উঁচু পাঁচিলের মধ্যে উৎসবের আনন্দ

জেল হয়েছে সংশোধনাগার। বন্দিরা হয়েছেন আবাসিক। তাই খোলা হাওয়া লেগেছে সংশোধনাগারের অন্দরেও। সেখানেই দুর্গাপুজো, নতুন জামা, পেট পুরে ভোগ। উৎসবের পাঁচদিন বাড়িতে না থেকেও দুর্গা পুজোর আনন্দ মাতেন বীরভূমের সিউড়ি জেলা সংশোধনাগার আবাসিকরা।

প্রায় দুই শতক আগে তৈরি হয় এই সংশোধনাগারটি। আর দুর্গাপুজো শুরু হয়েছিল সেই ইংরেজ আমলে। কয়েকজন স্বদেশী আন্দোলনকারীর হাত ধরে। অনেক বাধা পেরিয়ে সেই ধারা চলে আসছে। সংশোধনাগারের ভিতরেই প্যান্ডেল করে দুর্গাপুজা। সঙ্গে সুন্দর আলোকসজ্জা। এক সাজা প্রাপ্ত আসামী পুজো করেন। উপরিপাওনা বাউল গান থেকে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ বছর দুদিন বাউল গানের পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করবেন আবাসিকরা। তাছাড়াও তাঁদের মধ্যেই ধুনুচি নাচ, মোমবাতি জ্বালানো প্রতিযোগিতায হবে। পিছিয়ে নেই মহিলা আবাসিকরাও। এবছর তাঁদের শঙ্খ বাজানো, উলুধ্বনি প্রতিযোগিতা হবে। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়।
এই কদিন একটু বাড়তি নজর দেওয়া হয় খাবারের মেনুতে। সপ্তমীর দিন সকালে টিফিন দেওয়া হবে বোঁদে এবং মুড়ি। দুপুরে চিলি চিকেন, ফ্রাইড রাইস এবং রাতে ডিম, সবজি, ভাত। অষ্টমীর দিন সকালে লুচি এবং কুমড়োর তরকারি। দুপুরের গোবিন্দ ভোগ চালের খিচুড়ি, বেগুনি, সবজি এবং পায়েস। নবমীর দিন দুপুরে খাসির মাংস, ভাত, সবজি এবং দশমীর দিন দুপুরে মাছ, সবজি, ভাত, মিষ্টি দই, পাপড় থাকছে আবাসিকদের জন্য। এখন 610 জন পুরুষ এবং 40 জন মহিলা রয়েছেন সেখানে। তাঁদের মধ্যে 108 জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ও 42 জন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি।
সিউড়ি সংশোধনাগারের ভিতরে পুজো শুরু হয় ইংরেজ আমলে। স্বাধীনতা সংগ্রামী শরৎকুমার মুখোপাধ্যায় স্বদেশী আন্দোলন করতে গিয়ে কারারুদ্ধ হয়ে সেখানে যান। তিনি তাঁর কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে জেলের ভিতর পুজো শুরু করেন। ইতিমধ্যেই 1947 সালে স্বাধীনতার পরে সিউড়ি সংশোধনাগার থেকে মুক্তি পান স্বাধীনতা সংগ্রামীরা। আর সংশোধনাগারের ভিতরে সেই পুজো বন্ধ হয়ে যায়। মাঝেমধ্যে কয়েকবছর পুজো হলেও 2004 সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে পুজো শুরু হয় যা আজও চলছে।
বীরভূম জেলা সিউড়ি সংশোধনাগারের জেলার আব্দুল্লাহ কামাল বলেন,” এই পুজো ক’দিন বাইরের পুজো থেকে কোন অংশে কম না।”

Previous articleবন্দে ভারত এক্সপ্রেসের যাত্রা শুরু
Next articleসিপিএমের ভাল উদ্যোগ, শারদীয়া বুকস্টলেই চলছে ভোটার পরিচয় যাচাই শিবির