সেই রত্না-বিতর্কেই আটকে শোভন, আশায় আশায় বিজেপি

তিনি নাকি রাজ্যস্তরের নেতা, সিনিয়র, অভিজ্ঞ, হেভিওয়েট!

অথচ তাঁর রাজনীতির অঙ্ক আটকে স্রেফ ব্যক্তিগত ঝামেলায়।
তিনি নাকি তৃণমূলের বিরুদ্ধে অন্যতম মুখ হবেন।
অথচ নিজের স্ত্রীর সঙ্গে ঝামেলা সামলাতেই তিনি হিমশিম।

শোভন চট্টোপাধ্যায় বিজেপিতেই থাকবেন, না তৃণমূলে ফিরবেন; এই জট আটকে স্রেফ রত্না চট্টোপাধ্যায়তে।

শোভন এবং তাঁর বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দুই শিবিরের কথাই চলছে।
কিন্তু এত ব্যক্তিগতস্তরের ঝামেলা রাজনীতিতে আসছে যে তৃণমূলেরই একটা অংশ তিতিবিরক্ত।

সোমবার রটে যায় শোভনের ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে রত্নাকে। এই দাবি ছিল শোভনদের। ফলে খবর রটে তাঁর তৃণমূলে ফেরার দরজা খুলছে। এরপর দেখা যায় জটিলতা হয়েছে। রত্না একাধিক সংবাদমাধ্যমে পাল্টা মুখ খুলছেন। এই সময় ফোনে বৈশাখীর সঙ্গে কথা বলেন বিজেপির কৈলাস। অরবিন্দ মেনন যান শোভনদের বাড়ি। এতদিন পাত্তা না দিলেও ভোটের মুখে শোভনকে ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে নামে বিজেপি। মঙ্গলবারও যা খবর, রত্নাকে ঘিরেই আটকে শোভনের ” হেভিওয়েট রাজনীতির” ভিবিষ্যৎ অভিমুখ।

সূত্রের খবর, গোটা ঘটনায় তৃণমূলের একটি বড় অংশ তিতিবিরক্ত। যেখানে দল ও নেত্রী শোভনকে ফেরাতে চান, সেখানে রত্নাকে ঘিরে প্রয়োজনের বেশি জেদাজেদি করে জট বাড়াচ্ছেন শোভনরা। এক নেতার মতে,” শোভন যখন নিজের ওয়ার্ডের কোনো কাজ করেনি, বাইরে বসে ছিল, তখন দলের নির্দেশে রত্না যথেষ্ট খেটেছে। এখন ওকে পুরো বাদ দেওয়ার জন্য বাড়াবাড়ি করা হচ্ছে। দল যতটা সম্ভব পথ তৈরি করলেও লেবু কচলে তেতো করা হচ্ছে। এরপর যা ইচ্ছে শোভন করতে পারেন। তিনি এবং বৈশাখী প্রকাশ্যে বিজেপি করুন। দল বুঝে নেবে।”
শোভনশিবিরের খবর, বৈশাখী শোভনের বিজেপির হয়ে নামাটা ঠেকিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু এখন রত্নার ” অপমানকর” কথার পর তিনি আর বাধা দেবেন না।

বিজেপির এক শীর্ষনেতা বলেন,” শোভনকে কেউ বিজেপি করতে বাধা দেয়নি। কিন্তু সব জায়গায় বৈশাখীকে নিয়ে ঘোরা চলবে না। ওসব তৃণমূলে হয়। আমরা এসব বরদাস্ত করব না। ব্যক্তিগত সম্পর্ক বাড়িতে রেখে এলে সম্মান পাবেন।”

পার্থ চট্টোপাধ্যায় শোভন- বৈশাখীকে ফেরানোর ফর্মুলা করছিলেন। তিনিও ভয়ানক বিরক্ত। তাঁর ঘনিষ্ঠসূত্রের বক্তব্য, ব্যক্তিগত সমীকরণ দলের উপর চাপিয়ে দেওয়ার একটা সীমা আছে। একটা পর্যায়ের পর এসব বাড়াবাড়ি হজম করা যায় না। তাতে আর যাই হোক, তৃণমূলের কোনো ক্ষতি হবে না।

সূত্রের খবর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শোভনকে ফেরাতে রাজি। কিন্তু রত্নাকে রাজনৈতিকভাবে বধ করার খেলাটা তাঁর উপর দিয়েই চালাতে চাইছেন শোভনরা বলে ধারণা হয়েছে। এটা অত্যন্ত বিরক্তিকর।

এক বিশিষ্ট তৃণমূল নেতা বলেন,” কানন যেমন মমতার স্নেহধন্য; রত্নাও মমতার বহুদিনের চেনা। শোভনের নিজের ঘরের ঝামেলায় বারবার দলের সমস্যা হচ্ছে। এর থেকে ওর যা ইচ্ছে ও করুক। ক্ষমতা থাকলে ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডে বা বেহালা পূর্বে বিজেপির হয়ে দাঁড়াক। সৌজন্যকেও এখন ব্যক্তিগত দরাদরিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।”

বিজেপির খবর, শোভনকে নেতা হিসেবে আদৌ পাত্তা দেন না তাঁরা। কিন্তু ভোটের মুখে দলত্যাগ চান না বলেই আপাতত আলোচনা করে ধরে রাখার চেষ্টা হবে। মূলত দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধ শিবির এই খেলায় সক্রিয়।

একটি সূত্র বলছে, নিজেকে নতুন করে বিতর্কে জড়াতে চান না বৈশাখী। তবে শোভন ভেসে উঠলে বৈশাখী যে সমালোচনার লক্ষ্য হয়ে উঠবেন, সেটা স্পষ্ট। বিজেপি, তৃণমূল দুই শিবিরই এনিয়ে একই কথা বলছে।

সর্বশেষ খবর, রত্না-জটেই আটকে বিশিষ্ট “রাজ্যস্তরের নেতা” শোভন। তৃণমূল তিতিবিরক্ত। বিজেপি এই সুযোগ আপাতত কাজে লাগাতে চাইছে, বাকিটা পরে দেখা যাবে।
অরবিন্দ মেনন বিজেপিশিবিরে বলেছেন,” শোভন বিজেপিতে থেকে যাবেন, কথা বলে আশাবাদী তিনি।”

Previous articleকলকাতা পুরসভায় প্রশাসক নিয়োগে অর্ডিন্যান্সের কোনও প্রয়োজন নেই , নির্দেশ হাইকোর্টের
Next articleএকই পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক মা ও মেয়ের! মর্মান্তিক পরিণতি তরুণীর