অবিবাহিত কেন? নিজেই খোলাখুলি জানালেন নস্টালজিক দিলীপ ঘোষ

সকলকে বিজয়ার প্রণাম আর শুভেচ্ছা। আশা করি ভালই কাটল পুজো। বৃষ্টি একটু বাধ সেধেছে। কিন্তু সব মিলিয়ে জনতার ঢল প্রমাণ করে দিয়েছে, বাংলার মানুষের আনন্দ কেড়ে নিতে পারেনি প্রকৃতি। এটাই তো বাংলার কৃষ্টি-সংস্কৃতি। এর জন্যই তো বাংলা অনন্য, অনবদ্য। বাংলার মানুষকে এই কারনে আমার সহস্র কুর্নিশ।

দিলীপ ঘোষের বাড়ি

পুজো বললেই অন্য অনেকের মতো আমার ছোটবেলার স্মৃতি মাথার মধ্যে বারবার ঘুরে ফিরে আসে। সুবর্ণরেখা নদীর ধারে কুলিয়ানায় আমার জন্ম। বাবা-মায়ের আমি দ্বিতীয় সন্তান। কিন্তু আমার আট বছর বয়সে মামা বাড়ি চলে যাই।

দিলীপ ঘোষের মা

গ্রামের লোক আমায় নাড়ু নামেই চেনে। সেখান থেকেই স্কুল জীবন। স্কুল মানে তো অনেক স্মৃতি। স্কুল-বন্ধুদের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ আছে। গ্রামে গেলেই খাওয়া-দাওয়া আর জমিয়ে আড্ডা এখনও হয়। নিজের শিকড়কে কখনও ভুলে যাওয়া যায় নাকি! স্কুলের বদমায়েশি, শিক্ষকের মার, কুল চুরি, ফুল চুরি, এসব যেন মনে হয় এই তো সেদিন ঘটল। যদিও আমি কিন্তু একটু শান্ত প্রকৃতির ছিলাম। আমাকে নিয়ে বা চার ভাইকে নিয়ে বাবা-মাকে কোনও অভিযোগ কোনওদিন শুনতে হয়নি। তবে গ্রামের বাড়িতে তাল কুড়ানো আর সে দিয়ে মায়ের হাতে (পুষ্পলতা ঘোষ) তালের পিঠে, সরু চাকলি, শীতের গুড় পিঠে এখন খুব মিস করি। মিস করি সুবর্ণরেখায় মাছ ধরা, সাঁতার কাটা। আর হ্যাঁ, অবশ্যই পান্তা ভাত। ব্যস্ততা অনেক কিছু কেড়ে নেয়। আর স্মৃতি তখন তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়।

দিলীপ ঘোষের শিক্ষক

আনন্দ মামা স্কুলের টিচার ছিলেন। আনন্দ কুইল্যা। মারা গিয়েছেন। আরএসএস করতেন। ওনার সঙ্গে ঘুরতাম। উনি দিদির বাড়ি গেলেও আমাকে নিয়ে যেতেন। ঘুরতে ঘুরতে কবে যেন ওই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে গিয়েছি। মানুষটার অভাব আজও অনুভব করি। আজকের দিনটা তো ওনারই প্রাপ্য।

স্কুল পেরিয়ে কলেজে ভর্তি হলাম কমার্স নিয়ে। ওটা পড়লাম না। ঝাড়গ্রাম আইটিআইতে ভর্তি হলাম। কলেজে পড়ার সময় পুজোর কত দায়িত্ব সামলেছি। ভক্তিভরে অঞ্জলি দিতাম। আচার মানতাম। বন্ধুদের সঙ্গে রাত জেগে প্যান্ডেল পাহারার রোম্যান্টিসিজমই আলাদা। ওরা গ্রামে গেলে দেখা করে। তবে আমার ছবি তোলার অভ্যাসটা একদম ছিল না। এখনও নেই। ফলে অনেক স্মৃতিই আর ফ্রেমবন্দি করে রাখতে পারিনি। সে সময়ে সঙ্ঘ করার ছবিও বোধহয় নেই।

দিলীপ ঘোষের বন্ধু

একটা ঘটনার কথা এ সময়ে মনে পড়ছে। এক দুপুরে বন্ধুরা মিলে ঠিক করলাম আমরা হাতিবেড়া দিয়ে নদী পার হব। চওড়া প্রায় হাফ কিলোমিটার। পেরিয়ে গেলাম। ওদিকে ভাত খাওয়ার জন্য ডাক পড়েছে। তাই সময় নষ্ট না করে নেমে পড়লাম ফের নদী পেরোতে। হাঁপাতে হাঁপাতে নদী তো পেরলাম। পিছনে ফিরে দেখি, আমার বন্ধু বিষ্ণুপদ আর পারছে না। জল খেতে শুরু করেছে। কাকে ডাকব? সকলে ক্লান্ত। আমিও। কিন্তু বিষ্ণুকে বাঁচাতে হবে। ঝাঁপালাম। ওকে তুলে আনলাম। উফ, জীবনে ভয় কাকে বলে সেটা সেদিন বুঝেছিলাম।

দিলীপ ঘোষের বন্ধু

আমাদের ১৫টা গ্রাম নিয়ে এলাকায় আরএসএস শুরু। মামা মুখ্য শিক্ষক ছিলেন। পরে আমি দায়িত্ব পাই। ফলে নিয়মানুবর্তিতা তখন থেকেই জীবনে ঢুকে যায়। তবে সাহসটা আমার একটু বেশিই ছিল। সেটাই এখন আমার বর্তমানকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।

আইটিআই পাস করে কলকাতায় এলাম। মহিন্দ্র অ্যান্ড মহিন্দ্রতে দু’বছরের অ্যাপ্রেন্টিস করলাম। চাকরি পেলাম, তবে মুম্বইতে। কিন্তু গেলাম না। সোজা বাড়ি। বড়দা (মুরারী ঘোষ) বললেন, চাকরি ছেড়ে এলে কেন? বললাম, চাকরি নয়, আমি, আরএসএস করব। বড়দার প্রশ্ন — ভবিষ্যত? সে দেখা যাবে। ব্যাস আমার সঙ্ঘজীবন শুরু।

ভারতের পাঁচটা রাজ্যে আমি দীর্ঘদিন সংঘের কাজ করেছি। সবচেয়ে বেশি থেকেছি আন্দামানে। প্রায় সাড়ে আট বছর। বলতে পারা যায় এলাকাটার নাড়িনক্ষত্র আমার চোখের সামনে ভাসে। দল যা দায়িত্ব দিয়েছে পালন করার চেষ্টা করছি। তার মধ্যেও পুজো ব্যাপারটা অন্য এক আনন্দ বয়ে নিয়ে আসে। এই তো এবার প্রায় ৫০টা পুজোর উদ্বোধন করেছি। যেখানে সুযোগ পেয়েছি, অঞ্জলি দিয়েছি। তবে অষ্টমীতে আমি চলে গিয়েছিলাম আন্দামানে। পুজো কাটিয়ে ফিরলাম। দারুন কাটল। চেনা মানুষ, পুরনো ঘর, দালান, মাঠ, আখড়া, দারুন নস্টালজিয়ায় কাটল দুটো দিন।

দিলীপ ঘোষের বড়দা
দিলীপ ঘোষের ছোট ভাই

বিজয়া বাঙালির ঐতিহ্য। এখানে রাজনীতির কোনও ছোঁয়া থাকা উচিত নয়, আমি অন্তত রাখি না। এই তো দলের বাইরে অন্যদের সঙ্গেও বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময় হল। এটাই তো বাঙালির রীতি। পরে দেখা হলেও করব। সকলে ভাল থাকুন, ভাল রাখুন। বাংলার ভাল হোক।

সবশেষে বলি অনেকে বলেন, দিলীপবাবু আপনি বিয়ে কেন করলেন না? তাদের বলি, বিশ্বাস করুন, সঙ্ঘের কাজ, ব্যস্ততা, নিয়মানুবর্তিতা সব মিলিয়ে ব্যক্তি জীবনে নিজেকে জড়াতে পারিনি। যেটা হয়নি, সে নিয়ে আর ভাবার সময় নেই। এখন সামনে ব্যস্ততা, বড় দায়িত্ব। আপনাদের সকলের আশীর্বাদ চাইছি।

দিলীপ ঘোষ
দিলীপ ঘোষ
দিলীপ ঘোষ
Previous articleসাহিত্যে এবার নোবেল বিজেতা অস্ট্রিয়ার পিটার হান্ডকে
Next articleব্রেকফাস্ট নিউজ