শাহরুখ একটি দেশের নাম

ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ

১৯৮৮ সালে পুরনো দিল্লি থেকে একজন ফের আরব সাগর তীরে এসেছিল। বিয়ে শাদি হয়ে যাওয়া, মাসকমে এম.এ পাশ, সামান্য নাটক করা এক ছেলে। মোটেও ভালো দেখতে না। শ্যামবর্ণ, গালে টোল আছে। মুম্বাইয়ের মেরিন ড্রাইভ এলাকার ঠিক মাঝে যেখান থেকে সমুদ্র আর চারপাশ সমুদ্ররানীর নেকলেসের মতো লাগে, ঠিক সেখানে দাঁড়িয়ে ছেলেটা সেদিন বলেছিল, একদিন আমি এই গোটা শহর রাজ করবো৷ এই এখানে বাড়ি করবো, ওইখানে থাকবে অফিস। পাগলের প্রলাপ গুটিকয়েক বন্ধু শুনেছিল শুধু।

২০১৯ এ এসে সেই ছেলেটি একটা গোটা দেশে পরিনত। যার নিজের প্রজা আছে, দেশ বিদেশে নাগরিক আছে, মানুষ আছে যারা ভাবে শাহরুখ একটি দেশের নাম। আর হ্যাঁ, সমুদ্র পারে একটা বাড়ি ও আছে, সেটা বাড়ি কম, তীর্থস্থান বেশি। লোকে একবার অন্তত চোখের দেখা দেখে যায়, ছবি তোলে একটা সাইনবোর্ডের সাথে। নাম মন্নত। ল্যান্ডস এন্ড৷ মানে ও বাড়ির পরে জমি শেষ। সমুদ্র শুরু৷

ওই মন্নতের সামনে বম্বে থাকাকালীন দেখেছি, কত স্বপ্ন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে, কত স্বপ্ন চুরমার হতে। রোজ কম করে ২০জনকে দেখা যায় ওখানে যারা নিজের ছবি, পোর্টফলিও নিয়ে বসে থাকে একবার যদি কোন পরিচালক শাহরুখের বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় তাকে ডেকে নেয়, অডিশন দিতে বলে৷ রোজ মন্নতের গেটে মধ্যরাতে দেখেছি গোলাপ পরে থাকতে৷ হয়তো কোন মেয়ে রেখে গেছে বা এসিডদগ্ধ কোন হাত যাকে বাঁচার রসদ জুগিয়েছে কিং খান৷

Sex & Shahrukh Khan sells. অর্থাৎ আপনি যাহাই বানান না কেন, তাতে এই দুই মশলা মাখায়ে দ্যান। পাবলিক আজ ও খাবে৷ পাঠকগন, পাবলিক মানে এখানে কিন্তু আফগানিস্তান থেকে আলাবামা। আজ্ঞে৷ পৃথিবীর মানচিত্রে এরকম অনেক দেশ আছে যেখানে গিয়ে আপনি নিজের দেশের নাম বললে, সবার আগে সে দেশের ট্যাক্সি ড্রাইভার বলবে, ও ল্যান্ড অফ শাহরুখ খান! ছাইয়া ছাইয়া!

ভারতে যারা মূলধারার ছবিদেখিয়ে তাঁরা শেষ শাহরুখের কোন ছবিটি পাতে বা অস্কারে দেওয়ার যোগ্য তার বিতর্ক থোড়াই কেয়ার করে। ভারতে ছবির মাপকাঠি ঠিক হয় ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া’ পূর্ব ও পরবর্তী।

শাহরুখ একটি দেশের নাম। যে দেশের ওপর ২০০০ কোটি টাকা বিভিন্ন মানুষ বিনিয়োগ করে রেখেছে। একবার হাত তুলে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য, শেষ বার কারোর মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার জন্য, ছবি করার জন্য, ফিতে কাটার জন্য বা স্রেফ স্রেফ একটি বার বলার জন্য। “রাহুল৷ নাম তো সুনা হোগা।”

যে ছেলেটি স্কুললাইফ থেকে জেল দিয়ে ব্যাকব্রাশ করে, হাত দিয়ে চুল কপালের থেকে সরিয়ে নেয়, একলা ঘরে আয়নার সামনে দু হাত ছড়িয়ে আকাশের দিকে তোলে আর ক্রমাগত গালের টোল থাকুক বা না থাকুক ফ্রেম বাই ফ্রেম মুচকি হাসে ঘাড় নাড়িয়ে, খোঁজ নিয়ে দেখুন সে শাহরুখ খান নামক দেশের নাগরিক।

যে মেয়েটি একবার অন্তত জীবনে “Mere Khwabo mein jo aaye” একলা ঘরে তোয়ালে চেপে নেচেছে, যে রোজ রাতে “Dil Se” দেখে ভেবেছে ওর নিশ্বাসে ও যদি ওভাবে কেউ নিশ্বাস নিত আর পেছনে গান চলতো “Aye ajnabi tu bhi kabhi”, যার ঘরে আজ ও খুঁজলে হয়তো মিলবে কোন হলদে হয়ে যাওয়া পোস্টার, তার নাম শম্পা, সাবিত্রী, চম্পা, চামেলি যাই হোক না কেন, সে আসলে সিমরন, যাকে zindegi বাঁচতে শিখিয়ে দিয়ে গেছে একটা দেশ। নাম শাহরুখ খান।

শাহরুখ খান সে যে বেকারত্বের ঘা, আধপেটা মানুষের রাগ, নিয়মিত হেরে যাওয়া মানুষকে ও ” চক দে ইন্ডিয়ার” কবীর খান ভাবতে শিখিয়েছে। আত্মঘাতী হতে চাওয়া কেউ কাল্পনিক ৭০মিনিট আরো পেয়েছে জীবনের থেকে আর একবার ট্রাই করতে৷

১৯৯২ সালের বাবরি মসজিদ থেকে ২০১৮ সালের রাম মন্দির অবধি একটা জিনিসই টানা চলে আসছে এ দেশে। যখন ভাই ভাইকে খুন করছে ধর্ম ধর্ম খেলতে গিয়ে তখন প্রেমের কথা বলতে, যখন চাকরি নেই, নেতা মন্ত্রী কোটি কোটি টাকা মেরে দিচ্ছে তখন বাঁচার গল্প বলতে, প্রেমে ধাক্কা খাওয়ার পরে কপালে কাল্পনিক চুমু খেয়ে যেতে, ভীষণ মনখারাপে একটা আশাবাদী রোদ্দুরের মন্নত করতে৷ সে শাহরুখ খান। একটি দেশের নাম।

৩০ বছর ধরে রোজ আপনার টিভির পর্দায় বা সিনেমার অন্ধকারে সে আসে, হাত তুলে একটিবার দাঁড়ায় আপনার সামনে, চোখে চোখ রাখে, উজ্জ্বল দুষ্টুমি ভরা এক চোখ, লালচে ঠোঁটে চোখ যায় আপনার, সামান্য কম্পন হচ্ছে, এবার মুচকি হাসলো, গালের কোলে টোল পরেছে ওর৷ চারিদিকে ঝলমলে আলো, প্রচুর ছেলেমেয়ে এক জামা পরে একদিক ওদিকে নাচছে, সিনেমায় যেমন হয়। আপনি হাঁ করে দাঁড়িয়ে কেন? সকলে সমস্বরে জন্মদিন বলুন। নয়তো happyzzz endingzzz হবে কি করে?
(ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত)

Previous articleরাখির সঙ্গে অভিনয়ে অভিভূত শিক্ষিকা কী বলছেন?
Next articleশিবাজি পার্কে মুখ্যমন্ত্রীর শপথ নেবেন আদিত্য ঠাকরেই: শিবসেনা