বিদ্রোহের ভয়ে সুশান্ত ঘোষের শাস্তির খবর নেই দলীয় মুখপত্রে, কণাদ দাশগুপ্তর কলম

কণাদ দাশগুপ্ত

‘হেলে ধরাল মুরোদ নেই, কেউটে ধরতে নেমেছে’৷

রেজ্জাক মোল্লার সেই বহুচর্চিত লাইনটি এতদিনে অক্ষরে অক্ষরে সত্যি করে ছাড়লো আলিমুদ্দিন ৷

দলবিরোধী কথা বলা এবং হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তি থাকার গুরুতর অভিযোগ এনে শুক্রবার প্রাক্তণ মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষকে ‘কঠোর’ শাস্তি দিয়েছে সিপিএম রাজ্য কমিটি৷ ‘কঠোর’ শাস্তি মানে মাত্র ৩ মাসের জন্য তাঁকে দল থেকে সাসপেন্ড করেছে সিপিএম। অপরাধ আর সেই অভিযোগের ভিত্তিতে শাস্তির বহরেই স্পষ্ট হয়, হেলে ধরার যোগ্যতাহীন কিছু মানুষের হঠাৎ শখ হয়েছিলো কেউটে ধরার৷ ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে৷ সামনে ‘কেউটে’ না থাকা সত্ত্বেও ভয়ে নীল হয়ে গিয়েছে সিপিএমের লাল নিশান৷

পদে পদে সুশান্ত ঘোষকে ভয় পাওয়ার ছাপ রেখেই চলেছে রাজ্য সিপিএম৷ প্রথমে শাস্তির চেহারা, তারপর সেই শাস্তির কথা ‘সাজাপ্রাপ্ত’কে না জানানো এবং সর্বশেষে দলের “শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে” গ্রহণ করা এতবড়
সিদ্ধান্তের কথা শনিবারের দলীয় মুখপত্রেই ব্ল্যাক-আউট করা৷ সুশান্ত ঘোষের মতো হেভিওয়েট নেতাকে সাসপেন্ড করার মতো ঘটনাও যদি দলীয় মুখপত্র ছাপা না হয়, তাহলে ওই মুখপত্র কোন বার্তা দিয়ে চলেছে দলের সদস্য- সমর্থকদের ?

আরও পড়ুন- Big Breaking:  লাভপুর হত্যাকাণ্ডে মুকুলের নাম নিলেন ধৃত আনারুল

ভয়, স্রেফ ভয়৷ ভয়ে কার্যত কুঁকড়ে রয়েছে রাজ্য সিপিএম৷ সুশান্ত ঘোষের মতো জনভিত্তি থাকা নেতাকে শাস্তি দেওয়ার কথা কমরেডদের কানে গেলে বিদ্রোহ হতে পারে, এই আশঙ্কাতে এবং
বিদ্রোহ ঠেকাতে ৫ সেপ্টেম্বরের ‘গণশক্তি’তে প্রকাশিতই হলো না ৩ মাসের সাসপেন্ড করার বিজ্ঞপ্তি! অথচ এ ধরনের শাস্তির বিজ্ঞপ্তি অথবা খবর দলীয় মুখপত্রে ছেপে দেওয়াই দলের রীতি৷ সুশান্ত ঘোষের বেলায় সেই রীতিটিও যত্ন করে শিকেয় তুলে রেখেছে আলিমুদ্দিন ৷

আরও মজার কাজও একইসঙ্গে সেরেছে রাজ্য সিপিএম ৷ শুক্রবার সিপিএম রাজ্য কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে সুশান্ত ঘোষকে দল থেকে সাসপেন্ড করার পাশাপাশি রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে সিপিএম রাজ্য কমিটির বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্য করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ শনিবারের ‘গণশক্তি’-তে সুশান্ত’র খবর সেন্সর করা হলেও তিনের পাতার প্রথম কলমের মাথায় ৮ লাইন খবর হয়েছে, “রাজ্য কমিটিতে বিকাশ ভট্টাচার্য”৷ একই দল, একই রাজ্য কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত৷ দু’টি সিদ্ধান্তের সঙ্গেই দলের দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতা যুক্ত, ‘গণশক্তি’ একটি খবর করেছে, দ্বিতীয় খবর এড়িয়েছে৷ পুরো ‘স্ট্যান্ড-আপ কমেডি’৷

আরও পড়ুন- এবার বিনামূল্যে চিকিৎসা করান, কলকাতা পুরসভার নয়া পোর্টাল “ডাক্তারবাবু”

যে আলিমুদ্দিন পার্টির কোনও সদস্য বা নেতাকে সাসপেন্ড বা বহিষ্কার করলে ঘটনার কারণ পুরোটা উল্লেখ করে ‛গণশক্তি’তে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, সেই সিপিএম সুশান্ত ঘোষের ক্ষেত্রে এমন ‘ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি’ মনোভাব কেন নিলো ? কেন এই ইস্যুতে নীরব থাকলেন বিমান বসু সূর্যকান্ত মিশ্ররা? ওই ভার্চুয়াল বৈঠকে তো সীতারাম ইয়েচুরিও অংশ নিয়েছিলেন, তিনিই বা চুপ কেন ?

দলের অস্তিত্বই যখন তলানিতে ঠেকেছে, সেই পরিস্থিতিতে সুশান্ত ঘোষকে সাসপেন্ড করার ‘পাপ’-এর প্রায়শ্চিত্ত করতেই এখন ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমেছে সিপিএম৷ সুশান্ত ঘোষের জনভিত্তি থাকায় এমনিতেই তাঁকে বহিষ্কার করার মতো কড়া সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস দেখাতে পারেনি না সিপিএম৷ তার উপর দলের মুখপত্রে এসব ছাপা হলে তো আলিমুদ্দিনে ঢুকেই বিক্ষোভ দেখাবেন কমরেডরা৷ সুশান্ত ঘোষের সাসপেন্ডের খবর বাইরে আসতেই শুক্রবার রাতেই পার্টির একাংশ সিপিএম নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সরব হন। বিমান-সূর্যের বিরুদ্ধে গোষ্ঠীবাজির অভিযোগ তুলে পার্টি ছাড়ার হুমকি দেন অনেকেই ৷ রাতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সুশান্ত ঘোষের পক্ষে একের পর এক কমরেডদের পোস্ট দেখা যায়৷ এ সব নিশ্চয়ই চোখে পড়েছে রাজ্য নেতাদের৷ তারপরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে গণশক্তিতে বিজ্ঞপ্তি থামায় আলিমুদ্দিন ৷

বাঘ থেকে বেড়াল হয়েছে বললে এই মুহুর্তে বেড়ালও তীব্র আপত্তি জানাবে৷ এভাবে ভয় কুঁকড়ে সম্ভবত কোনও বেড়ালও থাকেনা৷

আরও পড়ুন- ফের RICE-এর চমক, ডব্লিউবিসিএস-এ বিভাগীয় প্রথম দেবজ্যোতি মুখোপাধ্যায়