পদত্যাগই ভবিতব্য উদ্ধব ঠাকরের?

লগ ডাউনের সময়সীমা একদিন করে বৃদ্ধি হচ্ছে, আর মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর রাতের ঘুম কমতে শুরু করেছে। কারণ, ক্রমশ দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হচ্ছে, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে গদি হারানো অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে।

কেন?

উদ্ধব মহারাষ্ট্র বিধানসভার নির্বাচিত সদস্য ছিলেন না। গত নভেম্বরে শিবসেনা সরকার গড়ার সুযোগ পায় এবং তিনি পরিষদীয় দলনেতা হন। স্বাভাবিকভাবেই মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন উদ্ধব। ভোটে না জিতে মুখ্যমন্ত্রী বা মন্ত্রী হলে আইন অনুযায়ী ৬মাসের মধ্যে সেই ব্যক্তিকে ভোটে জিতে নির্বাচিত হয়ে, আসতে হয়। এক্ষেত্রে উদ্ধবের ৬মাসের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৮ মে। কারণ তিনি শপথ নিয়েছিলেন ২০১৯-এর ২৮ নভেম্বর। আর ওই সময়ের মধ্যে তাঁর জিতে আসার কোনও সম্ভাবনা নেই। কারণ এর মাঝে ভোট হওয়ার কোনওরম পরিস্থিতি নেই। দেশ জুড়ে লকডাউন। আর মহারাষ্ট্র করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের তালিকার শীর্ষে। ফলে পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক। ভোট দূর-অস্ত।

তাহলে উপায়?

দেশের যে ক’টি বিধানসভার দুটি কক্ষ রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম মহারাষ্ট্র, যার সাংবিধানিক নাম মহারাষ্ট্র বিধান পরিষদ। উদ্ধব আইন অনুযায়ী উচ্চকক্ষ থেকে নির্বাচিত বা মনোনীত হয়ে সদস্য হতে পারেন, এবং সাংবিধানিক সঙ্কট কাটাতে পারেন। যেভাবে রাজ্যসভার সদস্য হয়ে একসময় টানা ১০বছর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ডঃ মনমোহন সিং, অনেকটা সেইরকম ভাবে। এখন মহারাষ্ট্র বিধানসভার উচ্চকক্ষের আসন সংখ্যা হলো ৭৮। যার মধ্যে নির্বাচিত ৬৬জন, আর ২২ জন মনোনীত। নির্বাচিত প্রতিনিধির কারওরই এই মুহূর্তে ৬ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে না। আসনগুলি পূর্ণ। আর মনোনীত আসনের ২২টির মধ্যে শূন্য রয়েছে মাত্র ২টি। এই দুটি আসনের একটিতে মনোনীত হয়েও উদ্ধবের কুর্সি বেঁচে যেতে পারে। কিন্তু আসল খেলা খেলে চলেছেন রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারি। যিনি গভীর রাতে রাষ্ট্রপতি শাসন তুলে নিয়ে ভোরে ফড়নবিশকে মুখ্যমন্ত্রিত্বের শপথ পাঠ করিয়েও বাঁচাতে পারেননি। তিনি চাইলেই এই সাংবিধানিক সঙ্কট থেকে রাজ্যকে মুক্তি দিতে পারেন। সমস্যা বাড়ে মন্ত্রিসভা পর পর দু’দুবার উদ্ধবের নাম সুপারিশ করে। আর তা উপেক্ষা করেছেন কোশিয়ারি। ৯ এপ্রিল শেষ সুপারিশ হয়। সেটাও ঝুলে ২০দিন!

রাজ্যপাল এই সুপারিশ উপেক্ষা কর‍তে পারেন?

সংবিধান বিশেষজ্ঞদের একপক্ষ বলছেন, রাজ্যপাল এই সুপারিশ মানতে বাধ্য। অন্যপক্ষ বলছেন, যেহেতু রাজ্যপাল মনোনয়ন করেন, তাই এটা তাঁর কোটায়।

তাহলে পথ?

উদ্ধবের চেয়ার যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। রাজ্যপালও চাইছেন উদ্ধব সরকারকে বিজেপির গুটি হয়ে ব্যতিব্যস্ত করতে। কোশিয়ার আবার পুরনো আরএসএস! সংবিধান বিশেষজ্ঞদের আর একপক্ষ বলছেন, একটা পথ খোলা আছে, উচ্চকক্ষের নির্বাচিত কাউকে পদত্যাগ করিয়ে সেখানে জিতে আসা। কিন্তু সেখানেও সময়, ব্যবধান, নোটিশ নানা পর্ব রয়েছে। এই লকডাউন পর্বে তা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে উদ্ধবের গদি হারানোর সম্ভাবনা প্রবল।

Previous articleএই প্রথম যোগেন চৌধুরীর ছবির ই-অ্যালবাম
Next articleটিকিয়াপাড়া: কটাক্ষ দিলীপের, রাজনীতি বন্ধের ডাক মমতার