“অনেক রোগী চিকিৎসাধীন, না হলে সাসপেন্ড করা হতো লাইসেন্স”, ডিসানকে হুঁশিয়ারি স্বাস্থ্য কমিশনের

রোগী ভর্তির সময় অগ্রিম টাকা দিতে দেরি হয়েছিল। তাই অ্যাম্বুল্যান্স থেকে নামানোই হয়নি রোগীকে। চিকিৎসা করা তো দুরস্ত । হাসপাতালের সামনে অ্যাম্বুল্যান্সেই মৃত্যু হয় রোগীর। ডিসান হাসপাতালের বিরুদ্ধে ওঠে এমনই অভিযোগ। বিনা চিকিৎসায় রোগীমৃত্যুর অভিযোগের ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের হয় স্বাস্থ্য কমিশনের।  মামলার শুরুতেই ১০ লক্ষ টাকা জমা রাখতে ডিসান হাসপাতালকে নির্দেশ দিল রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশন। কমিশন জানিয়েছে, “মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত রোগীদের থেকে অগ্রিম নয়। রোগী ভর্তির সময় অগ্রিম নিতে পারবে না ডিসান হাসপাতাল।”

এই বিষয়ে স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের বলেন, “ডিসানের বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগটি অত্যন্ত গুরুতর। হাসপাতালের লাইসেন্স সাসপেন্ড করা উচিত ছিল। কিন্তু অনেক রোগী চিকিৎসাধীন, তাই সাসপেন্ড করা হল না।”

ঠিক কী ঘটেছিল?

গত ১২ অগাস্টের ঘটনা। পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের বাসিন্দা লায়লা বিবির করোনা রিপোর্ট পজেটিভ আসে । তাঁর পরিবারের অভিযোগ, বিকেল পাঁচটা নাগাদ ডিসান হাসপাতালে গিয়ে রোগিণীর পরিবার ৫০ হাজার টাকা টোকেন মানি জমা দেন। রাত নটায় আইসিইউ অ্যাম্বুল্যান্সে রোগীকে নিয়ে যাওয়া হয় ডিসান হাসপাতালে। এরপর একজন চিকিৎসক এসে দেখে যাওয়ার পর ডিসান হাসপাতালের তরফে বলা হয়, রোগী ভর্তি করতে গেলে ৩ লক্ষ টাকা জমা দিতে হবে।

পরিবারের সদস্যরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানান সেদিনের মতো তাঁদের ডেবিট কার্ড থেকে টাকা তোলার লিমিট শেষ হয়ে গিয়েছে। অভিযোগ, সেকথা কিছুতেই শুনতে চায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এরপর ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে আরও ৩০ হাজার টাকা জমা দেওয়া হয়। কিন্তু মোট ৮০ হাজার টাকা জমা দিলেও রোগীকে ভর্তি করতে চায়নি ডিসান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তিন লক্ষ টাকা না দেওয়া হলে রোগী ভর্তি নেওয়া যাবে না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয় হাসপাতালের তরফে।

পরিবারের তরফ থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত সময় চাওয়া হয়।
এদিকে দীর্ঘক্ষণ চিকিৎসা না পেয়ে অ্যাম্বুল্যান্সের মধ্যে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে রোগীর । এরপর নিরুপায় হয়ে তাঁর পরিবার দুবাইয়ে থাকা এক আত্মীয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ ডিসান হাসপাতালের অ্যাকাউন্টে আরও ২ লক্ষ টাকা অনলাইন ট্রান্সফার করা হয়। রাত দশটা নাগাদ টাকা ট্রান্সফারের কথা স্বীকার করে ডিসান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। টাকা পাওয়ার পর রাত ১০টা ২০-তে অবশেষে এক চিকিত্‍সক অ্যাম্বুল্যান্সের সামনে আসেন রোগী দেখতে ।  কিন্তু ততক্ষণে দীর্ঘক্ষণ কষ্ট ভোগ করে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয় রোগীর।

প্রসঙ্গত, চলতি মাসের শুরুতেই রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশন অ্যাডভাইসরি জারি করে বলেছিল, ভর্তির সময় রোগীর চিকিত্‍সা বাবদ সম্ভাব্য খরচের ২০ শতাংশের বেশি টাকা নেওয়া যাবে না। মৃতের পরিবারের অভিযোগ অনুযায়ী, স্বাস্থ্য কমিশনের সবকটি নির্দেশিকাই লঙ্ঘন করেছে ডিসান হাসপাতাল। মৃত রোগীর পরিবার আনন্দপুর থানায় ডিসান হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। এরপরই শুরু হয় তদন্ত ।

Previous articleতৃণমূলের সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পেলেন মন্ত্রী শুভেন্দু
Next articleবিশ্বভারতী : সংগঠিত অপরাধ আখ্যা দিয়ে ইডি নামছে তদন্তে, তোপ দিলীপেরও