা বছর ধরে ঘরের এক কোণে পড়ে থাকলেও মহালয়ার আগের দিন তার কদর বাড়ে।তাকে নতুন সাজে সাজিয়ে তোলা হয়।ধুলো ঝেড়ে টিউনিং করাতে নিয়ে যাওয়া হয় মিস্ত্রির কাছে। টেলিভিশন এর রমরমাতেও মহালয়ার ভোরে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের মহিষাসুরমর্দিনী শুনতে সেই রেডিও ছাড়া তো নেই অন্য কিছুই।

এই অভিজ্ঞতা শিশুকাল থেকে মাতা-পিতার সাহচর্য অর্জন করে এসেছি। আশা করি আগামী দিনেও মহালয়ার ভোরে উঠে মহালয়া শোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো। আজ ও টেলিভিশনের অনুষ্ঠান, দৃশ্য মাধ্যমের আকর্ষণ ফিকে হয়ে যায় কথা ও সুরের এই আশ্চর্য মহাকাব্যিক সৃজনের কাছে। মহালয়ার ভোরে রেডিওর সেই সুর শুনতে বছরভর বিশেষত অপেক্ষায় থাকেন প্রবীণেরা। তাতে ফিরে আসে ছোটবেলার স্মৃতি অনেকেই বলেন ” তখন সব বাড়িতে টেলিভিশন তো দূরের কথা, ছিলনা রেডিও। বসতির কোন এক বাড়িতে ভোরে গিয়ে একসঙ্গে সবাই মিলে শোনা হতো সেই হৃদয়ছোঁয়া মন্ত্রোচ্চারণ কালজয়ী একের পর এক গান। ”

আরও পড়ুন-মহালয়াতে কেন তর্পণ

 

spot_img

Related articles

‘ভূমিকম্পের আগে’, উৎপল সিনহার কলম 

বাইরে আমি হিরো হলেও ঘরে কুনো ব্যাঙ... কুনো ব্যাঙকে নিয়ে যারা মজা-মস্করা করেন তাঁদের এবার একটু সতর্ক হওয়া উচিত। কেননা...

বিষ্ণুপুরের জিতের অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা, অভিনেতা মঞ্চ ছাড়তেই ভাঙচুর শুরু

৩৮তম বিষ্ণুপুর মেলায় (Bishnupur Mela) সুপারস্টার অভিনেতা জিতের (Jeet) অনুষ্ঠান ঘিরে বিশৃঙ্খলা। টলিউড তারকাকে দেখতে ভিড় এতটাই বেড়ে...

উইক এন্ডে রোজগার দ্বিগুণ, অন্ধ্রপ্রদেশে কুমোররাও খুঁজে পেয়েছেন নতুন পথ

এ যেন কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা। যে তথ্য প্রযুক্তি একসময় গ্রামের যুবকদের গ্রাম ছাড়া করেছিল, ভুলিয়ে দিয়েছিল পূর্বপুরুষের...

খালেদার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি, অতি সংকটজনক পরিস্থিতি বলছেন চিকিৎসকরা

অতি সংকটজনক বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া Former Prime Minister of Bangladesh and BNP Chairperson...