বিজেপির দিল্লি-রেকর্ড খুব খারাপ,কণাদ দাশগুপ্তের কলম

কণাদ দাশগুপ্ত

দেশের রাজধানী দিল্লি৷

সেই ২০১৪ থেকে এখানেই ঘাঁটি গেড়েছেন দেশের নানা প্রান্ত থেকে জিতে আসা বিজেপি’র রথী-মহারথী নেতারা৷ মোদিজি, শাহজি তো আছেনই৷

মোদিজি ক্ষমতায় আসার পরের বছর, ২০১৫ সালে, দিল্লি বিধানসভার ভোট হয়েছিলো৷ তখনও ‘হনিমুন-পিরিয়ড’ কাটেনি৷ বিজেপি’র গায়ে তখনও নতুন বৌ-এর গন্ধ৷ সেবার মোদিজির একাধিক সভা সত্ত্বেও ৭০ আসনের দিল্লি বিধানসভায় বিজেপি পায় মাত্র ৩টি আসন৷ বাকি ৬৭ আসনই চলে যায় আম আদমি পার্টির দখলে৷ বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী প্রাক্তন আইপিএস কিরন বেদি এমন এক কেন্দ্রে আম আদমি প্রার্থীর কাছে ২৪০০ ভোটে পরাজিত হন, যে কেন্দ্রে বিজেপি নেতা হর্ষ বর্ধন পর পর ৫ বার জয়ী হয়েছিলেন৷ সেটাই ছিলো দিল্লির মসনদে আসার পর বিজেপির টাটকা প্রাপ্তি৷

দিল্লিতে কোনওদিনই বিজেপির রেকর্ড ভালো নয়৷ এই উপ-রাজ্যে বিজেপি-রাজ ছিল ২২ বছর আগে৷ তারপর থেকে বিজেপি কিছুতেই আর ক্ষমতার কাছাকাছি আসতে পারছে না৷ ইতিহাস বলছে, ১৯৫২ সালে দিল্লিতে বিধানসভা চালু হওয়ার পর কখনই বিজেপি টানা ৫ বছর শাসনক্ষমতায় টিঁকে থাকতে পারেনি৷ ১৯৫২ থেকে এ পর্যন্ত দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন ৭ জন৷ প্রথম মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন কংগ্রেসের চৌধুরি ব্রহ্মপ্রকাশ,দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রীও কংগ্রেসের, গুরমুখ নিহাল সিং৷ এরপর ১৯৫৬ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত বিলোপ ঘটানো হয় বিধানসভার৷ ১৯৯৩ সালে দিল্লি বিধানসভার নির্বাচনে জিতে মুখ্যমন্ত্রী হন বিজেপির মদনলাল খুরানা৷ পদে ছিলেন ২ বছর ৮৬ দিন৷ ১৯৯৬-তে মুখ্যমন্ত্রী হন বিজেপিরই সাহিব সিং বর্মা ৷ তিনি এই পদে থাকতে পেরেছেন ২ বছর ২২৮ দিন৷ দিল্লির পঞ্চম এবং প্রথম মহিলা-মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ১৯৯৮ সালের ১২ অক্টোবরে দায়িত্ব নেন বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজ৷ তাঁর কার্যকালের মেয়াদ ছিল মাত্র ৫২ দিন৷ সুষমা স্বরাজই দিল্লিতে বিজেপির আপাতত শেষ মুখ্যমন্ত্রী৷ সুষমা-বিদায়ের সঙ্গেই দিল্লিতে বিজেপি-রাজ খতম হয় ১৯৯৮ সালের ৩ ডিসেম্বর৷ সুষমা স্বরাজের পর ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা ১৫ বছর মুখ্যমন্ত্রী পদে ছিলেন কংগ্রেসের শীলা দীক্ষিত৷ আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়াল প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী পদে ছিলেন মাত্র ৪৯ দিন, ২০১৩-র ডিসেম্বরের শেষভাগ থেকে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি’র শুরু পর্যন্ত৷ ২০১৫-র নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফেরেন সেই কেজরিওয়াল৷ তখন থেকে দিল্লিতে টানা আপ-জমানা৷

সুতরাং দিল্লির এবারের নির্বাচন তাই বিজেপির কাছে অতীব গুরুত্বপূর্ন৷ এবারও দিল্লি হাতছাড়া হলে গোটা দেশেই বিজেপির ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠবে৷ এমনিতেই তো দখলে থাকা একের পর এক রাজ্য বিজেপির হাতছাড়া হচ্ছে৷ তার উপর এবারও যদি দেশের রাজধানী বিজেপির অধরা থাকে, তাহলে মোদি-শাহের বিশ্বাসযোগ্যতা বলতে কিছুই অবশিষ্ট থাকবেনা৷ ২০১৫ সালের দিল্লির ভোটে নরেন্দ্র মোদি দেশের প্রধানমন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও দলকে সাফল্য এনে দিতে পারেননি৷ দীর্ঘ ২২ বছর পর তাই মোদি-শাহ জুটি এবার ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া ৷

টিম মোদি-শাহ দিল্লিতে কার্যত বিশ্বযুদ্ধ বাঁধালেও আপাতত প্রকাশিত একটি ওপিনিয়ন-পোলও বলেনি যে এবার দিল্লিতে গেরুয়া-পতাকা উড়বে৷ তাই যদি হয় তাহলে ব্যর্থ হবে বিজেপির ২২ বছরের অপেক্ষা৷

এবং একইসঙ্গে আরও একবার সামনে আসবে নরেন্দ্র মোদি’র বিশ্বাসযোগ্যতার বিষয়টি৷

Previous articleনাইট রাইডার্স আর সেন্ট জেভিয়ার্স হলে আলাদা কথা ! অপূর্ব !! কুণাল ঘোষের কলম
Next articleবিয়েতে আপত্তি পরিবারের,কিশোরীকে খুন করে আত্মঘাতী যুবক