মিঠুন চক্রবর্তী। মুম্বইয়ের সুপার স্টার। বাংলার ‘ফাটা কেষ্ট’ মিঠুনদা। মানবিকতার দিক থেকে বাংলার গৌরাঙ্গ কিংবদন্তি। তা সে থ্যালাসেমিয়া হাসপাতাল হোক, বাংলার ফুটবল হোক, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির স্পটবয়, বা পথশিশুকে মেয়ের স্বীকৃতি দেওয়া হোক, সবেতেই তিনি বাংলার মানুষের কাছে আলাদা জায়গায়। বুকে রিন-রিন শব্দ তোলা ব্যক্তিত্ব।
সেই মিঠুনদাই তাঁর ভক্তদের ভালবাসায় টাল খাইয়ে দিলেন মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল, লকডাউনের বিকেলে। সুপার স্টারের বাবা নবতিপর বসন্ত চক্রবর্তী মারা গেলেন মঙ্গলবার দুপুরে। নব্বই ছুঁই ছুঁই স্ত্রীর সঙ্গে মাড আইল্যান্ডের বাড়িতে বসন্তবাবু একাই থাকতেন। শেষদিকে কিডনির অসুখে ভুগছিলেন। দুটি কিডনিই প্রায় অকেজো হয়ে গিয়েছিল। ছেলে জানতেন। মৃত্যুর খবরও পৌঁছে যায় মিঠুনের কাছে। তিনি উটি থেকে বেঙ্গালুরুতে এসে আটকে গিয়েছেন লকডাউনে। রয়েছেন নিজের বাড়িতেই। মিঠুন ভক্তরা ভেবেছিলেন, যাবেন দাদা যাবেন। লকডাউন তো কী হয়েছে। বাবাকে শেষবার দেখতে তিনি যাবেনই। বাবা বলে কথা! উনি মিঠুন চক্রবর্তী। সকলের থেকে আলাদা। সব বাধা পেরিয়ে উনি যাবেন। সোশ্যাল মিডিয়াতে তো এমন লড়াইও দেখলাম যে একজন বলছেন, উনি মিঠুন। ঠাকরে পরিবারের সঙ্গে দারুন সম্পর্ক। বাল ঠাকরের অনুরোধে বহু বছর আগে ভোটের প্রচারেও নেমেছিলেন। একবার বললেই মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব হেলিকপ্টার পাঠিয়ে দেবেন। পাল্টা অন্যজন বলেছেন, কেন কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পা আছেন। তাঁকে বললেও তো ব্যবস্থা হবে…
এই বিতর্কের মাঝেই দেখা গেল বেলা গড়িয়ে রাত হয়েছে। আমাদের মুম্বইয়ের সংবাদদাতা জানালেন, রাত সাড়ে এগারোটা।একেবারে হাতে গোনা কয়েকজন রয়েছেন সেখানে। শ্মশানে নশ্বর দেহ লীন হয়ে গেল বসন্ত চক্রবর্তীর। শ্মশানে মিঠুন-পুত্র মিমো আর নমস্বী। ছিলেন সুপার স্টারের তিন বোনের একজন। একমাত্র পুত্রের অপেক্ষায় বাবার নিথর দেহ কী অলক্ষ্যে চোখের জল ফেলেছিল? নইলে দু’ ফোঁটা বৃষ্টির জল শেষ বেলায় পড়ল কেন?
বাবার শেষকৃত্যে পুত্র মিঠুনের না থাকা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে চারপাশে। অথচ মিঠুন স্পিক টি নট। কেন? নিশ্চিতভাবে এমন কোনও পরিস্থিতির মধ্যে তিনি পড়েছিলেন, যে কারণে বাবাকে শেষবার দেখতে আসতে পারেননি। আর সে কথা তাঁর প্রকাশ্যে এসেই বলা উচিত। নইলে জনমানসে তাঁর যে ভাবমূর্তি, তা কোথাও গিয়ে একটা হোঁচট খেতে বাধ্য। এমনিতেই বিগত ৫-৬ বছরে তাঁর কিছু পদক্ষেপ, সিদ্ধান্ত নিয়ে পশ্চিম বাংলার মানুষের মনে অনেক প্রশ্ন জমা হয়েছে। ভাঁড়ারে কী আরও প্রশ্ন জমা হওয়ার সুযোগ দেবেন গৌরাঙ্গ?