Sunday, November 9, 2025

গাছে উঠে রোদ পোহাচ্ছে নীলাভ ভেড়া, মনের আনন্দে ঘুরছে রেড পান্ডা, কিশোর সাহার কলম

Date:

Share post:

কিশোর সাহা

এ এক অন্য দার্জিলিং!

যেখানে গায়ে রোদ মেখে গড়াগড়ি খায় রেড পান্ডা। বিরল প্রজাতির স্যালামান্ডার ছানাপোনা সহ সাঁতরে বেড়ায় ক্যামেরার সামনে। নীলাভ ভেড়া গাছে উঠে বসে ছবি তোলার পোজ দেয়। তুষার চিতা অলসভাবে ঘুরে বেড়ায় খাঁচার মধ্যে থাকা খোলা জায়গায়।

হ্যাঁ, দার্জিলিঙের পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান জুলজিক্যাল পার্ক বা দার্জিলিং চিড়িয়াখানায় এখন এমনই চমৎকার ছবি দেখা যাচ্ছে। সৌজন্যে, করোনা ও লকডাউন। কারণ, মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে বন্ধ রয়েছে চিড়িয়াখানা। যেখানে সারা বছরে প্রায় ৪ লক্ষ পর্যটকের ভিড় উপচে পড়ে, সেখানে এখন শুধুই বাতাসের শব্দ, পশুপাখির আওয়াজ।
পর্যটকবিহীন দার্জিলিঙের জনজীবন যখন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড না থাকায় বিধ্বস্ত, সে সময়ে প্রায় ৭ হাজার ফুট উঁচুতে থাকা পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান জুলজিক্যাল পার্কের পশুপাখিরা যেন নির্জনতা চেটেপুটে উপভোগ করে চলেছে।

সাধারণত, রেড পাণ্ডার দেখা পেতে পর্যটকদের দূরবীণ নিয়ে যেতে হয়। স্যালামান্ডারের হদিস পাওয়াই ভার। ব্লু শিপ বা নীলাভ ভেড়ার দেখা পাওয়া বিস্তর কঠিন। অথচ এখন এরা প্রায় সকলেই দিনভর খোলামেলাভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। চিড়িয়াখানার কয়েকজন কর্মী জানান, লোকজন আসা পুরোপুরি বন্ধ থাকায় পশুপাখিদের আচরণও বদলে গিয়েছে। ক্যামেরা, মোবাইলে সেলফি তোলার জন্য হুড়োহুড়ি অথবা চেঁচামেচি না থাকায় বন্দি পশুপাখিগুলি খাঁচার আশেপাশের মুক্ত এলাকায় দিনভর বিচরণ করছে।

প্রায় আড়াই দশক ধরে দার্জিলিংয়ে রয়েছেন চিত্রশিল্পী তথা হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিংয়ের কিউরেটর চন্দ্রনাথ দাস। তিনি জানান, গত ১০ বছরের মধ্যে একটিবারের জন্যও স্যালামান্ডারের দর্শন পাননি তিনি। অথচ থাকেন ওই চিড়িয়াখানা লাগোয়া ইন্সটিটিউটের আবাসনেই। সেই চন্দ্রনাথবাবু এখন দেখতে পান, ছানাপোনা সহ স্যালামান্ডার কখনও জলের উপরে উঠে ঘুরছে আবার কখনও ভুস করে ডুব দিচ্ছে। কথনও দেখছেন, ব্লু শিপ গাছে চড়ে বসে রোদ পোহাচ্ছে।

যে লাল পাণ্ডা পর্যটকদের দেখলেই গা ঢাকা দেয়, তারাই এখন দিনভর খোলা জায়গায় গড়াগড়ি দেয়। বাঁশের কচি পাতা খেতে থাকে খোলা জায়গায় এসে। তুষার চিতা, হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার, টাকিনের দেখা তো অহরহ মিলছে।

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকায় দার্জিলিং যখন পুরোপুরি বিষাদে ডুবে রয়েছে, সে সময়ে কোলাহল মুক্ত পরিবেশ পেয়ে চনমনে হয়ে উঠেছে বিরল প্রজাতির ওই পশুপাখিরা।

spot_img

Related articles

ফর্ম বিলি করতে গিয়ে ব্রেন স্ট্রোক! SIR-আতঙ্কে মৃত্যু এবার BLO-র

কারো নাম নেই ভোটার তালিকায়, কারো পরিচয়ে ভুল। এই সব আতঙ্কে যখন রাজ্যে একের পর এক সহনাগরিকদের মৃত্যু...

সংকটে ভারতীয় ফুটবল, কঠিন সময়ে সরব হলেন ইস্টবেঙ্গলের দুই তারকা

ভারতীয় ফুটবলে বিপণন করার কেউ নেই।দেশের সর্বোচ্চ লিগ না হলে একেবারে তৃণমূল স্তর থেকে ভারতীয় ফুটবল ক্ষতিগ্রস্ত হবে।...

কীভাবে দত্তাবাদে খুন স্বর্ণ ব্যবসায়ী: এবার তদন্তে গোয়েন্দা বিভাগ

পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনের বাসিন্দা। সোনার ব্যবসা করতেন নিউটাউনের দত্তাবাদে। দেহ পাওয়া গেল যাত্রাগাছির কাছে। খুনে নাম জড়ালো জলপাইগুড়ির...

‘ভূত বিড়াল’ কি শুধুই কল্পনার কাহিনী? বাস্তবে কোথায় দেখা গেল চাঁদনি রাতের বিড়াল

কালো নয়। ডোরা কাটাও নয়। বন বিড়াল। তবে সাদা। দেখা যায় শুধুই চাঁদনি রাতে। মানুষের থেকে ভূতের সঙ্গেই...