মোদি সরকারের পক্ষ নিয়ে রাজ্য সরকারকে বেনজির আক্রমণ রাজ্যপালের

সারাদিন টুইট ও চিঠি পাঠানোর পরে সন্ধেয় সাংবাদিক বৈঠক করে মোদি সরকারের পক্ষ নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বেনজির আক্রমণ করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। কেন কেন্দ্রের প্রকল্প রাজ্য সরকার এরাজ্যে আনতে দেয়নি? এই নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছেন রাজ্যপাল। যা দেখে বিশেষজ্ঞ মহলের মত রাজ্যপালের কথা একেবারেই বিজেপি মুখপাত্র বা নেতৃত্বের মতো।

কৃষি বিল নিয়ে যখন সংসদ উত্তাল, তার বিরোধিতা করে তৃণমূলের দুই সাংসদ-সহ রাজ্যসভার আট সাংসদ সাসপেন্ডেড- সেই অবস্থায় দাঁড়িয়ে বিলের পক্ষ নিয়ে রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন জগদীপ ধনকড়।
এই পরিস্থিতিতে ফের প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি প্রকল্প নিয়ে রাজ্যকে নিশানা করেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, কৃষি বিলের বিরোধিতা করে ফের রাজ্যের কৃষকদের কেন্দ্রের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার। এ প্রসঙ্গে রাজ্যপালের মত, কৃষাণ সম্মান নিধির আওতায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষকরা উপকৃত হচ্ছেন। কিন্তু এ রাজ্য সেই কেন্দ্রীয় সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। উল্লেখ্য, এই একই অভিযোগ করেন বিজেপি নেতা-নেত্রীরা। কৃষকদের উন্নয়নে রাজ্য সরকারের অন্য প্রকল্প বাংলায় চালু রয়েছে। কিন্তু সেটাকে নস্যাৎ করে বিজেপি নেতৃত্ব রাজ্য সরকারকে তুলোধোনা করেন। মঙ্গলবার, একই ভাষাতে রাজ্যকে আক্রমণ করেন জগদীপ ধনকড়।
তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা পেতে মধ্যস্থতাকারী দরকার নেই। দেশের সব রাজ্য এই সুবিধা ভোগ করে শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া”। এরপর বেনজির আক্রমণ করে তিনি বলেন, “কৃষকদের জন্য কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন করবেন না। তাতে কৃষকদের সমস্যা কমবে না”।
এর আগে এদিন রাজ্যপাল এনিয়ে একটি চিঠি লেখেন রাজ্য সরকারকে। চিঠিতে তিনি অভিযোগ করেন, “প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি প্রকল্পের সুবিধে নেয়নি পশ্চিমবঙ্গ। ফলে রাজ্যের ৭০ লাখ কৃষক ৮৪০০ কোটি টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ওই প্রকল্পে যোগ দিলে রাজ্যের প্রতিটি কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বিনা কমিশনে ১২ হাজার টাকা জমা পড়ত। কেন রাজ্যের কৃষকরা টাকা পায়নি এই প্রশ্ন আমি রাজ্য সরকারকে করব”।
এদিনই কেন্দ্রের দুটি প্রকল্পে যোগ না দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি এবং আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের বিষয়ে দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে যুক্তি দেওয়া হয়, একই ধরনের দুটি প্রকল্প চালু রয়েছে রাজ্যে। কৃষকদের জন্য একাধিক প্রকল্পে বহু টাকা খরচ করেছে রাজ্য সরকার।
কিন্তু কৃষকদের ওই প্রকল্প নিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে অল আউট আক্রমণ করেন রাজ্যপাল। তিনি বলেন, প্রকল্প নিয়ে রাজনীতি করছে রাজ্য সরকার। এটি অত্যন্ত খারাপ নিদর্শন। “অন্নদাতার পেটে লাথি মারলে তা সহ্য হবে না। সরকারের একবার ভেবে দেখা উচিত” মন্তব্য ধনকড়ের।
দায়িত্ব নিয়ে আসার পর থেকেই রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সংঘাত লেগেই আছে। কিন্তু এদিনের আক্রমণ একেবারে বেনজির। রাজনৈতিক মহলের মতে, সমস্ত আবরণ খুলে ফেলে সরাসরি বিজেপির পক্ষ নিয়ে রাজ্যের শাসকদল তথা সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণে নেমেছেন রাজ্যপাল। এর আগে তৃণমূল নেতৃত্ব বারবারই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে বিজেপির মুখপাত্রের মতো কথা বলার অভিযোগ তুলেছেন। কিন্তু এদিন রাজ্যপালের মন্তব্য নিয়ে একই মত রাজনৈতিক মহলেরও।

আরও পড়ুন- মাস্ক ও করোনা সচেতনতা কর্মসূচি বিজ্ঞান মঞ্চের

Previous articleমাস্ক ও করোনা সচেতনতা কর্মসূচি বিজ্ঞান মঞ্চের
Next articleরাতের শহরে দুই রূপান্তরকামী ও তাঁদের সঙ্গীদের শ্লীলতাহানির অভিযোগে ধৃত পুলিশ আধিকারিক