দিল্লিসফর বাতিল, মুকুল রায় এখন কোন্ পথে হাঁটবেন?

নাঃ! এবারও বিজেপি রাজ্যসভা দিল না মুকুলকে

বিজেপির নতুন রাজ্য কমিটি ঘোষণার পর এটা স্পষ্ট যে মুকুল রায়ের ছেলে বিধায়ক শুভ্রাংশু রায়কেও কোনো পদ দেওয়া হয়নি। মুকুলশিবিরের কাউকেই তেমন জায়গা দেয়নি নয়া কমিটি। সেখান থেকেই প্রশ্ন, মুকুলবাবু এখন কী করবেন?

এক) রাজ্যে দিলীপ ঘোষের নিয়ন্ত্রণ স্পষ্ট। মুকুল এখানে সম্মানজনকভাবে কোনো দায়িত্ব পাচ্ছেন না। সেভাবে কাজের সুযোগ পাচ্ছেন না।

দুই) মুকুল রায়ের ছেলে বিধায়ক শুভ্রাংশু রায়কে কোনো পদ দেওয়া হয়নি। এটা একপ্রকার অসম্মানজনক বার্তা। কেউ কেউ দলের অন্য দুতিনজনের নাম করে বোঝাতে চাইছেন তাঁরা মুকুলের লোক। আসলে বাস্তব হল সবটাই ” ছিলেন”। ক্রমশ এখন তাঁরা সরাসরি নিজেদের লবি জোরদার করেছেন। নিজেদের সাংসদ বা বিধায়ক পদের সৌজন্যে সেটা সহজ ছিল। ফলে মুকুল রায়ের সৌজন্যে পদ পেয়েছেন, এটা বাইরে কেউ কেউ বলতে পারেন। আসলটা স্বয়ং মুকুল জানেন। উদাহরণ, এমনই এক অনুগামীর পুজো উদ্বোধন করতে গিয়ে একসময় মুকুল অবাক হয়ে দেখেছিলেন তাঁর অজান্তে আগেই পৌঁছেছেন আরও দুই অতিথি- দিলীপ ঘোষ ও কৈলাস বিজয়বর্গীয়! তারপর থেকে মুকুল যত্ততত্র লুচি খেতে যাওয়া কমিয়েছেন।

তিন) মুকুলবাবুর একদম ঘনিষ্ঠ শুভানুধ্যায়ীদের অধিকাংশই মনে করছেন তাঁর মত অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নেতাকে বসিয়ে রেখে সময় নষ্ট করিয়ে দিচ্ছে বিজেপি। তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতাকে কাজে না লাগানোটা দলেরও ক্ষতি। কিন্তু বিজেপির সাংগঠনিক কাঠামোয় এনিয়ে কিছু করারও নেই।

চার) গত দুবছরের বেশি সময় ধরে সমানে শোনা গিয়েছে মুকুলকে বড় পদ , বড় দায়িত্ব দেবে দিল্লি। আবারও শোনা যাচ্ছে। কিন্তু এই রটনার সর্বোচ্চ ফল এখনও পর্যন্ত দলের জাতীয় পরিষদের সদস্যপদ, যেটা অভিনেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়েরও আছে। একজন সিনিয়র নেতাকে আর কতদিন এভাবে অপদস্থ করা যেতে পারে?

সেই সূত্রেই প্রশ্ন এবং কৌতূহল, মুকুল রায় এবার কী করবেন? দিল্লির নেতাদের মিষ্টি হাসি, জনসভায় তাঁর নাম সম্বোধন আর কেন্দ্রীয় নিরাপত্তার লাড্ডুতেই তিনি কি সন্তুষ্ট থাকবেন?

সূত্রের খবর, মুকুল এবার সরাসরি দিল্লির কাছে বুঝে নিতে চাইবেন তাঁর জন্য বিজেপিতে নিশ্চিত কোনো কাজ আছে কিনা। তাঁকে বলা হয়েছিল বিধানসভা ভোটের আগে তাঁকে বড় দায়িত্ব দিয়ে নামানো হবে। এখন মুকুল জেনে নেবেন এর সম্ভাবনা কতটা। যদি দেখেন কিছু সম্ভাবনা আছে, তাহলে আরও একটু অপেক্ষা করবেন। অন্যথায় তিনি নিজেকে সরিয়ে বিকল্প ভাববেন। তবে রাজনৈতিক বিষয় ছাড়াও দুএকটি বিষয় মুকুলকে ভাবতে হচ্ছে।
আপাতত মুকুল রায় বিজেপির আচরণে হতাশ ও ক্ষুব্ধ। তবে, তার প্রকাশ করছেন না। শেষবারের মত বাজিয়ে দেখতে চান তিনি। কৈলাশের শিবির তাঁকে বলেছে দিল্লি বড় পদ দেবেই। কিন্তু যেভাবে শুভ্রাংশুকে ব্রাত্য রাখা হয়েছে, তাতে এনিয়ে সন্দেহ আছে মুকুলবাবুরই।
দিল্লির সংবাদদাতা জানাচ্ছেন, অমিত শাহ রাজ্যের কয়েকজনকে ডেকেছেন। মুকুল রায়, স্বপন দাশগুপ্তকেও আসতে বলেছেন। কিন্তু সোমবার রাতে মুকুল দিল্লিযাত্রা আপাতত বাতিল করেছেন। তিনি পরে যাচ্ছেন নাকি আপাতত যাচ্ছেন না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
তাঁর শিবিরের একাংশ বলছে, তাঁর উচিত আরও একটু ধৈর্য করে দিল্লির বঙ্গনীতি বুঝে নেওয়া।
অন্য শিবির বলছে, যথেষ্ট সময় নষ্ট হয়েছে। এবার অবিলম্বে বিকল্প ভাবা উচিত।
বিকল্প নিয়েও চাপা আলোচনা।
মুকুল স্বয়ং বিভ্রান্ত। একাধিক ” ফ্যাক্টর” ভাবছেন তিনি। দিল্লির মন বোঝার সময় নেবেন, নাকি দিল্লিকেই মন বুঝিয়ে দেবেন, তিনি দ্বিধায়। দিল্লির সঙ্গে টক্করের আগে দুবার ভেবে দেখছেন। আবার দিল্লিও মুকুলকে পুরোপুরি ছেড়ে দিতে তৈরি নয়, দায়িত্ব দেওয়া হবে বলে কৈলাস বার্তা পাঠাচ্ছেন। মুকুল রায় কি আপাতত আবার সন্ধিক্ষণে?

 

Previous articleবিজেপির কমিটিতে নেই শমীক, ফোনবিতর্কের জের
Next articleদিলীপই সর্বময় কর্তা, বুঝিয়ে দিল বিজেপি