কোভিড পরিস্থিতিতে সুরক্ষা সামগ্রী রফতানিতে বাংলাদেশের সাফল্য

খায়রুল আলম, ঢাকা

বিশ্ববাজারে কোভিড-১৯ এর সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই) রফতানিতে অগ্রগণ্য হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ । স্থানীয় পোশাক কারখানাগুলো আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছ থেকে পিপিই গাউন, মাস্ক, জুতো কাভার ইত্যাদি তৈরিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বরাত পাচ্ছে। আর একারণেই এই সেক্টরে আশানুরূপ সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ।

বিশ্বব্যাপী কোভিড ভাইরাসের বিস্তারে হঠাৎ করেই পিপিই’র চাহিদা আকাশচুম্বী হয়ে যায়। প্রাথমিক সঙ্কট কাটিয়ে বিশ্বের ৬১টি দেশে রফতানি করা হয় বাংলাদেশের তৈরি পিপিই গাউন। তবে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়েছে জার্মানিতে। গত অর্থবছরে ওই দেশটিতে ৮ কোটি ৬২ লাখ ডলার বা ৭৩৩ কোটি টাকার পিপিই গাউন রফতানি হয়েছে।
তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে ৫ কোটি এবং বেলজিয়ামে রফতানি হয়েছে ৪ কোটি ১১ লাখ ডলারের গাউন। তাছাড়া অন্যান্য চিকিৎসা সুরক্ষাসামগ্রী রফতানি হয়েছে ১০ কোটি ১২ লাখ ডলারের। গত এক বছরে ফেস কাভার, ওভেন ও সার্জিক্যাল মাস্ক রফতানি হয়েছে ৩ কোটি ৯৩ লাখ ডলারের। তার মধ্যে তিন স্তরের সার্জিক্যাল মাস্কই শুধু রফতানি হয়েছে ১ কোটি ৬৭ লক্ষ ডলার বা ১৪২ কোটি টাকার।

সার্জিক্যাল মাস্কের ৬৮ শতাংশ বা ১ কোটি ১৪ লাখ ডলার তুরস্কে রফতানি হয়েছে। তাছাড়া কানাডায় গিয়েছে ২০ লাখ ডলারের সার্জিক্যাল মাস্ক। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বিজিএমইএ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ৫০ কোটি ১০ লাখ ডলার বা ৪২৫৮ কোটি টাকার পিপিই রফতানি হয়েছে। তার মধ্যে পিপিই গাউন রফতানি হয়েছে ৩৫ কোটি ১৫ লক্ষ ডলারের। পিপিই রফতানিতে চলতি অর্থ বছরের জুলাই-অগাস্ট মাসের চিত্র খুবই আশাব্যঞ্জক। অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে পণ্যটি রফতানি হয়েছে ১৩ কোটি সাড়ে ১২ লক্ষ ডলারের, যা আগের অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৬ শতাংশ বেশি। জুলাই-অগাস্ট মাসে পিপিই রফতানি যে গতিতে চলছে তাতে এই বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বছর শেষে এই খাত থেকে গত অর্থ বছরের দ্বিগুণ রফতানি হতে পারে।

সূত্র জানায়, গত মার্চে দেশে করোনা বিস্তারের শুরুতেই পিপিই গাউনের প্রচণ্ড সঙ্কটকালে চট্টগ্রাম ইপিজেডে অবস্থিত একটি প্রতিষ্ঠান তাৎক্ষণিকভাবে সরকারকে প্রায় ২ লাখ পিপিই গাউন সরবরাহ করেছিল। তাছাড়া চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ইপিজেডের একাধিক পিপিই উৎপাদন করছে। আর বড় বড় গ্রুপগুলো মাস্ক রফতানি করছে। পিপিই উৎপাদনকারী স্মার্ট জ্যাকেট নামক একটি প্রতিষ্ঠান আমেরিকান একটি প্রতিষ্ঠান জন্য পাঁচ বছর ধরে পিপিই তৈরি করে আসছে। মূলত নায়াগ্রা জলপ্রপাত দেখতে আসা পর্যটকরা ওই পিপিই ব্যবহার করে। আগামী ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রতি মাসে ৩-৪ লক্ষ পিপিইর অর্ডার বুকিং রয়েছে। তাছাড়া পিপিই গাউন তৈরির ব্যাপারে অনেক ক্রেতাও যোগাযোগ করছে।

বস্ত্র ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, ভ্যাকসিন বাজারে চলে এলে সুরক্ষাসামগ্রীর চাহিদা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মূলত বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের বিস্তার আতঙ্কের কারণেই আপৎকালীন পণ্য হিসেবে পিপিই সামগ্রীর ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। কিন্তু কোনো ক্রেতাই দীর্ঘমেয়াদে অর্ডার দিতে চায় না। ফলে এর ভবিষ্যৎ কী হবে তা বলার সময় এখনো আসেনি।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) তথ্য অনুসারে, বিশ্বব্যাপী চাহিদা মেটাতে বর্তমানে পিপিই রফতানি করছে ৩৩টি দেশি প্রতিষ্ঠান। তার মধ্যে বৃহত্তম চালানটি শীর্ষস্থানীয় টেক্সটাইল এবং পোশাক পণ্য রফতানিকারী বেক্সিমকো গ্রুপ করেছিল ইউএস ব্র্যান্ড হেনসকে। ওই এক চালানে ৬৫ লক্ষ পিস পিপিই গাউন রফতানি হয়।
বিজিএমইএ বলছে, পিপিই’র চাহিদার কারণে অনেক পোশাক কারখানার মালিকরা এখন আশাবাদী হচ্ছে। সংগঠনটির মুখপাত্র শুভ বলেন, কমপক্ষে ৩০টি কারখানা মহামারির শুরু থেকেই পিপিই উৎপাদন করছে। আর এই সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

বাংলাদেশে অনেক কোম্পানি রয়েছে যারা সীমিত আকারে পিপিই তৈরি করতো কিন্তু তারাও পশ্চিমের গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী এখন পুরোদমে সুরক্ষা উপকরণ তৈরির কাজে নেমে পড়েছে। ফকির অ্যাপারেলস’র পরিচালক মশিউর রহমান শোম্মো বলেন, মাত্র তিন দিন আগে আমরা ২ কোটি সার্জিক্যাল মাস্ক তৈরির অর্ডার পেয়েছি। আমাদের কারখানাগুলো পুরো বছরের জন্য কাজ পেয়ে গিয়েছে।
জানা গিয়েছে, ফকির অ্যাপারেলস তাদের পাঁচটি কারখানায় পিপিই তৈরি করছে। আর এ জন্য অতিরিক্ত ৪০০ শ্রমিক ভাড়া করেছে। কোম্পানিটির ধারণা এই বছর ২ কোটি ডলার মূল্যের পিপিই তারা রফতানি করতে পারবে।
বিশ্ব যতদিন এই মহামারির কবলে থাকবে, ততদিন এসব পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার চাহিদাও থাকবে ব্যাপক। বর্তমানে বৈশ্বিক পিপিই পণ্যের বাজার পরিধি কয়েকশ’ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। অতিমারি শুরু হওয়ার ছয় মাসের মধ্যেই তৈরি হয় বিশাল এ চাহিদা।

বাংলাদেশে তৈরি পোশাক উৎপাদক এবং রফতানিকারকদের সংগঠন-বিজিএমইএ সূত্র জানায়, বৈশ্বিক চাহিদা পূরণে বর্তমানে দেশের আরও ৩৩টি কোম্পানি উৎপাদন করছে বা উৎপাদনে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
দেশের বৃহত্তম পোশাক প্রস্তুতকারক বেক্সিমকো গ্রুপ দেশীয় বাজার চাহিদা পূরণের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কানাডায় পিপিই রফতানি করেছে।

আরও পড়ুন- ভারতের হাতে নতুন মিসাইল, ৩ কিলোমিটারের মধ্যে চলমান বস্তু ধ্বংস করতে সক্ষম

মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বই এখন অচল। সবকিছু থেমে যাওয়ার এ সময়ে বিশ্ব অর্থনীতির উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশেও তৈরি পোশাকশিল্পের উপর প্রভাব পড়েছে। পশ্চিমী দেশগুলো থেকে বাতিল হয়েছে গার্মেন্টেসের অসংখ্য ক্রয়াদেশ। তবে কোভিড মহামারির এই অসময়ে পণ্য উৎপাদনে পরিবর্তন এনে এখনও অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে অনেক পোশাক কারখানা। ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মেডিক্যাল গাউন, গ্লাভস জাতীয় সুরক্ষা উপকরণ রফতানি করেছে তারা। ফলে আশার আলো ফুটে উঠেছে রফতানি বাণিজ্যে।

বর্তমানে অনেক পোশাক কারখানাই সবচেয়ে প্রয়োজনীয় পিপিই (পার্সোনাল প্রোটেকশন ইক্যুইপমেন্ট) তৈরি করে এই সঙ্কটময়কালে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন গণমাধ্যমেও বাংলাদেশের পোশাক খাতের নতুন এই আশাবাদের কথা তুলে ধরা হয়েছে।

আরও পড়ুন- নজিরবিহীন! স্বামী-স্ত্রী একইসঙ্গে হলেন মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতি

Previous articleনজিরবিহীন! স্বামী-স্ত্রী একইসঙ্গে হলেন মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতি
Next articleএবার রাফাল-চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুললো CAG রিপোর্ট, কপালে ভাঁজ কেন্দ্রের