এখনও সিরিয়াস নই, ক্যাজুয়াল মনোভাবেই বিপদ বাড়ছে, কণাদ দাশগুপ্তের কলম

কণাদ দাশগুপ্ত

রাজ্যে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা এখনও নিয়ন্ত্রণে। তবে তথ্য বলছে এই রোগের সংক্রমণের গ্রাফ উপরের দিকেই। এই পরিস্থিতিতে বুঝতেই হবে, এখন আমাদের একমাত্র হাতিয়ার সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং৷ আর লকডাউনকে ১০০ শতাংশ সফল করা না গেলে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং-ও সফল হতে পারে না৷ লকডাউন সার্বিক ভাবে সফল করতে না পারলে বিপদ আমাদেরই৷

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সেই প্রথমদিন থেকেই লকডাউন, সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং-এর কথা বলছেন৷ কিন্তু আমাদের অনেকেই বিষয়টিকে ততটা গুরুত্ব দিচ্ছি না৷ অস্বীকার করা যাচ্ছে না, অনেকের মধ্যেই এ ব্যাপারে একটা ক্যাজুয়াল মনোভাব কাজ করছে৷ এই মানসিকতা বিপজ্জনক, প্রাণঘাতী৷ এখনও যদি সকলে সতর্ক না-হন, পরিণতি হবে মারাত্মক। করোনা- সংক্রমণ রাজ্যে একলাফে অনেকটাই বৃদ্ধি পাওয়ার পরেও যদি সকলে সতর্ক না-হন, পরিণতি হবে মারাত্মক। ইতিমধ্যেই রাজ্যে দেড় লক্ষের বেশি মানুষকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
লকডাউন নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকা অন্য রাজ্যের মতো অনুসরণ করছে বাংলাও। সাধারণ মানুষের সুরাহায় জরুরি কয়েকটি পরিষেবায় ছাড় দিয়েছে রাজ্য সরকার। তবুও কিছু মানুষ সচেতনভাবে পদক্ষেপ করছেন না। বেশ কিছু ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষিত হচ্ছে অবশ্যপালনীয় বিধিনিষেধ। সামাজিক নিরাপত্তার স্বার্থে নিজেকে অন্যের থেকে সরিয়ে রাখার বিষয়টি অমান্য করার অর্থ, এই সংক্রমণ ঘরে ডেকে আনা৷ বিশিষ্ট চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ‘‘করোনার তৃতীয় পর্যায়ে এখনও আমরা যাইনি । এখন চূড়ান্ত সাবধানতাই একমাত্র পথ। তার জন্য লকডাউন ব্যবস্থা সার্বিক ভাবে সফল করা দরকার। এই ব্যাধি কমিউনিটিতে এক বার ছড়িয়ে পড়লে ফল হবে মারাত্মক।’’
বিশেষজ্ঞরা সমানে বলে চলেছেন, দুনিয়ার তথাকথিত উন্নত দেশগুলি করোনা’র সঙ্গে যুদ্ধে একের পর এক পরাজিত হচ্ছে ৷ করোনা-দাপট সামলাতে ব্যর্থ হচ্ছে৷ ওইসব দেশের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে সবদিক থেকেই পিছিয়ে আছে ভারত৷ তথাপিও করোনা-যুদ্ধে৷ পশ্চিমবঙ্গ-সহ ভারত
তুলনায় এখনও অনেক ভাল অবস্থায় রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বারবার বলছেন, করোনা- সংক্রমণ জল, খাবার বা বাতাসের মাধ্যমে হয় না। এই সংক্রমণ শুধুই মানুষের থেকে মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। একবার ভাবা দরকার এই
সংক্রমণ যদি জল, খাবার, পতঙ্গ বা বাতাসের মাধ্যমে হতো, তাহলে কতখানি ভয়াবহ হতো৷ করোনা নিয়ে অনেক কিছু অজানা হলেও, আমরা কিন্তু জানতে পেরেছি যে
এই সংক্রমণ মানুষের থেকে মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। এটা জানা মানে ৭৫% লড়াই জিতে যাওয়া৷ এবার বাকি ২৫% লড়তে হবে আমাদেরই৷ তাই মানতে হবে, সোশ্যাল-ডিসট্যান্সিং৷ এই ২৫% কাজটাও যদি আমরা না মানি, ধ্বংস হওয়াই আমাদের ভবিতব্য৷
আমাদের মাথায় রাখতে হবে, লকডাউন সফল করতে না-পারলে এ রাজ্যের চিকিৎসা-ব্যবস্থা ব্যবস্থা যত আধুনিকই হোক, যতই মরণপন চেষ্টা করুক, বাংলাকে হার মানতেই হবে৷ জানা গিয়েছে, এই মুহুর্তে বাংলায় দেড় লক্ষের কিছু বেশি মানুষ নজরদারিতে আছেন৷ ফোনের মাধ্যমে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে স্বাস্থ্য দফতর। বিধি মেনে এই নজরদারিতে সহযোগিতা করতেই হবে৷ রাজ্য সরকার এলাকাভিত্তিক ফিভার ক্লিনিক তৈরি করছে বলে জানা যাচ্ছে । এই ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক চিকিৎসা করা হবে। রাজ্যে এ পর্যন্ত যারা করোনা-আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের বেশিরভাগের
‘ক্লোজ কনট্যাক্ট’-এর প্রমাণ মিলেছে। তাই পরিস্থিতি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার সময় পার হয়ে যাচ্ছে৷ করোনা- পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিকিৎসকদের কাছে করোনা প্রতিরোধের ব্যাপারে পরামর্শ চেয়েছেন। প্রত্যেক চিকিৎসকই মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, এখন আতঙ্কিত না-হয়ে চূড়ান্ত ভাবে সচেতন থাকা উচিত সাধারণ মানুষের। সরকার যে সব নীতিনিয়মের কথা বলছে, নাগরিকরা তা যদি মেনে চলে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে৷ রাজ্যবাসীর কাছে এই সব তথ্য তুলে ধরার জন্য চিকিৎসকদের অনুরোধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

কিন্তু সমস্যা হলো, আমাদের একাংশ এখনও গোটা বিষয়টি কেয়ার করছেন না৷ সময় এসেছে, বিধিভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করার৷
লকডাউন বা সোশ্যাল- ডিসট্যান্সিং মান্য করার প্রশ্নে অনুরোধ বা আবেদনে কাজ যখন হচ্ছে না, তখন চরম সিদ্ধান্ত সরকারকে নিতেই হবে৷

Previous articleলকডাউনের জের, হরিপালে এক ঝাঁক পরিযায়ী পাখি
Next articleলাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, এবার আক্রান্ত শেওড়াফুলির প্রৌঢ়ের ভাই ও ভাইপো