ঢাকের বাদ্যে মাতোয়ারা শিয়ালদহ স্টেশন! বায়নার অপেক্ষায় ঢাকিরা

শুরু হয়ে গেছে উৎসব। জ্বলে উঠেছে আলো। অভিনব মন্ডপ আর চিন্ময়ী মায়ের মৃন্ময়ী রূপে মাতোয়ারা আপামর বাঙালি। মহা পঞ্চমীর সকাল থেকেই মহানগরে মানুষের ঢল। নতুন পোশাকে রকমারি পোশাকে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে খুশির জোয়ার। আট থেকে আশির ক্লান্তিহীন সেলিব্রেশন। কিন্তু যাদের না হলে এই পুজো অসম্পূর্ণ, তাঁরা কেমন আছেন? মহালয়ার পর থেকেই দূর-দূরান্তের জেলা থেকে শিয়ালদা স্টেশনে আশ্রয় নেয় তারা। অপেক্ষা থাকে বায়নার। কখন আসবে শহর ও শহরতলীর পুজো কমিটিগুলির কর্মকর্তারা, আর ভাড়া করে নিয়ে যাবে তাদের। কেউ ভাড়া পায়, কেউ আবার অপেক্ষায় থাকে।

এভাবেই মহা পঞ্চমীর দিনও ঢাকিদের ঢাকের বাদ্যে মেতে উঠেছে শিয়ালদহ স্টেশন। যে শব্দটা বারবার করে জানান দেয় মা দুর্গার আগমনের, যেটা না শুনলে ওই পুজো পুজো আমেজটাই আসেনা। যাঁদের হাতের বোল ছাড়া সম্পূর্ণ হয় না মা দুর্গার আরাধনা। শুধু ঢাক নয়, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া বর্ধমান থেকে কতগুলি দল এসেছে কুরকুড়ি, চড়বড়ি নিয়েও। দশমী পর্যন্ত ভাড়া ৫ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। পঞ্চমীতে ঢাকিদের ভিড় জমেছে শিয়ালদহ স্টেশন চত্বরে, আর তাঁদের নিয়ে যেতে ভিড় জমিয়েছেন পুজো কমিটির সদস্যরাও।

এদিকে, ঢাকের আওয়াজে যখন পুজো গমগমে, সবাই যখন পরিবারের সঙ্গে আনন্দে মশগুল, তখন তাঁরা বাড়ি থেকে অনেক দূরে কোনও এক অচেনা পরিবেশে ব্যস্ত থাকে মাতৃ প্রতিমার সামনে ঢাক বাজাতে । পরিবারের সঙ্গে পুজো কাটানোর অভিজ্ঞতাটা পান না তাঁরা । মহালয়ার পরেই রোজগারের আশায় তারা চলে আসেন কলকাতা শহরে । পুজোর বায়না না হওয়া পর্যন্ত এদের বাসস্থান শিয়ালদহ প্লাটফর্মেই । মাঝে মাঝে ঢাক বাজিয়ে জানান দেন নিজেদের উপস্থিতি। এই ঢাকিদের দলে থাকে ৮ বছর, ১০ বছর, ১২ বছরের ছেলে মেয়েরাও। বাবার হাত ধরে আসে রোজগারের আশায়।

এদিন যেমন বায়নার অপেক্ষায় বসে আছেন কানাই দাস, সঙ্গে ক্লাস টুয়ে পড়া ছেলে সৌম্য দাস। এসেছেন বিষ্ণু ঢালি, গণেশ ঘরামী, পঞ্চু বিশ্বাসের মত আরও অনেকে । কানাই দাস বলেন, সারাবছর চাষের কাজ করেন । পুজোর সময় ঢাক নিয়ে বেরিয়ে পড়েন । পুজোয় সবাই আনন্দ করে । কিন্তু তাঁদের চলে আসতে হয় পরিবার ছেড়ে। এবার সঙ্গে করে নিয়ে আসছেন ৮ বছরের ছেলেটিকেও। বংশপরম্পরায় এটা হয়ে আসছে।

ওরা যেমন মাতৃ আরাধনায় বংশপরম্পরায় ঢাক বাজিয়ে আসছে, ঠিক একইভাবে বছরের পর বছর ধরে শিয়ালদহ স্টেশন জমে উঠে ঢাকের তালে। অতীতে ছিল, বর্তমানে আছে, আগামীতেও তাই হবে। আসলে ওদের ছাড়া যে দুর্গাপুজো অসম্পূর্ণ!

আরও পড়ুন-রাজীব কুমারের আগাম জামিন সুনিশ্চিত

 

Previous articleকেন্দ্রের থেকে 41 হাজার কোটি টাকার বকেয়া পেতে দাবিপত্র তৈরি করছে রাজ্য
Next articleজানেন নবপত্রিকার সাতকাহন?