অনড় প্রশান্ত ভূষণকে কি জেলেই পাঠাবে শীর্ষ আদালত ?

দেশের বিচারব্যবস্থা আজ কঠিন পরীক্ষার সামনে দাঁড়িয়ে৷ চরমতম এক স্নায়ুযুদ্ধের মধ্যে শীর্ষ আদালত৷

এক আইনজীবীর অনমনীয় মনোভাবে ক্রমশই অস্বস্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের ৷

আদালত অবমাননার মামলায় দোষী সাব্যস্ত
শীর্ষ আদালতের বিশিষ্ট আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণকে তাঁর অবস্থান পুনর্বিবেচনার জন্য ২৪ আগস্ট পর্যন্ত সময় দিয়েছিলো শীর্ষ আদালত। বলা হয়েছিলো, ওই তারিখের মধ্যে প্রশান্ত ভূষণ নিঃশর্ত ক্ষমা না চাইলে ২৫ আগস্ট শাস্তি ঘোষণা করা হবে৷ এই নির্দেশই দিয়েছিলেন বিচারপতি অরুণ মিশ্র, বিচারপতি বি আর গাভাই এবং বিচারপতি কৃষ্ণ মুরারির বেঞ্চ।

আদালত নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার মুখেই প্রশান্ত ভূষণ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি ক্ষমা চাইবেন না৷ আইন অনুযায়ী যা শাস্তি হবে, তা তিনি মাথা পেতে নেবেন।

প্রশান্ত ভূষণের এই মনোভাবে ‘কঠিন’ পরীক্ষার মুখে পড়েছে দেশের শীর্ষ আদালত৷ একদিকে নিজেদের ঘোষনা করা রায় কার্যকর করার তাগিদ ও বাধ্যকতা৷ অন্যদিকে গোটা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ আইনজীবী, একাধিক প্রাক্তণ বিচারপতি, বিশিষ্ট সমাজকর্মীরা এবং অবশ্যই সাধারণ মানুষের আওয়াজ, আবেগ৷ কোন পথে হাঁটবে সুপ্রিম কোর্ট ? শীর্ষ আদালতের পূর্ববর্তী নির্দেশ বহাল রাখা হলে বিচারপতি অরুণ মিশ্রের নেতৃত্বাধীন এজলাশ আজ, ২৫ আগস্ট-ই আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণকে জেলে পাঠাবেন অথবা জরিমানা করবেন অথবা দুই সাজা একসঙ্গেই দেবেন৷ ভূষণের শাস্তি ঘোষণা করার পরবর্তী পরিস্থিতি ঠিক কেমন হতে পারে, সে সম্পর্কে সঠিক ধারনা কারোরই নেই৷ তবে এটা নিশ্চিত, দেশজুড়ে বিস্ফোরনের আশঙ্কা রয়েছে পুরোমাত্রায়৷ আইনিমহলের একাংশের ধারনা, পরিস্থিতি এড়াতে আজ, মঙ্গলবার, সুপ্রিম কোর্ট ফের সময় দিতে পারে প্রশান্ত ভূষণকে৷ অথবা নিছক এক সতর্কবার্তাকেই সাজা হিসাবে ঘোষণা করতে পারে৷

আদালত নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার মুহুর্তে সোমবার এক বিবৃতি দিয়ে প্রশান্ত ভূষণ বলেছেন, “ক্ষমা অন্তর থেকে চাওয়া উচিত। আমি যদি আন্তরিক না হয়ে ক্ষমা চাই তা হলে সেটা আমার বিবেকের অবমাননা হবে। সে ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের অবমাননা হবে।” বলেছেন, “আইন অনুযায়ী যা শাস্তি হবে, তা তিনি মাথা পেতে নেবেন। কিন্তু ক্ষমা চাইবেন না”।

শীর্ষ আদালত অতীতে এমন অস্বস্তিকর অবস্থায় আগে কখনও পড়েছে বলে প্রবীণ আইনজীবীদের কেউই মনে করতে পারছেন না৷

নিজের করা টুইট নিয়ে ক্ষমা তো চাইলেনই না, উল্টে সুপ্রিম কোর্ট এবং প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদের তীব্র সমালোচনা করলেন আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ।

প্রশান্ত ভূষণের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার এই মামলার কারন, প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে নাগপুরে একটি বিখ্যাত ব্র্যান্ডের মোটরবাইকে চড়ে রয়েছেন, এমন একটি ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর প্রশান্ত ভূষণ টুইট করেছিলেন, ‘‘এ সব দিকে নজর না-দিয়ে প্রধান বিচারপতি দামী মোটরবাইকে চড়ছেন।’’ প্রধান বিচারপতির মাথায় হেলমেট নেই কেন, তা নিয়েও প্রশ্নও তোলেন ভূষণ।

দ্বিতীয় আরও একটি টুইটে সর্বোচ্চ আদালতের কাজ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন প্রবীণ এই আইনজীবী। এর পরই প্রশান্তের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার একটি মামলা দায়ের হয়। সেই মামলায় গত ১৫ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে।
এই মামলার
শুনানি চলাকালীন প্রশান্ত ভূষণ সওয়ালে যুক্তি দেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা তাঁর গণতান্ত্রিক অধিকার। সেই অধিকারের জোরেই তিনি টুইটে নিজের কথা বলেছেন। এতে বিচার প্রক্রিয়ায় কোনও বাধা পড়েনি, আদালতের ভাবমূর্তিও নষ্ট হয়নি। এই যুক্তি দিয়েই তিনি সেদিন জানিয়েছিলেন, নিজের টুইটে যা বলেছেন, তা থেকে সরবেন না। সওয়ালে তিনি বলেছিলেন, “প্রধান বিচারপতির যুক্তি মেনে বক্তব্যের ওই অংশটুকুই শুধু প্রত্যাহার করতে পারি , যেখানে হেলমেট না-পরার কথা বলা রয়েছে।”

এতে সন্তুষ্ট না হয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রশান্ত ভূষণকে দোষী ঘোষণা করে৷
সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ে বলা হয়েছে, “বিচার ব্যবস্থা গণতন্ত্রের প্রধান স্তম্ভ। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে নিরাপদ রাখে আদালত ও বিচারব্যবস্থা। তাই বিচারপতি বা আদালতের কাজকর্ম নিয়ে সমালোচনা বা অসন্তোষ প্রকাশ গণতন্ত্রের উপরে আক্রমণেরই সামিল। প্রশান্ত ভূষণের মতো অভিজ্ঞ আইনজীবীর কাছে তা আশা করা যায় না। তিনি আদালত অবমাননা করেছেন।”

আজ গোটা দেশের নজর থাকবে শীর্ষ আদালতের দিকে৷ নজর থাকবে প্রশান্ত কিশোর এবং তাঁর সহযোদ্ধাদের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকেও৷

Previous articleসিঙ্গাপুর বণিকসভা : মন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শদাতা কমিটিতে বাংলার প্রসূন
Next articleভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়ালো ৩১ লক্ষ, মৃত্যু ৬০ হাজার ছুঁইছুঁই