অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর ইলিশ বেশি, মাছের কেজি মাত্র ২৫০ টাকা

খায়রুল আলম (ঢাকা) : বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে বড় আকারের রুপালি ইলিশ। গত কয়েক দিন ধরেই ধরা পড়ছে প্রচুর ইলিশ। আর এতে খুশি স্থানীয় জেলেরা। পটুয়াখালির কুয়াকাটার মহিপুর-আলিপুর মৎস্য বন্দরে এসে ভিড়ছে ট্রালারভর্তি ইলিশ। বেশি পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ায় দামও কমেছে। মঙ্গলবার মহিপুর-আলিপুর মৎস্য বন্দরে সর্বনিম্ন দামে অর্থাৎ ২৫০ টাকা কেজিতে ইলিশ বিক্রি হয়েছে।

মহিপুর মৎস্য বন্দরে ইলিশ বিক্রি করতে আসা কলাপাড়ার ধানখালি ইউনিয়নের গোলবুনিয়া গ্রামের জেলে জয়নাল ফকির বলেন, প্রতিদিন সকালে আলিপুর-মহিপুর মৎস্য বন্দরে ইলিশ নিয়ে অনেকগুলো ট্রলার ভিড়ছে। প্রচুর পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ায় দামও কমেছে। ১৫ দিন আগে প্রথম গ্রেডের অর্থাৎ এক থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশের মণ ছিল ৪০ হাজার টাকা। বর্তমানে ২৪ হাজার টাকায় কিনছেন আড়তদাররা। দ্বিতীয় গ্রেডের অর্থাৎ ৭০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের মণ ছিল ৩০ হাজার টাকা। তা এখন ১৫-১৭ হাজার টাকায় কিনছেন আড়তদাররা। মাছ বেশি ধরা পড়ায় দাম কমে গিয়েছে। তবে কয়েকদিন পর দাম বেড়ে যাবে বলেও খবর।

পটুয়াখালি সদর উপজেলার পায়রাগঞ্জ এলাকার জেলে মালেক মিয়া বলেন, নদীতে আগের চেয়ে ইলিশ বেড়েছে। ইলিশ বেশি ধরা পড়ায় এখন দামও কম। আজ সকালে ৩০০-৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ২৫০-৩০০ টাকা বিক্রি করেছি।

সদর উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন বলেন, জেলেদের একেকটি জালের দাম ৫০ হাজার টাকা। নিষেধাজ্ঞার সময় এসব জাল আটক করতে গেলে জেলেরা হামলা চালায়। আগে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে অভিযানে যেতে হতো। এখন স্পিডবোটে দ্রুত সময়ে অভিযানে যাওয়া যায় এবং বেশি এলাকা পরিদর্শন করা যায়। তবে এখন জেলেরা অনেক সচেতন হয়েছেন। দু’একজন ছাড়া বাকি জেলেরা অবরোধের সময় মাছ ধরেন না। নিষেধাজ্ঞার সময় না ধরায় ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। এজন্য ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে রুপালি ইলিশ। এটিই মৎস্য বিভাগের সফলতা।
তিনি আরও বলেন, যখন দেখি অভিযানের কারণে মাছ বৃদ্ধি পেয়েছে তখন অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে। মাছ বৃদ্ধির পেছনে আমাদেরও অবদান রয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন সময় সফল অভিযানের ফলে ইলিশ-সহ সব ধরনের মাছের উৎপাদন বেড়েছে। বাজারে বড় বড় মাছ দেখলে ভালো লাগা কাজ করে। দেখে মনে শান্তি লাগে।

রাঙাবালির চরমোন্তাজ ইউনিয়নের ইলিশের আড়তদার আলাল প্যাদা বলেন, স্থানীয় জেলেদের কাছ থেকে মাছ সংগ্রহ করে ঢাকার মোকামে পাঠাই। সোমবার সকালে ১১০০-১২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ৮০০ টাকা। এক কেজি ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ৯০০ টাকা। এক কেজির ইলিশ ৭০০ টাকা। ৩০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অভিযান শুরুর আগে পর্যন্ত মাছের দাম বাড়বে না। তবে কম ধরা পড়লে বাড়বে।

চরমোন্তাজ ইউনিয়নের জেলে মালেক হাওলাদার বলেন, গত ১০ দিনে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়েছে। এখন মাছের দাম কম। গতকাল থেকে কিছুটা কম ধরা পড়ছে। তবে তিন-চারদিন পর ইলিশ কম ধরা পড়বে। তখন দাম বেড়ে যাবে।

পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা ইমদাদুল্লাহ বলেন, নিষেধাজ্ঞা সফল ও জেলেরা সচেতন হওয়ায় ইলিশের উৎপাদন ও আকার বেড়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার মাছ বেশি ধরা পড়ছে। এজন্য দাম কম। তবে ইলিশের এই উৎপাদন বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে সরকার চেষ্টা করে যাবে।

আরও পড়ুন : নারায়নগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণে মৃত্যু বেড়ে ২৬

Previous articleকঙ্গনাকে নিরাপত্তা দেওয়া নিয়ে কেন্দ্রকে কটাক্ষ মহুয়ার
Next articleপুজোর গুজব: কান ধরে ওঠবোসের চ্যালেঞ্জ মমতার