প্রতিদ্বন্দ্বী-নিকেশ অভিযানে নেমেছেন চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, উত্তাল বিশ্ব

ঘরে-বাইরে-সীমান্তে, সব প্যান্ডোরার ঝাঁপি যেন একসঙ্গেই খুলে দিচ্ছে চিন৷

আমেরিকার সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধ, ভারতের সঙ্গে সীমান্ত- বিরোধকে জিইয়ে রেখেই এবার দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করার মোড়কে নিজের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের নিকেশ করার অভিযানে নেমে পড়েছেন চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং৷ এই অভিযোগে উত্তাল গোটা চিন, বিশ্বস্তরেও এই অভিযোগ ধীরে ধীরে জাঁকিয়ে বসছে৷

আন্তর্জাতিক-সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা হামেশাই বলে থাকেন, বিংশ শতাব্দী যদি যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে থাকে, তাহলে নিশ্চিতভাবেই একবিংশ শতাব্দী হবে চিনের। দু-তিন দশক আগে যে চিনকে মনে হয়নি তারা কখনো ‘সুপার পাওয়ার’ হতে পারে, সেই চিন’ই এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমানে পাল্লা দিচ্ছে। বাণিজ্যযুদ্ধেও যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দিচ্ছে চিন। এই মুহুর্তের চিন যার হাত ধরে আন্তর্জাতিক আঙ্গিনায় কেউকেটা হওয়ার স্বপ্ন দেখছে, তিনি চিনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।

সেই শি জিনপিং-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, প্রতিদ্বন্দ্বীদের নির্মূল করতে তিনি রাজনৈতিক crackdown-এর আদেশ দিয়েছেন৷ চিনে এমন ঘটনা অতীতেও বারবার ঘটেছে৷ এবার ঘটনাচক্রে প্রকাশ্যে এসেছে বলেই আজ এতো শোরগোল উঠেছে৷ শি জিনপিং-এর এই ‘হিটলিস্টে’ দু’ডজনেরও বেশি ডাকসাইটে পুলিশকর্তা যেমন আছেন, তেমনই আছেন বিচারব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত শীর্ষ কর্তারা৷ শুধু আগস্ট মাসেই দুর্নীতির অভিযোগ এনে আরও প্রায় ডজনখানেক শীর্ষ পুলিশকর্তাকে এক ঝটকায় সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁদের পদ থেকে। তবে শি জিনপিং-এর সবথেকে বিপজ্জনক পদক্ষেপ, দুর্নীতি- নির্মূলকরণের ওই রাজনৈতিক অভিযানে টার্গেট করা হয়েছে লক্ষ লক্ষ দলীয় কমরেড- ক্যাডারদেরই৷

শি জিনপিং-এর এক ঘনিষ্ঠ সহযোগী The Wall Street Journal-কে দিনদুয়েক আগে বলেছেন, “সময় এসেছে ছুরির ধারালো অংশকে কাজে লাগিয়ে সমাজ থেকে বিষ কেটে বার করার”৷ বলেছেন, “চিনের দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারব্যবস্থাকে শুদ্ধ করতে হবে এবং কাজ না করে শুধুই কথা বলে যাচ্ছে, এমন লোকজনকে দূরে সরিয়ে চিনের কমিউনিস্ট পার্টিকে পরিষ্কার করতে হবে”। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুরুত্ব দিয়েই দুর্নীতি বিরোধী এই অভিযানে নেমেছেন শি জিনপিং”৷
WSJ-এর রিপোর্ট বলছে, চিনের দুর্নীতি বিরোধী এই অভিযানে চিহ্নিত করা হয়েছে লক্ষ লক্ষ দলীয় ক্যাডার ও কমরেডদেরও৷
দলের যে সব নেতা-কর্মী মাও জে দং-এর লাইন মেনে চলবেন, তারাই দলে দলে থাকার উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবেন৷ চিনের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, দল এবং মাও-এর অফিসিয়াল লাইন থেকে বিচ্যুত না হওয়ার জন্য৷ এর বিরোধিতা করলে দল থেকে বহিষ্কার, নির্যাতন, এমনকি মৃত্যুর মুখোমুখিও দাঁড়াতে হতে পারে।

শি-এর শাসনকালে এই ধরনের রাজনৈতিক দমন অভিযান নতুন নয়৷ ২০১২ সালে চিনের কমিউনিস্ট পার্টি সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর এই শি জিনপিং-ই তাঁর প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের নির্মূল করেছেন।
ফোর্বসের তথ্য বলছে, শি জিনপিং এই মুহুর্তে বিশ্বের সব থেকে ক্ষমতাধর ব্যক্তি। ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র ৬ বছরের মধ্যেই তিনি এই স্থানে চলে এসেছেন। জিনপিং ইতিমধ্যেই পিছনে ফেলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং
ভ্লাদিমির পুতিন’কে। এই শি জিনপিং, মাও সে তুং এর পর দ্বিতীয় নেতা, যার আদর্শ ও চিন্তাধারা জীবিত অবস্থায়ই চিনের সংবিধানে লেখা হয়েছে। ২০১৮ সালে চিনের সংসদে প্রেসিডেন্টদের টানা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকতে পারার আইন খারিজ করা হয়।

এর অর্থ, শি জিনপিং যতদিন চাইবেন ততদিন, এমনকী আজীবনও চিনের প্রেসিডেন্ট থাকতে পারবেন।

আরও পড়ুন : লাদাখের পর অরুণাচলপ্রদেশে নজর চিনের, সংঘাতের উস্কানি দিতে ছক

Previous articleসুশান্ত গেলেন, বিকাশ এলেন, সিপিএমের দুই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত
Next articleএ রাজ্যেই বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে মহিলাদের “কু-প্রস্তাব” দেওয়ার অভিযোগ