স্বামীর শেষকৃত্যের জন্য গ্রামের বাড়িতে ফিরে বৃদ্ধার ঠাঁই এখন গাছের তলা

করোনা সঙ্কটে সবাই সতর্ক থাকুন, সচেতন থাকুন, ঘরে থাকুন। কিন্তু কেউ ভয় পাবেন না। আতঙ্ক ছড়াবেন না। আইন নিজে হাতে তুলে নেবেন না। শুরু থেকেই এমন বার্তা ও প্রচার চালানো হচ্ছে সরকারের পক্ষে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে প্রচার করছেন। এমনই আবহাওয়ার মধ্যে ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধাকে গ্রামে তাঁর ভাড়া বাড়িতে ঢুকতে বাধা দেওয়া হলো।

তাঁর ঠিকানা হাওড়া মৌরিগ্রাম রাস্তার ধারে বট গাছের তলা।

মৌরিগ্রাম নজরুল-পল্লী এলাকাতে ঊষা সরকারের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন নমিতা মাইতি। সঙ্গে থাকতেন তাঁর স্বামী নিমাই মাইতি। জীবিকার টানে ওই বৃদ্ধা কলকাতার এক ব্যক্তির বাড়িতে আয়ার কাজ করতেন। লকডাউনের পর থেকে বাড়ি ফেরা হয়নি তাঁর। ছেলেরা দিল্লিতে কাজ করেন, তারাও ফিরতে পারেনি। অসুস্থ স্বামী নিমাই মাইতি তাই একই মৌরিগ্রামের ওই ভাড়া বাড়িতে ছিলেন।

এরই মধ্যে গত ২৮ এপ্রিল নিমাইবাবু লিভার সংক্রান্ত রোগে মারা গেলে নমিতাদেবী খবর পেয়ে স্বামীর শেষকৃত্যের জন্য আসেন নজরুল-পল্লী বাড়িতে। স্বামীর মৃতদেহের সঙ্গে নমিতাদেবীও যান শ্মশানে। শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

কিন্তু মৌরিগ্রামের বাড়ি থেকে শ্মশানে যাওয়ার পর ফিরে আসলে গ্রামে আর ঢুকতে দেওয়া হয়নি ওই বৃদ্ধাকে। করোনা আতঙ্ক থেকেই গ্রামবাসীদের এমন সিদ্ধান্ত। বাড়ির মালিক ঊষা সরকারকে বলেও কাজ হয়নি। বাড়ির মালিকের স্পষ্ট কথা, গ্রামবাসীরা ঢুকতে দিচ্ছে না, তাই তাঁর কিছু করার নেই। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, বৃদ্ধা নমিতা মাইতি মেডিকেল সার্টিফিকেট নিয়ে আসলে তবেই ঢুকতে দেওয়া হবে।

এদিকে, ঘর না থাকায় হিন্দু শাস্ত্রীয় মতে মৃত স্বামীর পরলৌকিক যে ক্রিয়া থাকে, সেটা করা থেকে তিনি বঞ্চিত হচ্ছেন। এলাকার উপপ্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, উনি নাকি গ্রামবাসীদের বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, কিন্তু কাজ হয়নি। এই বলে দায় এড়িয়েছেন উপ-প্রধান। অগত্যা ৬৫ বছরের বৃদ্ধা নমিতা মাইতির ঠিকানা বট গাছের তলা।

জানা গিয়েছে,এই ঘটনা চাউর হতেই স্থানীয় প্রশাসন নাকি তাঁর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। আপাতত গ্রামের একপ্রান্তে ওই বৃদ্ধার জন্য থাকার মতো অস্থায়ী একটি ঘর বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

Previous articleব্রেকফাস্ট নিউজ
Next articleরেশন দুর্নীতির অভিযোগে পঞ্চায়েত প্রধানের উপর হামলা