টালিগঞ্জে মহিলা খুনে পুলিশি জেরায় উঠে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য, জানলে শিউরে উঠবেন!

মাঝবয়সী এক মহিলাকে টালিগঞ্জ এলাকা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে গলা কেটে খুন করে পেশায় অ্যাপ ক্যাব চালক এক যুবক। তারপর বাইপাস সংলগ্ন এলাকায় মৃতদেহ ফেলে পালায়। পুলিশ অবশ্য অভিযুক্তকে ধরতে খুব বেশি সময় নষ্ট করেনি। প্রাথমিক ভাবে জানা যায়, মহিলা ওই যুবকের কাছে ধারের টাকা চাইতেই সেই আক্রোশ থেকে খুন। জেরায় এমনটাই জানিয়েছিল অভিযুক্ত যুবক শিবশঙ্কর দাস।

কিন্তু কীভাবে খুন এবং দেহ লোপাটের চেষ্টা, খুনের অস্ত্রই বা কোথায়? তার পরের ঘটনা জানাতে গিয়ে অভিযুক্ত শিবশঙ্কর পুলিশি জেরায় যা বলেছে, তা শুনলে আতঁকে উঠতে হয়। শিউরে উঠতে হয়!

জেরায় অভিযুক্ত খুনের কথা স্বীকার করার পর জানিয়েছে,
লক্ষ্মী দাস নামের বছর ৪৫-এর ওই মহিলাকে ক্যাবের মধ্যেই খুন করে তাঁর দেহ নিয়ে দিনভর শহরের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেরিয়েছে সে। উদ্দেশ ছিল, একটু অন্ধকার নামলেই দেহ লোপাটের। কিন্তু রাস্তাঘাটে লোক থাকায় সেই সুযোগ সে পাচ্ছিল না। অবশেষে গভীর রাতে ইএম বাইপাস সংলগ্ন চৌবাগার কাছে একটি খালে দেহ ফেলে চম্পট দেয় সে।

এ দিকে পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে নিখোঁজ মহিলার খোঁজ শুরু করে পুলিশ। তদন্তের সূত্র ধরে রাতেই উদ্ধার হয়
লক্ষ্মী দাসের মৃতদেহ। কিছুক্ষণের মধ্যেই গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্ত অ্যাপ ক্যাব চালককে। দু’জনেই মুদিয়ালি এলাকার ৪ নম্বর দেশপ্রাণ শাসমল রোডের বাসিন্দা।

জেরায় অভিযুক্ত জানায়, লক্ষ্মী দাসকে সে দক্ষিণ কলকাতার সাদার্ন অ্যাভিনিউ চত্বরে খুন করেছে। লক্ষ্মী মুদিয়ালি এলাকায় বিভিন্ন বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন। অন্য দিনের মতো ঘটনার দিন, শুক্রবারও সকালে কাজে বেরোন লক্ষ্মী। কিন্তু দুপুরের নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর বাড়ি না ফেরায় তাঁর খোঁজ শুরু করে পরিবারের লোকেরা। বাড়ির লোকেরা জানতে পারেন, লক্ষ্মী সকাল সাড়ে ১০ টা নাগাদ একটি বাড়ির কাজ শেষ করে বেরিয়ে আসে। এরপর থেকে সে নিখোঁজ। পরের যে বাড়িতে তাঁর যাওয়ার কথা ছিল সেখানে তিনি যাননি। লক্ষ্মীর ফোনও সুইচড অফ ছিল। খুব স্বাভাবিকভাবেই উৎকন্ঠা বাড়তে থাকে বাড়ির লোকের।

দীর্ঘক্ষণ স্ত্রী’র খোঁজ না পেয়ে চারু মার্কেট থানায় অভিযোগ জানান লক্ষ্মীর স্বামী। লক্ষ্মীর হঠাৎ নিরুদেশ হওয়ার খবর এলাকায় চাউর হতেই অনেকে জানান, পাড়ার ক্যাব চালক শিবশঙ্করের সঙ্গে তাঁকে দেখা গিয়েছে। খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায়, শিবশঙ্করও বেপাত্তা।

এরপরই পুলিশ ধীরে ধীরে গিঁট খুলতে শুরু করে। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে, বেশ কয়েক মাস আগে শিবশঙ্করকে ক্যাবের কিস্তির মেটানোর জন্য ৩০ হাজার টাকা ধার দিয়েছিল লক্ষ্মীর কাছ থেকে। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও সেও টাকা ফেরতের নামগন্ধ করেনি শিবশঙ্কর। এ নিয়ে লক্ষ্মীর সঙ্গে কয়েকবার বচসাও হয় শিবশঙ্করের। সে জেরার সময় পুলিশের সামনে সে কথাও স্বীকার করে। তার বিরুদ্ধে খুনের মামলা শুরু করেছে টালিগঞ্জ থানার পুলিশ।

এরপর জেরায় অভিযুক্ত যেটা স্বীকার করেছে, তা আরও চাঞ্চল্যকর। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ রাস্তায় লক্ষ্মীর সঙ্গে দেখা হয়ে যায় তার। লক্ষ্মী ফের টাকা চাইলে তাঁকে টাকা দেওয়ার নাম করে নিজের গাড়িতে বসিয়ে নেয় শিবশঙ্কর। এরপর সাদার্ন অ্যাভিনিউতে একটু ফাঁকা জায়গা দেখে রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে আচমকাই লক্ষ্মীর গলায় ধারাল অস্ত্রের কোপ মারে শিবশঙ্কর। ক্যাবের মধ্যেই মৃত্যু হয় লক্ষ্মীর। তারপর দেহ লোপাটের জন্য শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে থাকেন শিবশঙ্কর। শেষ পর্যন্ত রাতের দিকে রুবি মোড় থেকে কিছুটা ভিতরে খালের মধ্যে দেহটা ফেলে পালিয়ে আসে সে।

অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর এলাকা থেকে শিবশঙ্করের রক্তমাখা ক্যাব গাড়ি উদ্ধার করে পুলিশ। খুনের অস্ত্রটিও উদ্ধার হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

তবে প্রাথমিক ভাবে টাকা চাওয়ার জন্যই খুন বলে জেরায় শিবশঙ্কর জানালেও, এর পিছনে অন্য কোনও কারণ আছে কিনা, খতিয়ে দেখছে পুলিশ। অপেক্ষা করা হচ্ছে ময়না তদন্তের রিপোর্টেরও।

Previous articleআয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময়সীমা বাড়ল , জেনে নিন শেষ তারিখ
Next articleসৌজন্যের নজির: “বড় দিদি হিসেবে পাশে আছি”, লকেটকে মমতা