শর্তসাপেক্ষে মুক্তি : অতিমারিতে ‘ফিরোজা’য় দিন কাটছে খালেদার

খায়রুল আলম (ঢাকা) : সরকারের বিশেষ বিবেচনায় কারামুক্তি পেয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। দুর্নীতি মামলায় কারাভোগ করতে থাকা খালেদা জিয়া শর্তসাপেক্ষে মুক্তিলাভের পর এখন দিন পার করছেন রাজধানীর গুলশানের ভাড়া বাড়ি ‘ফিরোজা’য়।

দীর্ঘ দু’বছরেরও অধিক সময় কারাগারে বন্দি থাকার পর গত ২৫ মার্চ গুলশানের বাসভবন ফিরোজা ফিরলেন। দীর্ঘ ৭৭৫ দিন পর। কেমন আছেন তিনি? দলের নেতারা বলছেন, তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়, উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়া দরকার। পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ স্পষ্ট করে কিছু না বললেও সরকারের বিভিন্ন মহলে স্বজনরা দেন-দরবার করছেন বলে জানা গেছে।

অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজার রায়ের পর খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি হন। চলতি বছরের ২৫ মার্চ তিনি সরকারের নির্বাহী আদেশে ছয় মাসের জন্য মুক্তি পান। করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে মানবিক দিক বিবেচনায় সরকার সাজা স্থগিত করে তাকে মুক্তি দেয়।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর ওই ছয় মাস শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তার আগে ১৫ সেপ্টেম্বর সরকার খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়িয়ে দেয়। বাড়ি থেকে দেশেই চিকিৎসা করাবেন এবং দেশের বাইরে যেতে পারবেন না— এমন শর্তে মুক্তির পর গুলশানের ভাড়া বাড়ি ‘ফিরোজায়’ রয়েছেন তিনি।

৭৫ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে চোখ ও দাঁতের সমস্যা, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে ভুগছেন। মুক্তি পেলেও করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এখনও তার উন্নত চিকিৎসা শুরু হয়নি। তার জন্য দলীয় চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি টিম রয়েছে।

ওই টিমের দু-একজন নিয়মিত বিএনপিপ্রধানের শারীরিক অবস্থার ফলোআপ করছেন। এছাড়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনসহ দলের সিনিয়র চিকিৎসকদের একটি দল খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর রাখছেন। পুত্রবধূ ডা. জোবায়দা রহমানও তার চিকিৎসার নিয়মিত তদারকি করছেন।

পারিবারিক ও দলীয় বিভিন্ন সূত্র বলছে, খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রথম মেয়াদে যেন কোনওভাবে সরকারের বেঁধে দেয়া শর্ত লঙ্ঘিত না হয়। সে বিষয়ে খুবই সচেতন ছিল তার দল ও পরিবার। ফলে সরকারও তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনায় নেয় এবং শেষ পর্যন্ত আরও ছয় মাস বাড়িয়ে দেয়।

প্রথম দফায় খালেদা জিয়াকে যে শর্ত বেঁধে দেয়া হয়েছিল, সেটা দ্বিতীয় দফায়ও বলবৎ রাখা হয়। যদিও তাকে বিদেশে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দেয়ার সুযোগ দিতে পরিবারের পক্ষ থেকে নানাভাবে সরকারকে আশ্বস্ত করার প্রচেষ্টা চলছে।

সূত্রের খবর, সরকারের কৃপায় কারামুক্তির কারণে খালেদা জিয়ার ‘আপসহীন’ ভাবমূর্তি ইতিমধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। নেতাকর্মীদের একটি অংশ এখনও মানতে পারছেন না যে, আন্দোলন বা আদালতের বদলে দলীয় চেয়ারপারসন মুক্তি পেয়েছেন সরকারেরই কৃপায়। অবশ্য এ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না তার পরিবার। স্বজনরা চাইছেন খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা। সেক্ষেত্রে দল বা দলের সমর্থকরা কী চান, সেটি এখন আর বিবেচ্য নয়।

বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপ করলে একটি অংশ দাবি করে, খালেদা জিয়া আপাতত লন্ডন যাচ্ছেন না। শর্তসাপেক্ষে মুক্তি নিয়ে তিনি বিদেশ যেতে চান না। উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েই বিএনপি প্রধান বিদেশ যেতে চান।

কিন্তু স্বজনরা মনে করেন, এটা সম্ভব নয়। কারণ সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া উচ্চ আদালত থেকেও জামিন পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। ইতোমধ্যে বারবার এটি প্রমাণিত হয়েছে।

পরিবারের সদস্যরা মনে করেন, খালেদা জিয়ার মৌলিক চিকিৎসা এদেশে সম্ভব নয়। সেজন্য তার ভাই শামীম ইস্কান্দর ও বোন সেলিনা ইসলাম সরকারের সঙ্গে খালেদাকে বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে যোগাযোগ রাখছেন। এক্ষেত্রে দলকে একেবারেই পাশ কাটিয়ে চলা স্বজনরা আশাবাদী, সরকার খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ দেবে।

পরিবারের একটি সূত্র বলছে, উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়া দরকার হলেও এ ব্যাপারে সরকারের কাছে আবেদন করার চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

সর্বশেষ গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ‘ফিরোজা’য় গিয়ে দেখা করেন তার আইনজীবী ও দলের যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।

সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন জানান, চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়া যুক্তরাজ্য যেতে চাইলে সে দেশের সরকারের তরফ থেকে কোনো বাধা নেই। তার এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে স্বজনদের দেন-দরবারের মধ্যে বিদেশি পক্ষের সক্রিয়তাও স্পষ্ট হয়।

ডিকসনের ওই বক্তব্যের জন্য তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে পরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক অনুষ্ঠানে বলেন, ব্রিটেন এখনও একটি গণতান্ত্রিক দেশ। তাদের মধ্যে সভ্যতা-ভদ্রতা অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে যথেষ্ট বেশি। তারা একটা গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে, একজন গণতান্ত্রিক নেতার প্রতি যে দায়িত্ব সেই কথাটিই বলেছেন। এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই।

খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, “ম্যাডাম যেমন ছিলেন, তেমনই আছেন। তার শারীরিক অবস্থা সবাই জানেন। খুব একটা উন্নতি হয়নি। খেতে পারছেন না।” বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে তিনি বলেন, “এ বিষয়টা খালেদা জিয়ার চাওয়া এবং সরকারের দেওয়ার ওপর নির্ভর করছে।”

আরও পড়ুন-ধর্ষণ একটা পাশবিকতা, আর ধর্ষকরা পশু: শেখ হাসিনা

Previous articleচিকিৎসায় সামান্য উন্নতি, ১৪দিনের মাথায় আজ ফের করোনা টেস্ট সৌমিত্রর
Next articleবান্ধবী সহ দুবাইয়ে দেব ও দাদা, চলল খাওয়া-দাওয়া ও জমাট আড্ডা