চিনের সরকারি মুখপত্রের সুর খুবই নরম, কণাদ দাশগুপ্তর কলম

কণাদ দাশগুপ্ত

কারন যাই হোক, বুধবার চিনের সরকারি মুখপত্র ‘People’s Daily’-র আন্তর্জাতিক সংস্করণ ‘The Global Times’–এর সুর খুবই নরম এবং যুদ্ধ নয়, আলোচনার মাধ্যমেই সীমান্ত সংঘাতের সমাধানের পক্ষে৷

সব থেকে মজার বিষয়, বুধবারের The Global Times- এ একটি ‘সম্প্রীতি’-র ছবিও ছাপা হয়েছে৷ ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “এক চিনা সৈনিক ভারতীয় এক সেনাকে শেখাচ্ছেন কিভাবে চপস্টিক দিয়ে খাবার তুলতে হয়।” বলা হয়েছে, ছবিটি ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বরের৷ চিন- ভারত “হ্যান্ড-ইন-হ্যান্ড ২০১৯” শীর্ষক ১৬ দিনের কর্মসূচির শেষদিনের ডিনারের ছবি৷ গলওয়ান উপত্যকা রক্তস্নাত হওয়ার পরদিনই এই ছবি প্রকাশ করে নিশ্চিতভাবেই কোনও বার্তা দিতে চাইছে চিন৷

এদিন সরকারি এই মুখপত্রে এমন কোনও প্রতিবেদন নেই, যা দু’দেশের সম্পর্কে চিড় ধরাতে পারে বা চিনের নাগরিকদের প্ররোচিত করতে পারে৷

বুধবার চিনের সরকারি মুখপত্রের বক্তব্য, ‘Soft landing expected for China-India border clash’ ৷ বলা হয়েছে, “অতীতের মতো এবারের চিন- ভারতের সীমান্ত সংঘাতও আলোচনাতেই মিটে যাবে৷ দেখা যাবে ‘সফট-ল্যাণ্ডিং’৷ সোমবারের সংঘর্ষ বেশ বড় মাপের৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও দু’দেশই সতর্ক, যুদ্ধ-পরিস্থিতি কেউই চায়না৷ বাস্তববোধের পরিচয় দিয়েই চিন বা ভারত, কোনও পক্ষই গোলাবারুদ ব্যবহার করেনি৷ এছাড়া, ঘটনার পরে উভয় পক্ষের বিবৃতিও যথেষ্টই
সংযত৷ দু’দেশের বিবৃতি এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে যে কোনও দেশই পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে চায়না৷”

চিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ানের বক্তব্যের উল্লেখ করে বলা হয়েছে, “কূটনৈতিক ও সামরিক, দুই চ্যানেলের মাধ্যমেই সাম্প্রতিক সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে চিন ও ভারত ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলেছে।”

এ ছাড়াও ‘গ্লোবাল টাইমস’ এদিন চিনের ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক গ্র্যান্ডভিউ ইনস্টিটিউশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট তিয়ান শিচেন-এর বক্তব্য সামনে এনেছে৷ গ্লোবাল টাইমসকে তিয়ান বলেছেন, ” আগামী দিনে দু’দেশের সম্পর্কের যে উন্নতি হবে সে বিষয়ে আমি আশাবাদী৷ এবং একইসঙ্গে আশা করছি, উভয় পক্ষই সতর্কতার সঙ্গেই এই সীমান্ত-সংঘর্ষের সমাধান করবে৷ কারন, চিন এবং ভারত উভয়ই প্রধান পারমাণবিক শক্তি এবং কোনও বড় মাপের যুদ্ধে দুই দেশ কখনই যেতে পারে না”।

চিন সরকারের এই মুখপত্র বুধবার বলেছে, “চিন এবং ভারত একই অবস্থানে রয়েছে৷ দু’পক্ষই শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে চায়৷ তাতেই উভয় পক্ষ উপকৃত হবে৷ তাই নিশ্চিতভাবেই সামগ্রিক পরিস্থিতি শুধু শান্তির দিকেই এগিয়ে যাবে”৷

তবে গ্লোবাল টাইমস এটাও বলেছে, “To ease pressure from domestic public opinion, India will make some strong reactions, but is unlikely to risk another provocative action again,” “অভ্যন্তরীণ জনমতের চাপ কমাতে, ভারত কিছু কড়া কড়া প্রতিক্রিয়া শোনাতে পারে, কিন্তু বাস্তবে উত্তেজক পদক্ষেপ করার ঝুঁকি নেওয়ার সম্ভাবনা কম৷”

বেজিং-এর এক সমর -বিশেষজ্ঞ উই ডংজু বুধবার গ্লোবাল টাইমসকে বলেছেন, “সোমবার ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চিনা সেনাবাহিনী যখন কঠোর পাল্টা আক্রমণ চালানোর কথা ভাবছিলো, তখন চিন কিন্তু পরিস্থিতি আরও খারাপ হোক, তা চায়নি৷ এখনও পুরোপুরি আলোচনার স্তরে আছে বিষয়টি৷ এখনও আলোচনার মাধ্যমেই এর সমাধান করতে দু’দেশই আগ্রহী।” এই সমর -বিশেষজ্ঞ ‘গ্লোবাল টাইমস’-কে বলেছেন, “ভারত এটাও নিশ্চয়ই উপলব্ধি করেছে যে সীমান্ত অঞ্চলে বৃহত্তর এবং আরও তীব্র সংঘর্ষ হলে, দু’দেশের সম্পর্কের উপর স্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে।” পাশাপাশি তিনি বলেছেন, “আমি বিশ্বাস করি আগামী দিনে এই দ্বন্দ্ব ধীরে ধীরে কমে যাবেই”।
‘গ্লোবাল টাইমস’ সোমবারের ঘটনার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মদত থাকার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতও দিয়েছে৷ বলা হয়েছে,
“The US has been taking any opportunity to contain China, and while India practices a policy of non- alignment, the border incident this time has given the US a chance to alienate China from India. আমেরিকা চিনকে দমন করার সব ধরনের সুযোগই নিচ্ছে৷ যখন ভারত ‘জোট-নিরপেক্ষ’ থাকার নীতি গ্রহণ করেছে, তখন সীমান্তের এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের সামনে সুযোগ করে দিয়েছে ভারতের থেকে চিনকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার৷ তবে ভারত নিশ্চয়ই দেশের স্বার্থের উপর ভিত্তি করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে৷”

Previous articleলাদাখে সংঘর্ষের মাঝেই দেশে ৭ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ চিনা সংস্থার!
Next articleকরোনায় আক্রান্ত দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী