কেন এত বিরোধ? কী আছে কৃষি বিলে

বাদল অধিবেশনে পেশ ও পাশ হয়েছে কৃষি বিল। আর তা নিয়ে উত্তাল সংসদ। রবিবার থেকে এই বিলের বিরোধিতা শুরু। বিরোধীদের প্রবল আপত্তির মধ্যেই ধ্বনি ভোটে পাশ হয়ে যায় বিল। আর তারপর থেকেই বিক্ষোভ চূড়ান্ত আকার নেয়। কিন্তু কী আছে বিলে? কেন এক যোগে সেই বিলের বিরোধিতা করছে বিরোধীরা?
কেন্দ্রীয় সরকার তিনটি কৃষি বিল পাশ করিয়েছে। সেগুলি হল ‘কৃষি পণ্য লেনদেন ও বাণিজ্য উন্নয়ন’, ‘কৃষিপণ্যের দাম নিশ্চিত রাখতে কৃষকদের সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন চুক্তি’ এবং ‘অত্যাবশ্যক পণ্য আইন’ সংশোধন বিল। তিনটি বিলই লোকসভায় পাশ হয়ে গিয়েছে। রবিবার রাজ্যসভায় যে দু’টি বিল পাশ হয় সেগুলি হল ‘কৃষিপণ্য লেনদেন ও বাণিজ্য উন্নয়ন’ এবং ‘কৃষিপণ্যের দাম নিশ্চিত রাখতে কৃষকদের সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন চুক্তি’ বিল। মঙ্গলবার পাশ হয় তৃতীয় বিলটি।

প্রথম বিলটি কৃষি বাজারের বিষয়ে
• এতে বলা হয়েছে এমন একটি বাস্তুতন্ত্র তৈরি করা হবে যেখানে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা কৃষিপণ্য বাজার কমিটির আওয়াতায় মান্ডিগুলির বাইরে খামারজাত পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবেন।
•রাজ্যের ভিতরে ও বাইরে কৃষি উৎপাদনে বাণিজ্য বাধামুক্ত হবে।
• বিপণন ও পরিবহন ব্যয় কমবে, যার ফলে কৃষকরা উৎপাদিত পণ্যের বেশি দাম পাবেন।
• কৃষকদের ই-কমার্স এর জন্য একটি সুবিধাজনক পরিকাঠামো সরবরাহ করবে সরকার।

দ্বিতীয় বিলটি চুক্তিভিত্তিক চাষের বিষয়ে
• কৃষকরা ভবিষ্যতে কৃষি পণ্য বিক্রির জন্য বাণিজ্য,
• প্রক্রিয়াকরণ সংস্থা, পাইকারি, রফতানিকারক বা বড় খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে মূল্য সম্পর্কে আগাম চুক্তি করতে পারবেন।
• এই চুক্তির মাধ্যমে পাঁচ হাজারের কম জমির মালিক ও প্রান্তিক ক্ষুদ্র-কৃষকরা লাভবান হবেন বলে আশা।
• এতে বাজারের ওঠানামার ঝুঁকি কৃষকদের থেকে তাঁদের স্পন্সর সংস্থাগুলির ওপর স্থানান্তরিত হবে।
• আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে কৃষকরা আরও ভালো চাষের উপযুক্ত তথ্য পাবেন।
• বিপণন ব্যয় কমলে কৃষকদের আয় আরও বাড়বে।
• মধ্যস্থতাকারীদের এড়িয়ে কৃষকরা সরাসরি বিপণনে জড়িত থেকে সম্পূর্ণ দাম নিজেরাই পাবেন।
• প্রতিকারের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয় বিভিন্ন বিরোধ সহজেই মীমাংসা করা যাবে।

তৃতীয় বিলটি পণ্য সম্পর্কিত
• অত্যাবশ্যক পণ্যের তালিকা থেকে খাদ্যশস্য, ডাল, তৈলবীজ, পেঁয়াজ এবং আলু জাতীয় পণ্য সরিয়ে নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
• যুদ্ধ পরিস্থিতির মতো অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বাদ দিয়ে এই পণ্যগুলিতে মজুতের সীমা আরোপ করা হবে না।
• এই বিল অনুযায়ী বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের ব্যবসায়ী অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ করার আশঙ্কা দূর হবে।
• ফলে বেসরকারি বা বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কৃষিক্ষেত্রে আকৃষ্ট হবে বলে আশা।
• হিমঘরের পরিকাঠামো এবং খাদ্য সরবরাহের শৃঙ্খলাকে আধুনিকীকরণের জন্য বিনিয়োগ আসবে।
• দামে স্থিতিশীলতা এনে কৃষক এবং গ্রাহক উভয়কে সহায়তা দেওয়া হবে
• প্রতিযোগিতামূলক বাজারের পরিবেশ তৈরি হওয়ায় কৃষিপণ্যের অপচয় বন্ধ হবে

সরকারের দাবি, এই বিলগুলির ফলে কৃষকদের রোজগার বাড়বে এবং কৃষিক্ষেত্রের উন্নতি হবে। ২০২২-এর মধ্যেই কৃষকদের উপার্জন দ্বিগুণ হবে বলেও মত কেন্দ্রের।
এর ফলে এমন ব্যবস্থা তৈরি করা যাবে, যেখানে মান্ডির বাইরেই কৃষক ও ব্যবসায়ীরা পণ্য কেনাবেচা করতে পারবেন। পাশাপাশি, পরিবহন খরচ কমানোর প্রস্তাবও করা হয়েছে বিলে। সর্বোপরি এই বিলের উদ্দেশ্য কৃষকদের কৃষি-বাণিজ্য সংস্থা, রফতানিকারী এবং খুচরো পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু বিরোধীদের দাবি, এই বিল পাশ হওয়ার ফলে বাজার থেকে সরকারি নিয়ন্ত্রণ সরে যাবে। সরকার ন্যূনতম সমর্থন মূল্যে ফসল কেনা বন্ধ করে দিলে কৃষকদের পুঁজিপতিদের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হবে।

আরও পড়ুন-একদিনের অনশন শুরু করলেন ‘মর্মাহত’ ডেপুটি চেয়ারম্যান

Previous articleএকদিনের অনশন শুরু করলেন ‘মর্মাহত’ ডেপুটি চেয়ারম্যান
Next articleকৃষি বিল : দিল্লিতে সংসদ ভবন চত্বরে, কলকাতায় মেয়ো রোডে ধরণা চলছে