ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথমবার গণ- আন্দোলনের মুখে মোদি- শাহ

নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ- বিক্ষোভের পরিধি ক্রমশই বড় হচ্ছে৷ বৃহস্পতিবার এই আইনের প্রতিবাদে পথে নেমেছেন দেশের 10টি রাজ্যের সাধারন মানুষ৷ বিলের প্রতিবাদে দেশের মানুষের এই বিক্ষোভ অষ্টম দিনে পা দিয়েছে৷
2014 সালে ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথমবার এত বড় মাপের আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ এবং প্রথমবারই জনতার স্বত:স্ফূর্ত আন্দোলন সামাল দিতে ব্যর্থ মোদি-শাহ৷ নাগরিকত্ব আইন নিয়ে কেন্দ্রের দাবি,
2014-এর আগে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসা আসা অ-মুসলিম মানুষদের নাগরিকত্ব দেওয়ার পথ সহজ করা হয়েছে৷ সাধারন মানুষের বক্তব্য,
নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে জাতপাতকে বিবেচনার মধ্যে আনায়, ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের মর্যাদাকেই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলা হয়েছে।

নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে পথে নেমেছেন কার্যত গোটা দেশ৷ উত্তরপ্রদেশ, কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশ, দিল্লি কার্যত অবরুদ্ধ ছিলো বৃহস্পতিবার। কোনও রাজ্যেই বিক্ষোভের অনুমতি ছিলনা, তাতেও ঠেকানো যায়নি৷ পুলিশের গুলিতে মেঙ্গালুরুতে 2জন এবং লখনউতে 1জনের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে৷ ওদিকে, পুরো পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জরুরি বৈঠক ডেকেছেন৷ এই বৈঠকে নাকি ডাকা হয়েছে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালকেও৷

◾কলকাতায় CAA এবং NRC নিয়ে রাষ্ট্রসংঘের নজরদারিতে গণভোটের দাবি তুলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উদ্দেশ্যেই মমতা বলেছেন, “রাষ্ট্রসংঘের নজরদারিতে
একটা গণভোট করা হোক। আপনাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, তাই বলে আপনারা যা খুশি করতে পারেন না। সব কিছুতেই ভয় দেখাচ্ছেন৷”

◾দিল্লিতে বড় জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় কয়েকশো বিক্ষোভকারী এবং বিরোধী নেতাদের আটক করা হয়। দিল্লিতে মাণ্ডি হাউস এবং লালকেল্লার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে বহু বিক্ষোভকারীকে আটক করে পুলিশ। আটকদের তালিকায় রয়েছেন বিরোধী নেতা ডি রাজা, সীতারাম ইয়েচুরি, নীলোৎপল বসু, বৃন্দা কারাত, অজয় মাকেন, সন্দীপ দীক্ষিত এবং শিক্ষাবিদ ও রাজনতিক যোগেন্দ্র যাদব ও উমর খালিদ। শহরের যান চলাচল ঘুরিয়ে দেওয়া হয়৷ এবং 20টি মেট্রো স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় ভয়েস, ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷
মাণ্ডি হাউস, সিলমপুর, জাফরবাদ, মুস্তাফাবাদ, জামিয়ানগর, শহিন বাগ এবং বাওয়ানা এলাকায় পরিষেবা ব্যহত হয়। রাহুল গান্ধী এক ট্যুইটে বলেছেন, “কলেজ, টেলিফোন এবং ইন্টারনেট বন্ধ করার কোনও অধিকার নেই সরকারের৷ শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ বন্ধ করতে এবং ভারতের কণ্ঠরোধ করতে 144 ধারা জারি করারও কোনও অধিকার নেই সরকারের। এটি ভারতের আত্মার অপমান”।

◾দিল্লি-হরিয়ানা সীমানাও বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ দিল্লির প্রতিবেশী রাজ্য হরিয়ানা থেকে দিল্লিতে ঢোকার চেষ্টা করে বিক্ষোভকারীরা৷ ফলে বন্ধ করে দেওয়া হয় সীমানা ফলে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। আটকে পড়েন বিমানবন্দরমুখী যাত্রীরা৷ 15টি বেশি উড়ান দেরিতে ওড়ে।

◾বেঙ্গালুরুতে একটি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলার সময়ে ঐতিহাসিক রামচন্দ্র গুহকে আটক করা হয়৷
◾লখনউ এবং আহমেদাবাদে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়।

◾মেঙ্গালুরুতে জারি করা হয় কারফিউ, সেখানে প্রকাশ্যে গুলি চালায় পুলিশ। অভিযোগ, পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে 2 জনের। ওদিকে “গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ না করার জন্য” পুলিশকে অনুরোধ করেন অভিনেতা রাজনীতিবিদ কমল হাসান।

◾নরেন্দ্র মোদির বারাণসীতেও ব্যাপক বিক্ষোভ হয়।বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় বড় জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়৷ সেখানেও বিক্ষোভ হিংসাত্মক আকার নেয়। বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ, প্রায় 10টি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। ওদিকে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।

◾মুম্বইয়ের বিক্ষোভে অংশ গ্রহণ করেন প্রায় 15 হাজার মানুষ৷

◾চেন্নাইয়েও বিক্ষোভ হয়, যদিও বিক্ষোভের অনুমতি দেয়নি পুলিশ।

Previous articleব্রেকফাস্ট স্পোর্টস
Next articleঐতিহাসিক রামচন্দ্র গুহকে আটক করায় ‘বিস্মিত’ ইয়েদুরাপ্পা