করোনা-যুদ্ধ: মুখ্যমন্ত্রী কাকে বলে, দেখিয়ে দিলেন মমতা

সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন প্রায়শই একটা নতুন ঘরানার পোস্ট ঘুরছে। এবং সেটা অসংখ্য। বয়ান মোটামুটি এরকম- আমি আপনার বিরোধী। কিন্তু এই সঙ্কটে আপনি যেভাবে গোটা লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাতে আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

কমবেশি এই হল বক্তব্য। ফেসবুকে পরিচিতমুখ তৃণমূলবিরোধীরাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে এই মতামত দিচ্ছেন।

বস্তুত, মুখ্যমন্ত্রী কাকে বলে এবং এরকম বেনজির সঙ্কটে নেতৃত্ব দেওয়া কাকে বলে, দেখিয়ে দিচ্ছেন মমতা।

তাঁর ভূমিকার তাৎপর্য ঠিক কোথায় কোথায়?
1) এই যুদ্ধটাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে নিয়ে যাওয়া।
2) রাজনৈতিক বিরোধিতা থাকলেও এই ইস্যুতে কেন্দ্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করা।
3) দু একটা টেকনিকাল বিষয় ছাড়া এখন কেন্দ্রের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ না করা। সেটাও এই যুদ্ধেরই স্বার্থে।
4) রাজ্য প্রশাসনকে পুরোপুরি করোনা মোকাবিলায় নামানো।
5) যুদ্ধকালীন প্রস্তুতিতে কিছু হাসপাতালে বেড বাড়ানো; বাড়তি সরঞ্জামের ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া।
6) আতঙ্ক না ছড়িয়ে সতর্কতার জন্য ইতিবাচক প্রচার ধারাবাহিকভাবে চালানো।
7) লকডাউনসহ প্রশাসনিক ব্যবস্থা কড়া হাতে রূপায়ণ।
8) জরুরি পরিষেবাগুলি এখনও পর্যন্ত মসৃণ রাখা।
9) যারা অসংগঠিত, গরিব, আশ্রয়হীন, তাদের জন্য পদক্ষেপ।
10) বিনামূল্যে চালের ব্যবস্থা।
11) জরুরি পরিষেবার কর্মীদের জন্য বীমা করে দেওয়া।
12) আপাতত 200 কোটি টাকার জরুরি তহবিল গঠন করা।

সবচেয়ে বড় কথা নিজে সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দেওয়া। পরের পর বৈঠক। কখনও প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে, কখনও কেন্দ্র- রাজ্য অফিসাররা, কখনও ময়দানের ক্লাব, কখনও সরকারি বেসরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রের প্রতিনিধিরা, কখনও সর্বদল বৈঠক। উদয়াস্ত পরিশ্রম ও আন্তরিকতা দিয়ে মমতা বাংলাকে করোনামুক্ত করতে চাইছেন।

বাংলা করোনামুক্তই ছিল। কিন্তু বিদেশ থেকে আসা দুএকজনের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণে বিপদটা এসে পড়ে। তার সঙ্গে যুক্ত হয় ভিন্ রাজ্য থেকে আসা মানুষবাহী সঙ্কট। রাতারাতি এই লড়াইটা তুঙ্গে নিয়ে যেতে হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে। আমরা এখনও জানি না ইতিমধ্যেই কতজনের শরীরে এই ভাইরাস ঢুকে রয়েছে। তবু মুখ্যমন্ত্রী আর যাতে না ছড়ায়, তার সবরকম ব্যবস্থা করছেন। পুলিশ প্রশাসন সক্রিয়।

চালু হাসপাতালে বেড বা পরিকাঠামো বাড়ানো যেমন কৃতিত্ব; তেমনই ডুমুরজলা স্টেডিয়াম বা রাজারহাটে রাতারাতি আইসোলেশন কেন্দ্র গড়ে তোলা কম কৃতিত্বের নয়। মেডিকেল কলেজেও নানা ব্যবস্থা হচ্ছে।

মমতা শুধু মুখ্যমন্ত্রী নন। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীও বটে, যে দপ্তরদুটি এখন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। দুটি দপ্তরই চাপ সামলে দারুণ কাজ করছে। সঙ্গে অন্য সব দপ্তর। মমতা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁর গোটা টিমের মধ্যে সেই সক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ছে। নবান্ন থেকে তো বটেই, বাড়ি থেকেও সবসময় সক্রিয় নজরদারি রাখছেন মমতা। শুধু টিভিতেই তাঁকে দেখা যাচ্ছে না, এই লড়াইতে যেখানে যা প্রয়োজন , মুখ্যমন্ত্রীর ছাপ দেখা যাচ্ছে।

ফলে বিরোধী বা সমালোচকরাও এখন এই জায়গায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকার আন্তরিক প্রশংসা করছেন। কোন বিরোধী নেতা কী বললেন, এটা বড় কথা না। আমজনতার মধ্যে থেকে কী মতামত উঠে আসছে, সেটাই বড় কথা। মানুষ বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী কাকে বলে, এই বিপদ মোকাবিলার যুদ্ধে, সেটাই দেখিয়ে দিলেন মমতা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিরকাল জনতার সঙ্গে মিশে রাজনীতি, মাটির গন্ধ বোঝা রাজনীতি এবং এই জগতে দীর্ঘ অভিজ্ঞতার কারণেই মমতা তাঁর সমস্ত সদিচ্ছা, আবেগ, উদ্যোগ নিয়ে সর্বশক্তিতে ঝাঁপিয়ে পড়তে পেরেছেন।

Previous articleহাতে ঘোরা টাকার নোট এই মুহুর্তে কতখানি নিরাপদ ?
Next articleব্লাড ব্যাঙ্কেই রক্তদান, আজ বেনজির উদ্যোগ