বেলুড় মঠে করোনার ভয়াল থাবা, ৫৪ সন্ন্যাসী,১৫ কর্মী আক্রান্ত, তৈরি হচ্ছে আইসোলেশন হাউস

করোনার আগ্রাসী থাবায় এবার কার্যত টালমাটাল বেলুড় মঠ। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে ভয়াবহ চেহারা নিয়েছে। মঠ সূত্রের খবর, একসঙ্গে ৬৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বেলুড় মঠে। আক্রান্তদের মধ্যে ৫৪ জন সন্ন্যাসী এবং ১৫ জন কর্মী৷ এতজন সন্ন্যাসী ও কর্মী সংক্রমিত হওয়ায় চরম উদ্বেগে মঠ কর্তৃপক্ষ। আরও জানা গিয়েছে, করোনাভাইরাসের কোপে এখনও পর্যন্ত রামকৃষ্ণ মিশনের ৩ সন্ন্যাসীর মৃত্যু হয়েছে। তবে তাঁরা কেউই বেলুড় মঠে ছিলেন না।

গত জুলাই মাসের শেষ পর্যন্ত বেলুড় মঠে একজনও করোনায় আক্রান্ত ছিলেন না। কিন্তু তারপর থেকেই দ্রুত সংক্রমণ মঠের ভেতরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে৷ দেশের বাড়ি থেকে মঠে ফেরা এক কর্মচারী এবং মুম্বই ও কাডাপা সফরে যাওয়া দুই সন্ন্যাসীর থেকেই সংক্রমণ প্রথম ছড়ায় বলে মনে করা হচ্ছে।

পরিস্থিতি এতটাই বিপজ্জনক যে বেলুড় মঠ ডাকঘরের পিছন দিকে নির্মাণ করা হচ্ছে তিন তলা কোয়ারেন্টাইন হাউস। এটি তৈরি করতে বাজেট ধরা হয়েছে দেড় কোটি টাকা। ভবনের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করা হয়েছে৷ ভিতপুজোর পাশাপাশি রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রেসিডেন্ট স্বামী স্মরণানন্দের স্পর্শ করা ইট দিয়েই ভিত গাঁথার সূচনা করেন প্রবীণ সন্ন্যাসীরা। মঠের বয়স্ক ও অসুস্থ সন্ন্যাসীদের থাকার জন্য আগে থেকেই আছে আরোগ্য ভবন। কিন্তু করোনা-র মতো সংক্রমণের ক্ষেত্রে অসুস্থদের একসঙ্গে রাখা ঝুঁকির। সে কারনেই আলাদা থাকার ব্যবস্থা হচ্ছে বেলুড়ে৷ ৩ তলা এই ভবনে মোট ১০টি সুইট থাকবে। সেখানে চিকিৎসার পরিকাঠামোও রাখা হবে। প্রাথমিক ভাবে স্থির হয়েছে, আগামী মার্চের মধ্যে কাজ শেষ করে ওই ভবন চালু করে দেওয়া হবে।

আইসোলেশন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠান, বেলুড় মঠে

এদিকে, সংক্রমণ আচমকাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় মঠ কর্তৃপক্ষ কিছু বিধিনিষেধ এবং পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে৷ মহামারি মোকাবিলায় মঠের অভ্যন্তরে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা জানিয়ে বলা হয়েছে,

◾মঠের ভিতরে ইলেকট্রনের তরঙ্গ প্রবাহিত করা হবে। এই প্রবাহে করোনাভাইরাস বাধাপ্রাপ্ত হবে।

◾মঠের সংক্রমিতদের জন্যে কেনা হয়েছে একটি নতুন অ্যাম্বুল্যান্স।

◾মঠের মোট ৬৭৫ জন বাসিন্দার করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তার জন্যে খরচ হয়েছে ১৬.৫ লক্ষ টাকা।

◾এই পরীক্ষাতেই ধরা পড়েছে, মঠের মোট ৫৪ জন সন্ন্যাসী এবং ১৫ জন কর্মী পজিটিভ।

◾’পজিটিভ’ হলেই ১ মাস কোয়ারানটিনে থাকতে বলা হয়েছে মঠের বাসিন্দাদের।

◾ মঠের বাসিন্দাদের ‘ইমিউনিটি’ বাড়ানোর উপযোগী খাদ্য তালিকা নির্দিষ্ট করা হয়েছে৷

প্রসঙ্গত, লকডাউনের কারণে গত ২৫ মার্চ থেকে বন্ধ ছিল বেলুড় মঠ। ৮২ দিন পর, ১৫ জুন শর্তসাপেক্ষে সাধারণ মানুষের জন্য ফের খুলে দেওয়া হয় বেলুড় মঠ। তবে শুধুমাত্র ঠাকুর রামকৃষ্ণদেবের মন্দির বা মূল মন্দির, ব্রহ্মানন্দ মন্দির, সারদাদেবী ও স্বামী বিবেকানন্দের সমাধি-মন্দির দর্শন করার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল। মঠে ঢুকতে করতে হলে মাস্ক বাধ্যতামূলক। শরীরের তাপমাত্রা ৯৯ ডিগ্রি ফারেনহাইটের কম থাকতে হবে। একসঙ্গে মাত্র ১০ জন করে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু পরবর্তী পরিস্থিতি বলছে, এতকিছু করেও বেলুড় মঠে সংক্রমণ ঠেকানো যায়নি। তাই ২ আগস্ট ফের অনির্দিষ্টকালের জন্যে বন্ধ করে দেওয়া হয় মঠ। কিন্তু তাতেও যে সংক্রমণ থামেনি তা বোঝা যাচ্ছে একসঙ্গে ৬৯ জন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায়৷

বেলুড় মঠ ক্রমশই যেন করোনাভাইরাসের স্থায়ী ঠিকানা হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷

আরও পড়ুন-সংসদ অধিবেশনের প্রথম দিনেই করোনা- পজিটিভ ২৬ সাংসদ

 

Previous article৩ বছরে রোজগার ২ কোটি, পথ দেখাচ্ছে দুই বান্ধবীর যৌথ প্রয়াস
Next articleপরীক্ষা ছাড়াই পঞ্চম পাশের সার্টিফিকেট দেওয়ার নির্দেশ হাসিনা সরকারের