ভোটের মুখে রাজ্যকে চাপে রাখতে গোর্খাল্যাণ্ড নিয়ে নয়া ছক বিজেপির

লোকসভা ভোটে গোর্খাল্যান্ড নিয়ে হরেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে দার্জিলিং আসন দখল করেছিলো বিজেপি৷ তারপর থেকে আজ পর্যন্ত এই ইস্যুতে নীরব কেন্দ্রের শাসক দল৷ নীরব এই কারনেই, বাংলা ভেঙ্গে আলাদা গোর্খাল্যান্ড গঠনের সিদ্ধান্ত ব্যুমেরাং হয়ে ফিরবে গেরুয়া শিবিরে৷ কিন্তু ভোট এলেই নানা ফিকিরে এই দাবি তোলা মোটামুটি অভ্যাস করে ফেলেছে বিজেপি৷

একুশের বিধানসভা নির্বাচনেও গোর্খাল্যান্ডকে সামনে এনে রাজ্য প্রশাসনকে চাপে ফেলার নতুন ছক কষেছে পদ্ম-বাহিনী৷

কোনও সন্দেহ নেই কোনও বিশেষ মহলের পরামর্শে এবার অন্য রাজ্য থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে গোর্খাল্যান্ডকে সমর্থন করে। চলতি মাসের ৪ তারিখ এই চিঠি লেখা হয়েছে৷ এতদিন গোপন রাখলেও, লোকসভা অধিবেশন চলাকালীন ইচ্ছা করেই ওই চিঠি ফাঁস করা হয়েছে, যাতে দেশজুড়ে বিষয়টি প্রচার পায়৷

মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা এই চিঠি দিয়েছেন৷ প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে মেঘালয়ে বিজেপির সমর্থনে ৫ দলের জোটের নেতা হিসেবে মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টি বা NPP-র নেতা কনরাড সাংমা। এই সাংমা’ই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উদ্দেশ্যে লেখা এক চিঠিতে দেশের সর্বক্ষেত্রে
গোর্খাদের অবদানের কথা উল্লেখ করে পৃথক গোর্খাল্যান্ড দাবি করেছেন। রাজনৈতিক মহলের ধারনা, মেঘালয়ের শাসকদল ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টি যেহেতু বিজেপির অন্যতম শরিক, তাই নিজেরা নীরব থেকে শরিক দলকে দিয়ে এই আওয়াজ ফের তুলে দিলো কেন্দ্রের শাসক দল। সূত্রের খবর, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে কনরাড সামাং বলেছেন, দেশকে রক্ষা করার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করছেন গোর্খারা। গোর্খারাও এ দেশের নাগরিক। তাঁদের নিজস্ব পরিচয় এবং নিজস্ব রাজ্য পাওয়ার অধিকার আছে।
চিঠিতে মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী নেতাজি সুভাষচন্দ্রের আজাদ হিন্দ ফৌজের গোর্খা সৈনিক মেজর দুর্গা মল্লর নামও উল্লেখ করেছেন৷ লিখেছেন দিগম্বর সিং গুরুং, বাহাদুর সিং গুরুং ও রাম সিং ঠাকুরির মতন গোর্খা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কথাও৷
গোর্খাল্যান্ডের পক্ষে চড়াসুরেই সওয়াল করেছেন কনরাড সাংমা৷

রাজ্যের বিধানসভা ভোট আর বেশি দূরে নেই৷ এই সময় ফের গোর্খাল্যান্ডের দাবি তুললে পাহাড়ের একাধিক আসনে তার যে প্রভাব পড়বে, এ কথা ভালোভাবেই জানে কেন্দ্র তথা বিজেপি৷ তবে বঙ্গ-বিজেপি রাজ্য ভাগ করার এই আওয়াজ তুললে তার মাশুল নরেন্দ্র মোদির দলকেই দিতে হতে পারে৷ ওদিকে, ‘পাহাড়ের-বন্ধু’ প্রমান করতেও মরিয়া বিজেপি৷
সে কারনেই বারবার বিজেপি নেতারা গোর্খাল্যান্ডের আশ্বাস দিয়ে চলেছে তারা। এ সমস্যার সমাধান যে বড়ই কঠিন, কেন্দ্র তা জানে৷ কিন্তু ভোট বড় বালাই৷ তাই এবার কৌশল বদল করে ভিন রাজ্য থেকে ফে গোর্খাল্যান্ডের আওয়াজ তোলানো হলো৷ সাংমার এই ‘দাবি’র ভিত্তিতে কেন্দ্র ফের গোর্খাল্যান্ড-ইস্যুর পক্ষে ভালো ভালো কথা বলার সুযোগ পেয়ে গেলো৷ একইসঙ্গে বাংলার সরকারকেও বাড়তি চাপে ফেলা যাবে বলেই বিজেপি মনে করছে৷ আর এই চাপেই বিধানসভা ভোটে পাহাড় তথা সংলগ্ন এলাকার আসনগুলি নিজেদের দখলে আসবে বলেই আশাবাদী বিজেপি৷ সেক্ষেত্রে পাহাড়ে ফের আগুন জকবললে, একশো শতাংশ লাভ গেরুয়া-ব্রিগেডের‌ ৷ এমন ছকেই শাহকে সাংমা চিঠি দিয়েছেন বলে রাজনৈতিক মহলের ধারনা৷

আরও পড়ুন-শেষ মুহূর্তে বদল, সরাসরি নয়, দিল্লি হয়েই লন্ডনের পথে কলকাতার বিমান

Previous article৭০-এ মোদি, ৭০ হাজার চারাগাছ লাগিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বার্থ-ডে সেলিব্রেশন গুজরাতে
Next articleউৎসবের দিনে তরুণদের অসহায় মানুষের পাশে থাকার বার্তা অভিষেকের