আদবানিদের সাফাইকে মান্যতা এবং কিছু প্রশ্ন,কণাদ দাশগুপ্তর কলম

কণাদ দাশগুপ্ত

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনার সঙ্গে
তিলমাত্র যোগ ছিলো না লালকৃষ্ণ আদবানি, মুরলী মনোহর যোশি, উমা ভারতী, কল্যাণ সিং-সহ ৩২ অভিযুক্তের৷ ঘটনার তদন্তে এবং অপরাধ প্রমানে দেশের সেরা গোয়েন্দা সংস্থা CBI ব্যর্থ হয়েছে৷

বুধবার ২৮ বছর আগে শুরু হওয়া বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলার রায়ে এমনই বলেছেন বিশেষ CBI আদালতের বিচারক এস কে যাদব৷ CBI-এর বিরুদ্ধে মারাত্মক এক মন্তব্য করে বিচারক একথাও বলেছেন, ‘এই ঘটনার তদন্ত করে CBI যে ভিডিও ফুটেজ আদালতে পেশ করেছে, তা সন্দেহজনক’৷ ওই ভিডিও ‘এডিট’ করা বলেই আদালতের ধারনা৷

আরও পড়ুন- এবার করোনা আক্রান্ত সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা

ঘটনা ঘটেছিল প্রায় তিন দশক আগে। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। মসজিদ ধ্বংসের চক্রান্তকারী এবং প্রত্যক্ষ মদতদাতা হিসেবে নাম উঠে আসে বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবারের তৎকালীন সামনের সারির নেতা, লালকৃষ্ণ আদবানি, মুরলীমনোহর যোশী, গোবিন্দাচার্য, উমা ভারতী, অশোক সিঙ্ঘল, কল্যাণ সিংহ, সাধ্বী ঋতম্ভরা, বিনয় কাটিয়ার প্রমুখের। আদালতে বারবার অভিযুক্তরা বলেন, “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই কেন্দ্রের তৎকালীন কংগ্রেস সরকার CBI মারফত তাঁদের নাম যুক্ত করেছেন তাঁরা এ ঘটনায় যুক্ত নন”৷

দেশের প্রাক্তণ উপ প্রধানমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আদবানি-সহ বিজেপি ও সমমনোভাবাপন্ন নেতাদের মুখে এই সাফাই-ই আদালত গ্রহণ করেছেন এবং এ ঘটনায় আরও একবার সামনে এসেছে, কেন্দ্রীয় সরকার ‘ইচ্ছা’ করলে কোনও নিরপরাধকেও কোনও মামলায় ফাঁসাতে পারে CBI বা অন্য কোনও কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে ব্যবহার করে৷ বিষয়টি বিতর্কিত অবশ্যই৷ তবে আদবানির স্তরের হেভিওয়েট যখন এই একই কথা বলেন, তখন নিশ্চিতভাবেই CBI-এর ভূমিকা প্রশ্নের মধ্যে চলে আসে৷

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা লুকিয়ে হয়নি৷ কোনও গোপন নাশকতার কাজও এটা ছিলো না৷ বিজেপি এবং সহযোগী একাধিক সংগঠন প্রকাশ্যেই বাবরি মসজিদ চত্বরে ‘করসেবা’-র ডাক দিয়েছিলো৷
১৯৯২-এর ৬ ডিসেম্বর বিশাল সংখ্যক করসেবক সেদিন ওখানে জড়ো হলেন৷ পাশেই মঞ্চ করা হয়, সেই মঞ্চ থেকে মুহুর্মুহু স্লোগান ওঠে, “‘এক ধাক্কা আউর দো, বাবরি মসজিদ তোড় দো’৷ তখন ওই মঞ্চে হাজির তখন আদবানি, যোশী, কাটিয়ার, বিজয়ারাজে সিন্ধিয়ারা৷ সব ঘটনাই সবার জানা৷ এর পরই আঘাত হানা হলো মসজিদের চূড়ায়৷ ধীরে ধীরে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো বাবরির ধাঁচা৷ সবাই সব জানেন৷ কিন্তু CBI ওই ঘটনা প্রমাণ করতেও তো নিদারুণ ব্যর্থই হলো৷

বাবরি ধ্বংসের মতো বৃহত্তম এবং সংবেদনশীল মামলায় CBI কার্যত কিছুই প্রমান করতে পারলো না৷ অথচ মাঝখান থেকে পার হয়ে গেলো ২৮টা বছর৷ যদিও এটাও ঠিক, আদালত যদি এদিন আদবানিদের দোষী সাব্যস্ত করতো, তাতেও কোনও কাজের কাজ হতো না৷ আদালত থেকেই হয়তো জামিন পেয়ে যেতেন দোষীরা৷ এই রায়ের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে যেতেন তারা, যেতেন হাইকোর্টে, সুপ্রিম কোর্টে৷ আরও ২৮ বা ৪৮ বছর কেটে যেত চূড়ান্ত রায় আসতে৷

কিন্তু তেমন হলেও অন্তত দেশের প্রধান এবং দক্ষতম গোয়েন্দা সংস্থা CBI-এর দক্ষতা নিয়ে এ ধরনের প্রশ্ন উঠতো না৷ আদবানিরা মামলার শুনানিতে বারবার যেভাবে এই মামলায় তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার CBI-কে ব্যবহার করেছে বলে দাবি করেছেন, আদালত সেই বক্তব্যকেও মান্যতা দিতে পারতো না৷ গ্রহণ করতো কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থারই রিপোর্ট এবং চার্জশিট ৷

আরও পড়ুন- “দলিতরা আমাদের সম্পদ, তাঁদের উপর নির্যাতন অত্যন্ত নিন্দনীয়”-হাথরস নিয়ে মন্তব্য ডেরেকের

কিন্তু তা হয়নি৷ বুধবার বিশেষ CBI আদালতের বিচারক এস কে যাদব, তাঁর অবসরের দিন, কর্মজীবনের শেষ মামলার রায়ে বাবরি ধ্বংস মামলায় অভিযুক্ত লালকৃষ্ণ আদবানি-সহ ৩২ অভিযুক্তের CBI-এর ভূমিকা নিয়ে তোলা প্রশ্ন যেভাবে মেনে নিয়েছেন, তার অর্থ দাঁড়ায়, কেন্দ্রে যখন যে দলই সরকারে থাকুক, সেই সরকার ইচ্ছা করলে রাজনৈতিক স্বার্থে দেশের প্রধানতম গোয়েন্দা সংস্থা CBI-কে ব্যবহার করলেও করতে পারে৷ এমন কাজ করা যায়৷ এই ব্যাখ্যা সম্ভবত CBI-এর গৌরব বৃদ্ধি করলো না৷

আদালতের রায় আদবানিদের বেকসুর খালাস করে এই ‘সত্যি’-কেই কি সামনে নিয়ে এলো ?

Previous articleআইপিএস পুরুষোত্তম শর্মা তাঁর ‘‌বাবার মতো’‌, দাবি মহিলা সাংবাদিকের
Next articleহাথরসের গণধর্ষণ-খুনের ঘটনা নিয়ে নীরবতা ভাঙুন, মোদিকে তীব্র কটাক্ষ অভিষেকের