৪ মিনিটেই কাঁকুড়গাছির হত্যা রহস্য লুকিয়ে! ৬৭ পাতার স্যুইসাইড নোট যেন আত্মজীবনী

কাঁকুড়গাছি খুনে পুলিশ এখন অমিত আগরওয়ালের ৬৭ পাতার স্যুইসাইড নোটকেই হাতিয়ার করতে চাইছে। কাঁকুড়গাছি ঘটনার পর ঘটনাস্থল থেকেই স্যুইসাইড নোটটি অমিতের কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছে। খুনের পরিকল্পনা করে সঙ্গে সুইসাইড-নোট রাখাই প্রমাণ করে দিচ্ছে হঠকারিতা নয়, পরিকল্পনা করেই খুন করেছে অমিত। সেই স্যুইসাইড নোটে কার্যত স্ত্রী শিল্পীর সঙ্গে প্রেম থেকে শুরু করে স্ত্রীকে খুনের ঘটনা পর্যন্ত সবই লিখে গিয়েছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, কীভাবে খুন করবেন, সেই বিষয়টি পর্যন্ত লেখা রয়েছে ওই নোটে।

 

হিন্দিতে লেখা সুইসাইড নোটে কীভাবে ১২ বছরের বিবাহিত জীবনে সম্পর্কের অবনতি হল, সেকথা যেমন লেখা রয়েছে, তেমনি শিল্পীকে কীভাবে খুন করা হবে সেকথাও লেখা রয়েছে।

বেঙ্গালুরুতে চাকরি করতেন এবং থাকতেন শিল্পী। অমিতও সেখানে থাকতেন, চাকরি করতেন। তবে আলাদা। অমিত এবং শিল্পীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছিল। শনিবার বিকেলে হোয়াইটফিল্ডে শিল্পীর ফ্ল্যাটে আসেন অমিত। শিল্পী প্রথমে তাকে ঢুকতে দেননি। জোর করে ঢোকেন অমিত। এরপর দুজনের মধ্যে তুমুল বচসা শুরু হয়। কিন্তু পড়শিরা ধর্তব্যে আনেননি। তাঁরাও জানতেন, অমিত এলে দুজনের মধ্যে গন্ডগোল শুরু হয়। বাড়িতে ছেলে ছিল না। ঝগড়া চলাকালীনই ফ্ল্যাটে শ্বাসরোধ করে শিল্পীকে খুন করে অমিত। ছেলে ফিরলে অমিত জানায়, মা কলকাতা গিয়েছে। ছেলেকে নিয়ে আসে নিজের কাছে। সোমবার সকালের বিমানে কলকাতার ফেরে। দমদম বিমানবন্দর থেকে ক্যাব ভাড়া করে বেলঘরিয়ায় নিজের বাড়িতে ভাইয়ের কাছে ছেলেকে রেখে আসে। বিকেলে আর একটি ক্যাব ভাড়া করে। পাঁচটা নাগাদ বেঙ্গল কেমিক্যালের কাছে ক্যাব থেকে নেমে যান অমিত। বেঙ্গল কেমিক্যাল থেকে শিল্পীর বাপের বাড়ির দূরত্ব মিনিট চারেকের। এর মাঝেই কোথাও থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করেছিল অমিত। তারই সন্ধানে রয়েছে পুলিশ। চলছে সিসিটিভির পর্যবেক্ষণ। অনুমাণ, এখানেই লুকিয়ে রহস্য।

 

এরপর কাঁকুড়গাছির ফ্ল্যাটে গিয়ে শুরু হয় শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে ঝগড়া। শেষে উত্তেজিত হয়ে গুলি ছোড়ে। দুটি ফস্কায়। শ্বশুরমশাই পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও শাশুড়ির বুকে ও পেটে গুলি লাগে। এবং শেষে বিছানায় বসে নিজের মাথায় অমিত গুলি চালায় বলে পুলিশের অনুমাণ।

প্রশ্ন এক. ছেলেকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার পর সন্ধ্যার আগে পর্যন্ত বাকি সময় কোথায় ছিলেন অমিত?

প্রশ্ন দুই. ঠিক কোথা থেকে রিভলবার সংগ্রহ করলেন অমিত?

ডিভোর্স চলাকালীন মূলত ছেলের দখলদারি নিয়েই অমিত ও শিল্পীর মধ্যে টানাপোড়েন এবং ঝগড়া চলছিল। এব্যাপারে শ্বশুর-শাশুড়ি তার বিরুদ্ধে যাওয়ায়, তাদেরকে খুন করার পরিকল্পনা সাজায় পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট অমিত।

অমিতের ল্যাপটপটি পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে। সেই ল্যাপটপের ব্রাউজার ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে কীভাবে রিভলবার চালাতে হয় তা ইন্টারনেটে বারবার খতিয়ে দেখেছে সে।

দুই ক্যাব চালকের অনুসন্ধান চালিয়ে পুলিশ জানতে চাইছে সকালে এবং সন্ধ্যায় অমিতের গতিপ্রকৃতি।

অমিতের সুইসাইড নোটে খুনের পরিকল্পনার কথা লিখে সে বলেছে, আমার জীবন শেষ হয়ে গিয়েছে, কিন্তু ছেলের জীবন শেষ হতে দেব না! ছেলেকে বাঁচাতে তিন খুন! না প্রতিশোধের আগুনে ছাড়খাড় হয়েছে অমিত আগরওয়াল!

Previous articleএখনও দগদগে আমফানের তাণ্ডব, ফের ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা মৌসম ভবনের
Next articleকরোনা আবহতেই রথযাত্রায় কাঠামো পুজোর মধ্যে মা দুর্গার আগমনের বার্তা শোভাবাজার রাজবাড়িতে