দিল্লিতে বসে চিনা রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যে বাড়তে পারে বিতর্ক

“গালওয়ান উপত্যকায় গত ১৫ জুনের তীব্র শারীরিক সংঘর্ষে চিন ও ভারত, দু’তরফেই প্রাণহানি হয়েছে। তবে ওই ঘটনার দায় চিনের নয়৷ সংঘর্ষের জন্য ভারত দায়ী৷ ভারতের প্ররোচনাতেই এই ঘটনা ঘটেছে৷”

অবশেষে মুখ খুলে ভারতে নিযুক্ত চিনা রাষ্ট্রদূত সং ওয়েইডং-এর স্বীকারোক্তি, সেদিন চিনা সেনাও গালওয়ানে নিহত হয়েছে৷ পাশাপাশি নানা যুক্তি সাজিয়ে গালওয়ানের দায় ভারতের ঘাড়েই চাপিয়েছেন তিনি৷

এক সাক্ষাৎকারে চিনা রাষ্ট্রদূত এমন অনেক কথা বলেছেন যা নতুনভাবে বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে বলেই বিশেষজ্ঞমহলের আশঙ্কা৷

সাক্ষাৎকারের মূল বিষয়বস্তু এই রকম :

◾LAC বা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার চিনের অংশে অবস্থিত এই গালওয়ান উপত্যকা৷ এতে কোনও সন্দেহ নেই এবং খুবই পরিষ্কার এই বিষয়টি৷ এই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েও কোনও ধন্দ নেই৷

◾১৫ জুনের ঘটনাটি ঘটেছে চিনের দিকের LAC বা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে৷ প্রথমে ভারতীয় সেনাই LAC অতিক্রম করে চিনের অংশে ঢুকে পড়ে৷

◾চিন- ভারত দু’ পক্ষই দশকের পর দশক ধরে ওই এলাকায় শান্তি বজায় রেখেছে। কিন্তু এই বছরের গোড়া থেকে, ভারত ক্রমাগত ওই এলাকার নিয়ন্ত্রণের স্থিতাবস্থা না মেনে গালওয়ান উপত্যকায় LAC-এর কাছে এবং LAC অতিক্রম করে নির্মাণকাজ চালাচ্ছে৷

◾গত ৬ মে রাতে সীমান্তে থাকা ভারতীয় বাহিনী গালওয়ান উপত্যকায় LAC অতিক্রম করে চিনের ভূখণ্ডে প্রবেশ করে। সীমান্তে বজায় থাকা শান্ত পরিস্থিতির বিঘ্ন ঘটায়৷ এবং সেখানে নিজেদের স্থায়ী উপস্থিতি বজায় রাখার জন্য নির্মাণকাজ চালায় ভারত৷

◾চিন ও ভারতের ঐক্যমতের ভিত্তিতে নেওয়া সিদ্ধান্ত ভারত লঙ্ঘন করে এবং পরিস্থিতি অশান্ত করার প্ররোচনা দেয়৷
তখন থেকেই চিন কূটনৈতিক ও সামরিক স্তরে দফায় দফায় এ বিষয়ে ভারতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে৷

◾ভারত এরপর চিনের এলাকা থেকে সেনা সরিয়ে নেয় এবং বেআইনি নির্মাণও ভেঙ্গে দেয়৷

◾গত ৬ জুন, উভয় দেশের সেনা বাহিনীর কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠক হয়। ভারত ওই বৈঠকে প্রতিশ্রুতি দেয় যে তারা টহল এবং নির্মাণের জন্য গালওয়ান নদী অতিক্রম করবেনা৷ উভয় পক্ষ গালওয়ান নদীর দু’ পাশে পর্যবেক্ষণ পোস্ট নির্মাণ করতেও সম্মত হয়।

◾কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠকের পর, যখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, তখন ভারতীয় সেনা কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠকের ঐকমত্যের ভিত্তিতে নেওয়া সিদ্ধান্ত ফের লঙ্ঘন করে LAC অতিক্রম করে চিন নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ঢুকে
চিনের পর্যবেক্ষণ পোস্ট ভেঙ্গে ফেলার দাবি জানায়৷ ফলে আরও একবার উত্তেজনার সৃষ্টি হয়৷ এবং তার জেরেই ১৫ জুন গালওয়ান- সংঘাতের সূত্রপাত ঘটায়।

◾১৫ জুন সন্ধ্যায় ভারতীয় সেনা ফের কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে এবং চিনা তাঁবু ভেঙ্গে ফেলার জন্য আবার LAC অতিক্রম করে।
সেদিন ভারত-ই সংঘাত শুরু করে এবং চিনা বাহিনীকে আক্রমণ করে।

◾পরিস্থিতি সামলানোর জন্য আলোচনার করতে ঘটনাস্থলে যায় চিনাবাহিনীর অফিসাররা৷
ভারতীয় সেনা হঠাৎ যারা আলোচনা করতে গিয়েছিলো, সেই চিনা অফিসার ও বাহিনীর উপর হামলা চালায়৷ যার ফলে উভয় পক্ষের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ হয় এবং দু’তরফেই হতাহতের ঘটনা ঘটে।

◾ভারত দু’দেশের মধ্যে গৃহীত চুক্তি
ধারাবাহিকভাবেই লঙ্ঘন করে চলেছে। সীমান্ত এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে চিন ও ভারতের মধ্যে একাধিক চুক্তি ও প্রোটোকল রয়েছে। ১৯৯৩ সালে এবং ১৯৯৬ সালে চিন-ভারত সীমান্ত এলাকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বা LAC বরাবর শান্তি বজায় রাখা এবং LAC -তে সামরিক ক্ষেত্রে নির্মাণ চুক্তির দ্বিতীয় অনুচ্ছেদের সঙ্গে ভারতের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

◾আমরা ভারতকে গোটা ঘটনার তদন্ত করার অনুরোধ করছি৷ সীমান্তে কর্তব্যরত ভারতীয় সেনাদের কঠোরভাবে শৃঙ্খলাবদ্ধ করতে অনুরোধ করছি এবং ১৫ জুনের মতো ঘটনা আর যাতে না ঘটে সেজন্য সব ধরনের উস্কানিমূলক কাজ অবিলম্বে বন্ধ করতে অনুরোধ করছি৷

Previous articleকেন্দ্রের একাধিক প্রকল্প থেকে বঞ্চিত বাংলার মানুষ, রাজ্য সরকারের ঘাড়ে দায় চাপালেন দিলীপ
Next articleজুলাইয়ের মাঝামাঝি মাধ্যমিকের ফলপ্রকাশ করতে পারে পর্ষদ