বৈশাখীকে রাজ্য কমিটিতে এনে বিজেপির রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা প্রকাশ্যে

বিজেপির রাজ্য কমিটিতে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাটকীয় অনুপ্রবেশ। ৪৮ ঘন্টা আগে যে কমিটিতে শোভনের প্রবেশ নিয়েই তীব্র অনিশ্চয়তা ছিল, সেখানে শোভন তো এলেনই, সঙ্গী বৈশাখী। এই ঘটনায় দুটি বিষয় সামনে এলো। এক, বৈশাখী পদ পাওয়ায় জলের মতো একটা বিষয় পরিষ্কার, মুকুল রায় এবার বিজেপিতে বড় পদ পেতে চলেছেন। দুই, রাজনৈতিকভাবে গেরুয়া শিবিরের দেউলিয়াপনা প্রকাশ্যে এলো।

মঙ্গলবার প্রায় ২৫০জনের বর্ধিত রাজ্য কমিটি ঘোষণা করার পরেই একের পর এক প্রশ্নে জর্জরিত হন বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব। আমন্ত্রিত সদস্য করে মুকুল রায় থেকে শুরু করে শোভনদের নিয়ে আসা হয়। তালিকায় ছিলেন না বৈশাখী। থাকার কথাও ছিল না।সে নিয়ে রাতেই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা অরবিন্দ মেনন, শিব প্রকাশের সঙ্গে কথা বলেন বিরক্ত শোভন। তাঁর রাজ্য কমিটিতে শোভনীয় পদ পাওয়া নিয়ে তিনি যত না ক্ষুব্ধ, তারচেয়ে বেশি ক্ষোভ প্রকাশ করেন ‘যোগ্য’ বৈশাখীর প্রতি অবহেলায়।

আরও পড়ুন- অবসর ভেঙে ফের ক্রিকেটে ফিরতে চান যুবরাজ

তারপর রাতেই বিজেপি রাজ্য সভাপতির সঙ্গে কথা। তাঁর ‘ডাল-ভাত’ মন্তব্যকে অতীতের খাতায় ফেলে সামনের ভোটের কথা ভাবতে বলেন। ঘরে-বাইরে চাপে থাকা দিলীপ কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বাধ্যই হন। মেননরা বোঝান, ২৫০ জনের কমিটিতে যদি আরও একজন ঢোকে এবং এতে যদি এক বছরের সমস্যার সমাধান হয়, তাতে ক্ষত কী! সেই সূত্রে গভীর রাতে সিদ্ধান্ত, শোভনের সঙ্গে রাজ্য কমিটিতে আসবেন বৈশাখী।

অরাজনৈতিক বৈশাখীর বিজেপি রাজ্য কমিটিতে প্রবেশ যে যে বিষয়গুলি সামনে রেখে গেল…

১. আপাতত শোভনের তৃণমূলে ফেরা সম্ভব নয়। তিনি বিজেপি রাজ্য কমিটিতে, আর বৈশাখীর পদ যেচে নিয়েছেন। ফলে কোনও কাজ দেখানোর আগেই ফের শিবির বদল করলে বিশ্বাসযোগ্যতাই থাকবে না। তবে রাজনীতিতে অনেক কিছু ঘটে। আর ব্যক্তির নাম শোভন চট্টোপাধ্যায় হওয়ায় ‘কিন্তু’ থেকেই যায়।

২. বিজেপি বৈশাখীকে কমিটিতে নিয়ে বুঝিয়ে দিল, একুশের ভোটে জিততে তারা কতখানি মরিয়া। দল বদলুদের ধরে রাখার বার্তা দিয়ে তারা দেখিয়ে দিতে চাইছে, যারা আসে তারা থাকতেই আসছে। সঙ্ঘের লোক না হলে টিকতে পারে না, এই অপবাদ তারা ঘোচাতে মরিয়া।

আরও পড়ুন- অগ্নিমূল্যের বাজারে ন্যায্যমূল্যে সবজি দেবে যাদবপুরের শ্রমজীবী বাজার

৩. বৈশাখীকে ধরে রাখতে যদি রাজ্য কমিটির দরজা খুলে দেওয়া হয়, তাহলে মুকুলের জন্য যে এবার বিরাট চমক অপেক্ষা! করছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মুকুল দলীয় পদ না সরকারি পদ পান সেটাই দেখার। তবে দলীয় পদ পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। আর মন্ত্রী করে চাপ তৈরির চালও চলতে পারে। রাজ্যসভায় জিতে আসতে হাতে তখন ৬মাস সময় পাওয়া যাবে।

৪. বিজেপির রাজ্য কমিটিকে দিলীপ ঘোষ আসলে গণ সংগঠনে পরিণত করেছেন। ২৫০জনের কমিটি খায় না মাথায় দেয় সেটা সকলেই জানেন। দল কারা চালাবেন, তা রাজ্য কমিটির প্রথম তালিকাতেই পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন।

৫. বিজেপি নেতৃত্ব দিলীপে ভরসা রাখলেও বিজেপিকে আরও বড় প্ল্যাটফর্মে কাজ করতে হবে, সেই বার্তাই দিলেন দিল্লির নেতৃত্ব।

৬. তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিধানসভায় লড়াইয়ে নামার আগে বিজেপি নিজেদের দেউলিয়াপনা প্রকাশ্যে নিয়ে এলো। দিল্লির শাসক দল বৈশাখীকে দলে নিতে যেভাবে আদেখলেপনা করল, তাতে দলের ইস্পাতকঠিন চরিত্র এবং সাংগঠনিক দৃঢ়তা ভেঙে খানখান।

আখেড়ে লাভ সেই তৃণমূলের।

আরও পড়ুন- আইপিএলের জন্য দুবাইয়ে পাড়ি জমালেন সৌরভ

Previous articleআইপিএলের জন্য দুবাইয়ে পাড়ি জমালেন সৌরভ
Next articleস্বাস্থ্য-রেশন থেকে কৃষি, ডেরেকের তথ্য বাণে বিদ্ধ নাড্ডা