এরা কি বিচারব্যবস্থাকেও কব্জা করতে চাইছেন ?

গোবর দেওয়ালে লাগলে ঘুঁটে আর মাথায় ঢুকলে ‘ভক্ত’। বর্তমান সময়ে আমাদের দেশ এ ধরনের ভক্তদের পথ ও মতেই পরিচালিত হচ্ছে। ভক্তগন বলছেন, গোবর খেলে ক্যান্সার সারে, গোমূত্র তো সর্বরোগহরা। তাই নিয়ম করে গোবর মাখো আর গোমূত্রে স্নান করো। আজকাল এদের এই গোবর-সংস্কৃতির বিভিন্ন উপমা আমার নিয়মিত দেখতেও পাচ্ছি। এরা শুধু ধর্ম ও জাতের নামে মানুষ মেরেই খান্ত হয়না, শিক্ষায় নিজেদের মত ঢুকিয়ে, বদলে দেয় বিজ্ঞান দ্বারা প্রমানিত আধুনিকতার যাবতীয় সম্ভার। ধর্মান্ধতা ও উগ্রতাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে, বদলে দিতে চায় মানুষের সুস্থ মানসিকতা। এমনকি ঘৃনিত অপরাধ করার পর সেই অপরাধকেও ধর্মের মোড়কে ঢেকে মানুষকে বোকা বানাতে চায়।

আশঙ্কাকে সত্যি প্রমানিত করে আজ সকলেই জেনে গিয়েছেন যে, ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক অবস্থা বর্তমানে প্রায় তলানিতে। যে দেশটা ছয়-সাত বছর আগেও বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ আমেরিকা বা চীনের সাথে টক্কর দিয়ে চলতো, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগের একমাত্র লক্ষ্যবস্তু ছিলো যে দেশ, সেই দেশের অর্থনীতির বর্তমান হাল দেখে পাশ্ববর্তী ছোটো দেশগুলোও আজকাল হাসাহাসি করছে। বর্তমানে আমাদের কেন্দ্রীয় সরকারের এমনই হাল যে, দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে তৈরি ও রক্ষা করা দেশের মূল্যবান সম্পদগুলিকে বিক্রি করে বর্তমান সরকারকে খরচ চালাতে হচ্ছে। এবং তারপরেও সরকারের টনক নড়ছে না।

সম্প্রতি দেশের সুপ্রিম কোর্টে চলা একটি মামলা সম্পর্কে সংবাদমাধ্যমে যে খবর প্রকাশ হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে যে, সরকারি দফতর ও তার আধিকারিকরাও দেশের আদালতকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছেন। বিষয় এই যে, কয়েকটি মোবাইল কোম্পানির কাছে সরকারি পাওনার পরিমান একলক্ষ সাতচল্লিশ হাজার কোটি টাকা। এই পরিমান টাকা পেলে দেশের বর্তমান বেচারাম সরকার হয়তো দেশের কিছু মূল্যবান সম্পদ আরও কিছু সময় ধরে রাখতে পারতো। দেশের সুপ্রিম কোর্ট যখন মোবাইল কোম্পানিগুলিকে সেই টাকা দেওয়ার দেওয়ার নির্দিষ্ট সময় সীমা বেঁধে আদেশ দেন, তখন গোবরাসক্ত সরকারের এক আধিকারিক সেই আদেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজের মতো করে উল্টো নির্দেশিকা জারি করেন। আগেই বলেছি যে, বর্তমান সরকারের গোবর- সংস্কৃতির প্রভাবে দেশে বিজ্ঞান ও আধুনিক শিক্ষা আজ তলানিতে। সেই সংস্কৃতি যখন দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আদেশকেও রদ বা বদল করে দেয়, তখন সুস্থ ও শিক্ষিত মানুষের যে অভিব্যক্তি হতে পারে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা তাদের সেই মতই জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, “….. দেশে কি আইন বলে কিছু নেই? এ দেশে থাকার চেয়ে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়াই ভাল।” এসব জানা ও শোনার পরে দেশের সরকারে থাকা দল বা তার নেতাগোতাদের শরীরে কি এতটুকুও লজ্জাবোধ তৈরি হলো? নাকি তারাও চাইছেন, ওই সকল সুস্থ ও শিক্ষিত বিচারপতিদের তাড়িয়ে নিজেদের গোবর- সংস্কৃতির শিক্ষায় শিক্ষিত কিছু মানুষকে দিয়ে বিচারব্যবস্থাকেও কব্জা করতে? এসব জেনে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ অ-বিজেপি মানুষরাই বা কি ভাবছেন? আরও কতদিন সহ্য করবেন এদের? এদের ছোঁয়ায় দেশের আরও কোন কোন সম্পদ ধ্বংসপ্রাপ্তি হলে তবেই শাপমুক্তি ঘটবে ভারতবাসীর? যাদের বীরগাঁথা বিশ্বের মানুষের কাছে আদর্শ হিসাবে প্রমানিত, আরও একবার কি সেই জাতি রুখে দাঁড়াবে না?
আমি একা নই। আজ এ প্রশ্ন করছেন অনেকেই। রইলাম, উত্তর আসার অপেক্ষায়৷

◾লেখক: আইনজীবী৷ মতামত লেখকের৷

আরও পড়ুন-পদ্ম না ঘাস, এখন তিনি কোন ফুলে ? বিজেপি’র বৈঠকে অ-‘শোভন’ ছবি !

Previous articleবিধ্বংসী আগুন রাজাবাজারের চালপট্টিতে, ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা বহু
Next articleসিএএ,এনআরসি,এনপিআর-এর প্রতিবাদে বিক্ষোভে পাহাড়বাসী